বন্ধ পাথর আমদানি, স্থবির বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর
পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু বৃদ্ধির কারণে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে সব ধরণের পাথর আমদানি। ফলে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বন্দর এলাকায়। চরম দুর্ভোগে রয়েছেন সিএন্ডএফ এজেন্ট ও ব্যবসায়ীরা। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে যেখানে প্রতি টন ভারতীয় বোল্ডার পাথরের আমদানি মূল্য ১২ ডলার অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ধরে শুল্ক আদায় করা হতো, হঠাৎ করেই তা বাড়িয়ে ১৩ ডলার করা হয়। একইভাবে ভুটান থেকে আনা পাথরে প্রতি টনে ২১ ডলারের পরিবর্তে ২৪ ডলার মূ্ল্য নির্ধারন করা হয়। এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ ব্যবসায়ীরা। কারণ, ধার্যকৃত বর্ধিত মূল্যে পাথর আমদানির ফলে অতিরিক্ত শুল্ক গুনতে হবে ব্যাসায়ীদের।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর সূত্র জানায়, দেশের একমাত্র চার দেশিয় শুল্ক স্টেশন বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এই স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত এবং ভুটানের আমদানিযোগ্য পণ্য আনা নেওয়া করা হয়। তবে অন্য পণ্যের আমদানি রপ্তানি সীমিত আকারে হলেও ভারত ও ভুটান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ ট্রাক পর্যন্ত পাথর আমদানি হয়ে থাকে। ফলে এই বন্দর মূলত পাথর নির্ভর বন্দর হিসেবেই পরিচিতি পায়। এই বন্দর দিয়ে দুই দেশ থেকে আমদানিকৃত পাথরের ধার্যকৃত মূল্য ছিল প্রতি টনে ভারতের বোল্ডার পাথরে ১২ ডলার এবং ভুটানের পাথরে ২১ ডলার। কিন্তু গত ৩১ জুলাই এক চিঠিতে স্থলবন্দর শুল্ক বিভাগ ভারত থেকে আমদানিকৃত প্রতি টন পাথরের শুল্ক ১৩ ডলার এবং ভুটান থেকে আনা পাথরে প্রতি টনে ২৪ ডলার মূল্য ধার্য্য করার কথা জানানো হয়।
আমদানি সংশ্লিষ্টরা জানান, অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু হচ্ছে কাস্টমস নির্ধারিত আমদানি করা পণ্যের ক্রয়মূল্য, যার ভিত্তিতে শুল্ক আদায় করা হয়। গত ১ আগস্ট থেকে পাথরের অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু বাড়িয়ে দেয় স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশন। এর পরেই আমদানিকারকরা পাথর আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেন। কারণ, অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু বেড়ে যাওয়ায় ভারত যেকোনো সময় পাথরের রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে দিতে পারে। কাজেই অবিলম্বে বর্ধিত অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু পরিবর্তন করা উচিত।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লোড আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইদ্রিস আলী বলেন, আমাদের এই বন্দরটি পাথর নির্ভর স্থলবন্দর। পাথর আসলে আমাদের কাজ আছে, না আসলে আমরা বসে থাকি। কয়েকদিন আগে ভারতে আন্দোলনের ফলে পাথর আমদানি বন্ধ ছিল। কয়েকদিন পাথর আসার পর আবারও এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে পাথর আমদানি। আমরা বন্দরের কুলি শ্রমিকরা কয়েকদিন ধরেই বসে আছি।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের পাথর ভাংগা শ্রমিক হাবুল ইসলাম বলেন, আমরা আমদানিকৃত বোল্ডার পাথর ভাংগার কাজ করেই সংসার চালাই। কিন্ত গত এক সপ্তাহ ধরে বসে আছি। এই স্থলবন্দরে সাতদিন ধরে কোন পাথরের গাড়ি আসেনি। এভাবে চললে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।
স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট নাসিমুল হাসান নাসিম বলেন, শুল্ক বিভাগ হুট করে ভারতের পাথরে এক ডলার এবং নেপালের পাথরে তিন ডলার অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু বৃদ্ধি করে। এতে আমাদের অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হবে। এজন্য আমরা আপাতত পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছি।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইমরুল হোসেন পাটোয়ারি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। এটা কেন বন্ধ রয়েছে আমরা জানি না। তবে এ নিয়ে যদি কোন প্রতিবন্ধকতা থাকে আশা করি দ্রুত সেই সমস্যার সমাধান হবে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেড-এর ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে বেশ কয়েকদিন ধরে বিশেষ করে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে স্থলবন্দরে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। গত মাসে ভারত ও ভুটানের মধ্যে স্লট বুকিংয়ের নামে অর্থ আদায়ের বিরুদ্ধে সেখানকার পরিবহন মালিকদের আন্দোলনে পাথর আমদানি বন্ধ ছিল। এরপর প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৪০ ট্রাক করে পাথর আমদানি হচ্ছিল। কিন্তু ১ আগস্ট থেকে শুল্ক বিভাগের পক্ষ থেকে পাথরের অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু কিছুটা বৃদ্ধি করা হয়। এতে ব্যবসায়ীদের রাজস্ব বেশি দিতে হবে এমন অজুহাতে তারা পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন। এ নিয়ে আলোচনা চলছে, আশা করি শিগগির সমস্যা কেটে যাবে।
নাঈম/ মাসুদ