ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

প্রণোদনার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, সুপারকে শোকজ

গাইবান্ধা সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৫১, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩  
প্রণোদনার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, সুপারকে শোকজ

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কঞ্চিবাড়ি দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুল্লাহিল কাফির বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির সুপারের সীমাহীন দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর কয়েক দফা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মাদ্রাসার অভিভাবক সদস্যরা। আর এসব অভিযোগের কারণে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে সুপার আব্দুল্লাহেল কাফিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।  

গত ৩০ নভেম্বর অভিভাবকদের দেওয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, মাদ্রাসাটি ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও এখন পর্যন্ত লেখাপড়া কিংবা অবকাঠামোগত তেমন কোনও উন্নয়ন করা হয়নি। বরং মাদ্রাসাটির ভেতরে থাকা কিছু প্রাচীন আম গাছ, শিমুল গাছ কেটে বিক্রি করে সেই টাকা পকেটস্থ করেছেন সুপার। শুধু তাই নয়, টাকার বিনিময়ে মাদ্রাসার ৪৫ শতক জায়গা অবৈধভাবে অন্যের কাছে বন্ধক রেখেছেন। মাদ্রাসার জায়গায় যেসব দোকানপাট রয়েছে সেগুলোর ভাড়াও নিজেই উত্তোলন করে আসছেন। এ ছাড়া, সুপারের বিরুদ্ধে ইবতেদায়ী শাখায় ছাত্র-ছাত্রী না থাকলেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে নিয়মিত বই উত্তোলন করে তা অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্রি করারও অভিযোগ করেন তারা।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। সেই টাকা থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য পাঁচ হাজার করে টাকা প্রণোদনা দেওয়ার জন্য বলা হয়। সে মোতাবেক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিজে উপস্থিত হয়ে ১৫ জন শিক্ষার্থীকে আলাদা আলাদা খামে করে সেই টাকা বিতরণ করেন। বিতরণ শেষে শিক্ষা কর্মকর্তা চলে গেলে সুপারের নির্দেশে দুজন শিক্ষক পুনরায় টাকার খামগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে ফেরত নেন। এরপর সেই খাম থেকে ৪ হাজার টাকা বের করে নিয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মাত্র এক হাজার টাকা করে দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে উত্তেজিত হয়ে ওঠে মাদ্রাসার অভিভাবক এবং স্থানীয় লোকজন। 

সরেজমিনে দেখা যায়, অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে মাদ্রাসার সাইনবোর্ডটি। ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল, মাদ্রাসাটির জীর্ণশীর্ণ ভবন। সেখানকার একটি কক্ষে শিক্ষক-কর্মচারী গাদাগাদি করে বসে আছেন। কিন্তু মাদ্রাসায় সুপার বা সহ-সুপার কেউ উপস্থিত নেই। মাদ্রাসার শিক্ষক হাজিরা খাতা দেখে জানা যায়, গত মাসের (নভেম্বর) ১৫ তারিখ থেকে সুপার আব্দুল্লাহেল কাফি কোনও স্বাক্ষর করেননি। তাকে ফোন দেওয়া হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

সহ-সুপার রেজাউল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি বাইরে আছি। তাছাড়া এসব অভিযোগের বিষয় আমি কিছুই বলতে পারবো না। কারণ, সুপার কোনও কাজের বিষয়ে আমাদের সাথে আলোচনা করেন না। তাছাড়া তার নামে মামলা থাকায় তিনি আপাতত গা-ঢাকা দিয়ে আছেন’।

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও শান্তিরাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবিএম মিজানুর রহমান খোকন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হলেও সুপার আমাকে এসব কিছুই জানায়নি। মাদ্রাসায় এসে কর্মকর্তারা টাকা বিতরণ করলেন, অথচ আমাকে ডাকার প্রয়োজন পর্যন্ত মনে করেননি। এসব অনিয়মের আমিও বিচার চাই’। 

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মমিন মন্ডল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সুপারের বিরুদ্ধে আনা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’। 

মাসুম/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়