মহাসড়কের পাশে বর্জ্য: মরছে গাছ, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ
সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
ঢাকার ধামরাইয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে পৌরসভার গৃহস্থালির বর্জ্য। এর বিষক্রিয়ায় সড়কের পাশের বেশ কয়েকটি গাছ মরেছে। এছাড়া পুরো এলাকায় দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন সড়কে চলাচলকারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, দুপুর ১২টার দিকে বাংলাদেশ বেতারের মহাশক্তি প্রেরণ কেন্দ্র ধামরাই সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকাগামী লেনের পাশে ধামরাই পৌরসভার একটি ট্রাকে করে আনা ময়লা ফেলা হচ্ছে। পৌরসভার তিনজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ট্রাক থেকে ময়লা নামানোর কাজ করছেন। বেলা ১ টার দিকে পৌরসভার অপর একটি ট্রাককে একই স্থানে ময়লা ফেলতে দেখা যায়।
পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা জানান, সকাল থেকে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে ময়লা সংগ্রহের পর পৌরসভার ট্রাকে করে তা দুই থেকে তিন দফায় মহাসড়কের এ জায়গায় ফেলা হয়।
ময়লা আনার কাজে ব্যবহৃত ট্রাকের চালক মো. মাসুম বলেন, প্রতিদিনই এখানে ময়লা ফেলা হয়। ময়লার পরিমান অনুসারে দিনে দুইবার কখনো তিনবার ফেলতে হয়।
সড়কের পাশে ফেলা বর্জ্যের কারণে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আবু হাসান বলেন, ময়লার উটকো গন্ধে বাড়িতেও টেকা যায় না। এগুলো দেখারও কেউ নেই।
সড়কে চলাচল করা অনেককেই ওই এলাকা পার হওয়ার সময় নাক চেপে ধরে রাখতে দেখা যায়।
নাকে গামছা বেঁধে সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন আমজাদ হোসেন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ’গন্ধে টেকা যায় না। এতো দুর্গন্ধ যে নাক বন্ধ না করার উপায় নেই।’
ধামরাইয়ের বারবাড়িয়া থেকে সাভারের জাহাঙ্গীরনগরে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম রিফাত বলেন, গন্ধের কারণে খুব কষ্ট হয়। ওই এলাকার বাতাসে সবসময় ওই দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়া প্রায়দিনই ময়লা পুড়িয়ে দেয়। গন্ধ ও ধোয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসে।
এদিকে বর্জ্যের বিষক্রিয়ার কারণে সড়কের পাশের ১২টি কড়ই জাতীয় গাছ শুকিয়ে মরে গেছে।
সচেতন নাগরিক সমাজ ধামরাইয়ের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, ধামরাই পৌরসভা গঠন হলেও এখানে পরিকল্পিত নগরায়ন হয়নি। বিশেষ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কখনোই গড়ে ওঠেনি। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আমরা পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাইনি। আগে ধামরাই-কালামপুর সড়কের পাশে একইভাবে ময়লা ফেলার কারণে সেখানেও গাছ মরেছে। এখন মহাসড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে। মোদ্দাকথা কোনো স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। আমরা চাই একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি স্থায়ী সমাধান হোক।
ধামরাই উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. মোতালিব আল মোমিন বলেন, বর্জ্যের তরল গাছ শুষে নিলে ওই গাছ মারা যায়। পৌরসভার কর্তৃপক্ষকে বলেছি, যাতে সেখানে ময়লা না ফেলা হয়।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের নয়ারহাট শাখার উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী দেবাশীষ সাহা বলেন, আমি বুধবার এখানে যোগ দিয়েছি। মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলার বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হবে। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ধামরাই পৌরসভার মেয়র গোলাম কবীর বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা কোনো জায়গা বরাদ্দ পাইনি। বরাদ্দ পেতে উপজেলার মাসিক সভায় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ময়লা যদি না নেই, তাহলে বিভিন্ন এলাকায় ময়লার স্তুপ করবে স্থানীয়রা। তাই এগুলো সংগ্রহ করে বাধ্য হয়েই সড়কের পাশে ফেলতে হচ্ছে।
ধামরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, জমি কিনে বা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জমির ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের সরাসরি জমি দেওয়ার সুযোগ নেই।
সাব্বির/টিপু