ফুটওভার ব্রিজ রেখে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার!
রুবেল মজুমদার, কুমিল্লা || রাইজিংবিডি.কম
দেশের ‘লাইফ লাইন’ খ্যাত ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে এক শিক্ষক তার স্কুল পড়ুয়া সন্তানকে নিয়ে ফুটওভারের নিচ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। তার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী একইভাবে পার হলেন।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে মহাসড়কের কুমিল্লার ক্যান্টনমেন্ট অংশের দৃশ্য এটি। কেন এভাবে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন— জানতে চাইলে শামীম আহমেদ নামে এই কলেজ শিক্ষক বলেন, ‘ভাই এখান দিয়ে তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়-আসা যায়। ব্রিজে উঠতে বেশ সময় লাগে। ওঠা-নামা বেশ ঝামেলার। কিছু দূর ঘুরে আসতে হয়। ঝুঁকির চিন্তা করে কী লাভ? অনেক দিন ধরে তো এভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আল্লাহ মরণ কপালে রাখলে কেউ ঠেকাতে পাররে না ভাই।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে সরেজমিন প্রায় ১০টি ফুটওভার ব্রিজে গিয়ে দেখা যায়, শুধু এই কলেজ শিক্ষক নয়, প্রতিদিন শত শত মানুষ এ রকম ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন ব্যস্ততম মহাসড়ক। ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও এর ওপর দিয়ে মানুষের যাতায়াতে বেশ অনীহা। সড়ক বিভাজনটি পার হয়েই ফাঁকা পেলে দৌঁড়ে সড়কের ওপারে চলে যাচ্ছেন অনেকে।
রাস্তা পারাপারে এই বাড়তি সময় ব্যয় করাটাই হয়ত অনীহার কারণ পথচারীদের। ফুটওভার ব্রিজ পার হয়ে রাস্তার ওপারে যাওয়ার চেয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে সবাই। অথচ একটু হেঁটে ওভার ব্রিজ হয়ে ঝুঁকি ছাড়াই রাস্তা পার হওয়া যায়।
চৌদ্দগ্রাম থেকে জেলার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিতে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব রহমত মিয়া বলেন, ‘বাস ড্রাইভাররা ফুটওভার ব্রিজ থেকে আরও সামনে এসে নামিয়ে দিয়েছে। এখন যদি আবার ঘুরে ব্রিজের কাছে যাই, তাহলে সময়ও লাগবে। তাই সবার সঙ্গে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছি। শর্টকাটে নিচ দিয়ে পার হলে কষ্ট এবং সময় কম লাগে।’
ক্যান্টনমেন্ট এলাকা ভিক্টোরিয়া কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী জাহিদ হাসানের কাছে ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গাড়ি যখন চলাচল করে তখন তো পার হই না। গাড়ি না থাকলে পার হই। ছোটবেলা থেকে পার হতে হতে অভ্যাস হয়ে গেছে।’
এদিকে রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে কুমিল্লার প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও দুর্ঘটার শিকার হচ্ছে পথচারীরা। কেউ হচ্ছে পঙ্গু, আবারও কেউ হারাচ্ছে হাত-পা। কেউ আবারও মারা যায়। সচেতনতার অভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিনই রাস্তা পারাপার হচ্ছে পথচারীরা। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে জনসচেতনতা উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন পথচারীরা।
কুমিল্লায় সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাস স্ট্যান্ড এলাকায় মানুষের জীবনের ঝুঁকি কমানোর জন্য রোড সেফটির আওতায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ বেশ কিছু জায়গা ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ( নিসআ) সভাপতি মো সোহবার ভূইয়া বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় রাস্তা পারাপার ও ওভার ব্রিজ ব্যবহারের জন্য জনসচেতনতামূলক প্রচারণা করছি। আগের তুলনা মানুষ এখন ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছেন। তবে এক্ষেত্রে বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে।’
কুমিল্লা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, ‘দুর্ঘটনার এড়াতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুঘর্টনাপ্রবন এলাকাতে আমরা ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করছি। এ ছাড়া পথচারীদের জনসচেতনতা বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান ও প্রচার প্রচারণা আরও বাড়াতে হবে। মানুষের জীবনের ঝুঁকির ব্যাপারটা যদি বোঝাতে সক্ষম হই, তাহলে হয়ত এক সময় পথচারীরা নিজেরাই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার শুরু করবেন।’
/বকুল/