১০৩ কোটি টাকার ঋণের বোঝা হানিফের ঘাড়ে
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
মাহবুব উল আলম হানিফ
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বার্ষিক আয় আগের চেয়ে বাড়লেও কমেছে সম্পদের পরিমাণ। সেই সাথে ঘাড়ে প্রায় ১০৩ কোটি টাকা ঋণের বোঝা রয়েছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা রিটার্নিং কার্যালয় ও সহকারী রিটার্নিং কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় বিগত ৫ বছরে বার্ষিক আয় বাড়লেও কমে গেছে তার সম্পদের পরিমাণ।
অন্যদিকে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে তার ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০২ কোটি ৮৬ লাখ ১১ হাজার ৭০০ টাকা। তবে বার্ষিক আয় আগের চেয়ে বেড়েছে।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বার্ষিক আয় যেখানে ছিল ২ কোটি ৩২ লাখ ৫৬ হাজার ৭৩৮ টাকা।
আর এবার বার্ষিক আয় বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৪ হাজার ১০ টাকা। নগদ টাকা রয়েছে ২ কোটি ১৬ হাজার ৪৫২ টাকা। স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২০ কোটি ৯৯ লাখ ১৬ হাজার ১১১ টাকা দেখানো হয়েছে।
এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় ২৩ কোটি ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার ৭৩৮ টাকা দেখানো হয়েছিল। সে হিসেব অনুযায়ী বিগত পাঁচ বছরে হানিফের সম্পদের পরিমাণ কমেছে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার ৬২৭ টাকা।
বাড়ি, এ্যাপার্টমেন্ট, দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে আয় দেখানো হয়েছে ৯ লক্ষ টাকা। বন্ড, স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ৮১ লক্ষ ৬ হাজার ৪০০ টাকা।
এমপি ভাতা থেকে আয় দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ৩০ তোলা স্বর্ণালংকার যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৮ লাখ টাকা। টিভি, ফ্রিজ, এসির মূল্য দেখানো হয়েছে ৯ লাখ ১৫ হাজার ৬০০ টাকা। আসবাবপত্রের দাম ধরা হয়েছে ২ লাখ টাকা। এছাড়া ৩টি আগ্নেয়াস্ত্রের দাম উল্লেখ করা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৭৯ টাকা।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে অকৃষি জমি আছে ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯৮ হাজার ৪৫৬ টাকার। নয়া পল্টনে একটি বাড়ি আছে যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৮ লাখ টাকা, গাজীপুরে ৩ একর জমি আছে যার মূল্য ১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, গুলশানে ৫ কাঠা ৯ ছটাক জমি আছে যার মূল্য ৩ কোটি ৩৯ লাখ ১৭ হাজার ১৮০ টাকা। চৌড়হাসে ১২ শতাংশ জমিসহ দালানের মূল্য ১ কোটি ৯৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনটি গাড়ির মূল্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৯২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার নামে ৬টি কোম্পানির শেয়ার দেখানো হয়েছে। এগুলো হচ্ছে কোয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, লুনার এভিয়েশন এন্ড সার্ভিসেস লিমিটেড, কোয়েস্ট একোয়া কালচার এন্ড প্রসেসিং লিমিটেড, সান মেরিল, ব্লু লাইন এয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড এবং এ আর এম এস বাংলাদেশ লিমিটেড।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্ত্রীর নামে সম্পদ দেখানো হলেও বিগত একাদশ এবং এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় স্ত্রীর নামে কোনো সম্পদ ও অর্থ দেখানো হয়নি। এছাড়া ৪টি ব্যাংকে মাহবুব উল হানিফের নামে প্রায় ১০০ কোটি টাকারও বেশি লোন রয়েছে। এর মধ্যে প্রিমিয়াম ব্যাংকে লোন রয়েছে ৪৭ কোটি ৪২ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৪ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকে ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৭৭ হাজার ৩৪৫ টাকা, সিকিউরিটি ফার্ম হাউস লিমিটেড থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং এনসিসি ব্যাংক লিমিটেড হতে ৫০ কোটি ৩ লক্ষ ৬ হাজার ৩১ টাকা।
মাহবুব উল আলম হানিফের পৈতৃক বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ষোলদাগ গ্রামে। তার বাবা রেলওয়ের কর্মকর্তা থাকার সুবাদে তিনি পাকশী রেলওয়ে কলোনীতে বড় হয়েছেন।
সেখানে তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের লেখাপড়া সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। কলেজ জীবন থেকেই তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে পুনরায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ আসনে দলের মনোনীত প্রার্থী হলেও জোটগত নির্বাচনের স্বার্থে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।
২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসন থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সাল থেকে অদ্যাবধি তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
২০১০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মাহবুব উল আলম হানিফ।
কাঞ্চন/ফয়সাল