ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১০ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২৫ ১৪৩১

পাবনা-ঢাকা ট্রেন চালু না হওয়ার বিষয়ে যা বললেন রাষ্ট্রপতি

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১১:৪৪, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
পাবনা-ঢাকা ট্রেন চালু না হওয়ার বিষয়ে যা বললেন রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১৬ মে পাবনা সফরে এসে এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে জনসভায় সেপ্টেম্বরে পাবনা-ঢাকা সরাসরি ট্রেন চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে পাবনা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে রাষ্ট্রপতি সেই ঘোষণার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, সরকার তো ক্ষমতায় এসে অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়, পাঁচ বছরের মধ্যে কি সেই সব প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারে? কিছু পারে, কিছু পারে না। তাই আমি যে সেপ্টেম্বরে পাবনা থেকে ঢাকা ট্রেন চলাচল উদ্বোধন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলাম, সেটা যে সেপ্টেম্বরেই হবে এটা ভাবার সুযোগ নেই। সবকিছু নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে হয় না। কোনো সময় হয়ে যায়, কোনো সময় হয় না।

রাষ্ট্রপতি বলেন, সেদিন প্রথমবার পাবনায় এসে তাড়াহুড়ো করে বলেছিলাম সেপ্টেম্বরেই পাবনা থেকে ঢাকা ট্রেন চলবে। কিন্তু ট্রেন চালু হলো না কেন তার পেছনে প্রেক্ষাপট রয়েছে। এখানেও অনেকেই প্রশ্ন করছে, সেপ্টেম্বর মাস তো আইসে গেল, কামতো কিছু দেহি না। অনেকেই আমাকে ফোন করে জানিয়েছে। কিন্তু আমি তো এদিকে লেগে আছি। ট্রেন চালুর বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মত দিয়েছেন যে, পাবনা থেকে ঢাকা ট্রেন চললে সরকারের বা রেল বিভাগের কী লাভ আছে এটা একটু যাচাই করা দরকার। এটা সরকারপ্রধান যাচাই করতে বলতেই পারেন। তিনি সন্তুষ্ট হতে চান। তিনি রেল কর্তৃপক্ষকে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করতে বলেছেন। রেল কর্তৃপক্ষও সেগুলো নিয়ে কাজ করছে। তাই আপাতত ট্রেন চালু না হলেও নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। এখন এই পর্যায়ে আছে। কেউ এটা নিয়ে সমালোচনা করতেও পারে, নাও করতে পারে। আমি যতটুকু করার ততটুকু করছি।

পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, পাবনায় মেডিকেল কলেজ আছে, হাসপাতাল নেই। সকলেই বিস্মিত হয়। কিন্তু আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আপনারা যাদের জনপ্রতিনিধি বানিয়েছেন তারা এ বিষয় নিয়ে সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট জায়গায় গিয়ে কখনো কথা বলেনি, এমনকি উত্থাপনই করেনি। বিষয়টি কারও নলেজেই নেই। ২০০৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত এটা নিয়ে কোনো কথা হয়নি। বিষয়টা এমন দাঁড়িয়েছে যে এটা ডেট কেস, এটা হওয়ার মতো নয়।

তিনি বলেন, পরে পরিকল্পনামন্ত্রীকে বললাম এই প্রকল্পটা এমন এক জায়গায় নিয়ে আসেন যাতে বাস্তবায়ন করা যায়। তারপর অত্যন্ত দ্রুত এটা হতে থাকল। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে স্মরণ করিয়ে দিলাম। তারপর সবার আন্তরিকতায় সেটি একনেকে অনুমোদন হয়েছে। এখন পাবনায় এসেছি সেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্বোধন করতে। তারপরও যারা এতদিন বিষয়টি উত্থাপনই করেনি, তাদের কেউ কেউ বলছে ‘হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর নাকি কি যিনি স্থাপন হবি, তে হোনে যায়ে কি হবি, এমনি হইতো, অমনি হইতো।’ মানে লোকজন যেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে না আসে এরকম একটি নেগেটিভ পাবলিসিটি হয়েছে। যারা ব্যর্থ তারা তো এটা করবেই।

ইছামতি নদীর সৌন্দর্যবর্ধন এবং খনন কাজ অনেকদূর এগিয়ে গেছে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, এসব কাজ করে আমার তো পাঁচ পয়সা লাভ নেই। আমি করবো পাবনার মানুষের জন্য। যেখানে জন্মগ্রহণ করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আমার দায়বদ্ধতা থেকে এগুলো করি। করার দায়িত্ব মনে করি। যারা আপনাদের দ্বারা নির্বাচিত তারা কী করলেন, না করলেন এটা আমার দেখার দরকার নেই। পাবনার মানুষ হিসেবে একটা দায়িত্ববোধ থেকে আমি পাবনার উন্নয়নে কাজ করে যাব।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা আমাকে পছন্দ করেন, ভালোবাসেন আগাগোড়াই। আমি এজন্য কৃতজ্ঞ। আপনারা তো জানেন, পাবনা থেকে এখন ঢাকায় প্রায় স্থায়ী হয়ে গেছি। কিন্তু পাবনার সঙ্গে আমার যোগাযোগ থাকত। আমি তো আসতাম সব সময়, নিজের বাসভবনে আসতাম। সকলের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হতো। প্রেসক্লাবে তো আমি অন্তত একবার হলেও যেতাম এবং সকলের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতাম। খুবই ভালো লাগত। এবার তাড়াহুড়োর মধ্যে পাবনায় এসেছি, তাই আর প্রেসক্লাবে যাওয়া হলো না।

মতবিনিময় সভায় পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি, পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ, পাবনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি আব্দুল মতীন খান, প্রবীণ সাংবাদিক হাবিবুর রহমান স্বপনসহ জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, তিন দিনের সফরে বুধবার বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে হেলিকপ্টারযোগে পাবনায় আসেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় পাবনা মেডিকেল কলেজের পাঁচশ শয্যা হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং বিকেল ৪টায় সাঁথিয়া উপজেলার ইছামতি নদীতে নৌকাবাইচ দেখবেন এবং পুরস্কার বিতরণ করবেন। শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে বঙ্গভবনের উদ্দেশ্যে পাবনা ত্যাগ করবেন তিনি।

শাহীন/কেআই


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়