ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

চলনবিলে ‌‘বাউত উৎসবে’ মেতেছিলেন মৎস্য শিকারিরা

শাহীন রহমান, পাবনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১৩, ২৯ নভেম্বর ২০২৩  
চলনবিলে ‌‘বাউত উৎসবে’ মেতেছিলেন মৎস্য শিকারিরা

পাবনার চলনবিলে বাউত উৎসবে মেতেছিলেন সৌখিন মৎস্য শিকারিরা। বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) ভোর থেকে দল বেঁধে বিলে নেমে মনের আনন্দে মাছ শিকার করেন তারা। এসময় অনেকেই বিলের পানি থেকে বোয়াল, শোল, রুই ও কাতল মাছ ধরেন। আবার অনেককেই খালি হাতে ফিরে যেতেও দেখা গেছে। 

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার রুহুল বিলে দল বেঁধে মাছ ধরার এই আয়োজনের নাম ‘বাউত উৎসব’। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসবে অংশ নেন নানা বয়সী হাজারো মানুষ। তবে, এ বছর বিলে মেলেনি কাঙ্খিত মাছের দেখা। এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ মৎস্য শিকারিরা। তাদের অভিযোগ, অবৈধ জাল আর গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছ ধরে নিয়ে যান প্রভাবশালীরা। ফলে মাছ ও পোকামাকড় মরে গিয়ে পানিতে সৃষ্টি হয়েছে দুর্গন্ধ।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নভেম্বরের শেষ অথবা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শুরু হয় মাসব্যাপী এই উৎসব। সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ভোর থেকে বিলাঞ্চলের পূর্বনির্ধারিত এলাকায় দল বেঁধে মাছ শিকারে নামেন বাউতেরা। চলনবিলের রুহুল বিল, ডিকশির বিল, রামের বিল সহ বিভিন্ন বিলে মাসব্যাপী চলে এই বাউত উৎসব। তবে, আগের মতো মিলছে না দেশি মাছ। এ নিয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ মৎস শিকারিরা।

মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে পাবনা-ফরিদপুর আঞ্চলিক সড়কের ভাঙ্গুড়া উপজেলার পার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাটুলিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো অন্তত ২০টি বাস। এসব বাসে কুষ্টিয়া, নাটোর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন অনেক মৎস্য শিকারিরা। আবার, অনেকে ইজিবাইক, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে এসেছেন।

এরপর রুহুল বিল অভিমুখে ছুটে চলে মানুষ। ভোরের আলো ফোটার আগেই বিলপাড়ে হাজির নানা বয়সী হাজারো মানুষ। সবার হাতে পলো, ঠেলা জাল, বাদাই জালসহ মাছ ধরার নানা উপকরণ ছিলো। একসঙ্গে বিলে নেমে লোকজ রীতিতে মনের আনন্দে চলছে মাছ শিকার। দলবেঁধে মাছ ধরার এ আয়োজনে মৎস্য শিকারকে ডাকা হয় বাউত। তাদের ঘিরেই উৎসবের নামকরণ। চলন বিলাঞ্চলে এমন উৎসব চলছে যুগের পর যুগ ধরে।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নভেম্বরের শেষে অথবা ডিসেম্বরের শুরুতে মাসব্যাপী চলে এই উৎসব। সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ভোর থেকে বিলাঞ্চলের পূর্বনির্ধারিত এলাকায় দল বেঁধে মাছ শিকারে নামেন বাউতেরা। বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে বিলপাড়ে তৈরী হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। কে মাছ পেলেন, কি পেলেন না তা নিয়ে হতাশা নেই। তাদের কাছে আনন্দটাই বড় কথা।

টাঙ্গাইল থেকে মাছ শিকারে আসা আশিকুর রহমান বলেন, ‘বাউত উৎসবের কথা অনেক শুনেছি। এবার টাঙ্গাইল থেকে প্রায় ২০টি বাস নিয়ে পাঁচ শতাধিক লোক এসেছি মাছ ধরতে। এতো লোক একসঙ্গে মাছ ধরার আনন্দই আলাদা। খুব ভালো লেগেছে।’

নাটোর থেকে বাউত উৎসবে আসা অপর মৎস্য শিকারি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছরই আসি এই বাউত উৎসবে। কিন্তু এবার মাছ নেই বললেই চলে। তবে, আমরা মাছ পাই বা না পাই, সবাই মিলে আনন্দ করি এটাই ভালো লাগে।’

চাটমোহর উপজেলার মাছ শিকারি ময়েন প্রামানিক বলেন, ‘প্রভাবশালীরা আগেই চায়না দুয়ারী, কারেন্ট জাল দিয়ে সব মাছ মাইরে লিছে। পরে তারা বিলে গ্যাস ট্যাবলেট দিছে, যেকারণে ছোটখাটো মাছ যা আছে বেশিরভাগ মরে গেছে। পানিতেও দুর্গন্ধ মেলা। এজন্যি মাছ নাই ইবার।’

বাউত উৎসব দেখতে আসা সাংস্কৃতিক কর্মী মুস্তাফিজ রাসেল বলেন, ‘বিলে যেভাবে গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়েছে তাতে দেশী মাছের প্রজনন নষ্ট হচ্ছে। জীববৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে অবৈধ চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল ব্যবহার হচ্ছে। এখনই প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। না হলে আগামীতে দেশী মাছের সাথে বাঙালী সংস্কৃতির এই উৎসবও হারিয়ে যাবে।’

পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মাছের প্রজনন ও জীববৈচিত্রের ক্ষতি না করে বাউত উৎসব পালন করতে হবে। এ বিষয়ে মৎস্য শিকারিদের সচতেন হতে হবে। বিলে গ্যাস ট্যাবলেট বা অবৈধ জাল ব্যবহার করে মাছের ও পরিবেশের ক্ষতি করছেন কেউ এমন অভিযোগ পেলে মৎস্য আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ