নীলফামারীতে ছেলে ‘হত্যার’ বিচার চাইলেন মা-বাবা
নীলফামারী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
আব্দুর রহিম আকাশ
‘ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। অথচ সেই হত্যাকাণ্ড ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু কিংবা আত্মহত্যা বলে সাজাতে মরিয়া হত্যাকারীরা। পুলিশ প্রশাসনও সেই ঘাতকদের পক্ষেই। হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নাম উল্লেখ করে মামলা করতে গেলেও সেই মামলা নেয়নি পুলিশ।’
এদিকে ছেলে হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে নিজেদের জীবন এখন হুমকির মুখে। প্রাণে বাঁচতে বাবা ও মা এখন বাড়ি ছাড়া। এমন অভিযোগ নীলফামারীর সংগলশী ইউয়িনের কাজিরহাট বানিয়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা বাবা সেকেন্দার আলী ও মা রেখা বেগমের।
নিহত ছেলের নাম আব্দুর রহিম আকাশ (১৬)। সে স্থানীয় সোনারায় সংগলশী বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। বাবা ও মা দাবি করেন, গত ২৯ মার্চ রাতে আকাশকে তার সৎভাই ওমর ফারুক হত্যা করেছে।
বাবা সেকেন্দার আলী রাইজিংবিডি-কে বলেন, ‘আকাশ আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে। গত ২৯ মার্চ রাতে মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে আমার প্রথম স্ত্রীর ছেলে ওমর ফারুক ও এলাকার মোকছেদের ছেলে সাজু মেলা দেখার কথা বলে নিয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টা পর ওমর ফারুক ফিরে আসায় তাকে জিজ্ঞেস করলে জানায়, আকাশ কোথায় জানে না। হয়ত কোনো বন্ধুর বাড়ি গেছে। দুই দিন পরে জানতে পারি, ওই এলাকায় একজন ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। পরে লোকজনের কাছ থেকে নিহতের বিবরণ ও ছবি দেখে অনেকটা নিশ্চিত হই, সে আমার ছেলে আকাশ। থানায় গিয়ে জানতে পারি, পুলিশ তাকে হাতিখানা কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে।’
মা রেখা বেগম রাইজিংবিডি-কে বলেন, ‘আমি ন্যায্য বিচার চাই। আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি হয় না। আমার ছেলে কোনভাবে আত্মহত্যা করেনি। আমার ছেলেকে হত্যা করে রেললাইনে রাখা হয়েছে। আমি অনেক কষ্ট করছি বাচ্চাগুলোর জন্য। সবারে অত্যাচার সহ্য করেছি। শুধু বাচ্চা দুটিকে মানুষ করার চেষ্টায় ছিলাম।’
রেখা বেগম আরও বলেন, ‘আমার সতীনের নেশাগ্রস্ত ছেলে ওমর ফারুক আমাদের ওপর নানারকম অত্যাচার করত। আমার দুই ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দিত। ঘটনার দিন ফারুক আমার ছেলেকে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যায়। কিন্তু এখন বলছে, আকাশ আত্মহত্যা করেছে। আকাশ যদি আত্মহত্যাই করবে, তাহলে লাশ যেখানে পাওয়া যায়, সেখান থেকে অনেক দূরে কলাবাগানে তার জুতা পাওয়া গেল কীভাবে। আমাদের সন্দেহ ওমরই আকাশকে হত্যা করেছে।’
সেকেন্দার আলী বলেন, ‘আমার বড় ছেলে ইউপি সদস্য নূর ইসলাম ও ওমর ফারুক পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কবরস্থান থেকে মরদেহ উত্তোলন করে আমাদের না দেখিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করে। আমার ছেলে ওমর ফারুকের কথাবার্তা ও আচরণে মনে হয়, আকাশকে হত্যা করে রেললাইনের ওপর রেখে আসে। ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত ওমর ফারুক আত্মগোপন করে আছে।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সেকেন্দার আলীর প্রথম স্ত্রীর ছেলে ইউপি সদস্য নুর ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। আকাশ বাবা মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে আত্মহত্যা করতে পারে। আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে আমার সৎ মা।’
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার পুলিশের উপ-সহকারী পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, স্বজনের খোঁজ না পাওয়ায় ৪৮ ঘণ্টা পর মরদেহ দাফন করা হয়। পরবর্তীতে খোঁজ পাওয়ায় স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ব্যাপারে হত্যা মামলা হয়েছে। যার তদন্ত চলমান।
সৈয়দপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকিউল আজম বলেন, পুলিশ সুপারসহ ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে এসেছে। দু-এক দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
সিথুন/বকুল