ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

অসুস্থ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে হাত-পা বেঁধে বেদম মার, শিক্ষক পলাতক

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৪, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৩:৫১, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
অসুস্থ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে হাত-পা বেঁধে বেদম মার, শিক্ষক পলাতক

জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তিনদিন মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকায় হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র আসাদুল ইসলামকে (৮) হাত-পা বেঁধে বেধড়ক মারপিটের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক মাওলানা ইকবাল হোসাইনের বিরুদ্ধে। আহত অবস্থায় আসাদুলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার গৌরীগ্রাম ইউনিয়নের হাড়িয়াকাহন বাইতুল উলুম নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। আসাদুল ওই মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী এবং হারিয়াকাহন গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে।

বুধবার (৬ সেপ্টম্বর) দুপুরে সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় আসাদুল চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখানে উপস্থিত আসাদুলের স্বজনরা জানান, জন্ডিস হওয়ার কারণে তিনদিন মাদ্রাসায় যেতে পারেনি আসাদুল। ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে তার দুই সহপাঠী সজিব ও সিয়ামকে দিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে পাঠান মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ইকবাল হোসাইন। আসাদুল গেলে ইকবাল হোসাইন তার কাছে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চান। আসাদুল অসুস্থতার কথা জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে টেনে মাদ্রাসার ভেতরে নিয়ে যান এবং রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে, মাথা টেবিলের নিচে দিয়ে কোমড়ের নিচে বেত এবং স্টিলের স্কেল দিয়ে বেধড়ক মার দেন। 

এক পর্যায়ে আসাদুল নিস্তেজ হয়ে গেলে তাকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখেন ওই শিক্ষক। পরে আসাদুলের মা খবর পেয়ে মাদ্রাসায় গিয়ে ইকবাল হোসাইনের কাছে ছেলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আসাদুল বাড়ি চলে গেছে বলে জানান। কিন্তু পরে মাদ্রাসার ভেতরে খোঁজাখুঁজি করার এক পর্যায়ে মা আসাদুলের গোঙানির শব্দ শুনতে পান। সেখান থেকে আসাদুলকে উদ্ধার করে রাত একটার দিকে তাকে সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পরিবার।  

আসাদুলের মা শোভা খাতুন বলেন, আমার ছেলের জন্ডিস ধরা পড়ায় তাকে মাদ্রাসায় যেতে দেইনি। আমি যদি ওই সময় দ্রুত না যেতাম তাহল হয়তো আমার ছেলে মারা যেত। কোনো মানুষ হয়ে এভাবে কোনো শিশু সন্তানকে মারতে পারে? ওই হুজুরের মনে হয় কোনো সন্তান নাই! থাকলে এভাবে অমানবিক নির্যাতন সে করতে পারত না। 

আসাদুল এর বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগ দিতে নিষেধ করেছে। তাই আর অভিযোগ দেয়া হয়নি।

এদিকে ঘটনার পর অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক ইকবাল হোসেন পলাতক থাকায় এবং তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মাদ্রাসার পক্ষ থেকে ওই শিক্ষার্থীর যাবতীয় চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া হয়েছে। পরে ঘটনার মিমাংসাও করে দেয়া হয়েছে।

সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শিশুটিকে যেদিন নিয়ে আসে সেদিন তার অবস্থা খুব নাজুক ছিল। সে খুব ভয় পেয়েছে। পরবর্তীতে যেন জটিল কোনো সমস্য না হয় সেজন্য তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে মারপিটের জখম শুকাতে সময় লাগবে।


 

শাহীন/তারা 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়