ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৮ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কুমারখালি মুক্ত দিবস

মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ট্রেনযোগে পালায় দিশেহারা পাকবাহিনী

কাঞ্চন কুমার, কুষ্টিয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪২, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১০:৪৯, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩
মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ট্রেনযোগে পালায় দিশেহারা পাকবাহিনী

১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষের প্রতিরোধের মধ্যদিয়ে পাক হানাদার মুক্ত হয় কুষ্টিয়ার কুমারখালি। ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা।

মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসে কুমারখালির ধলনগর, করিমপুর, প্রতাপপুর, কুশলীবাসা, বিল বরইচারা, ডাঁসা, ঘাঁসখাল, বংশীতলা, নন্দনালপুরের হাতিসাকো রেললাইন, কুমারখালি শহরে ১০টি স্থানে যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এসব যুদ্ধে গেজেটভুক্ত ১৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শতশত নারী-পুরুষ শহীদ হন। নিহত হন কয়েকশত পাকিস্তানি সৈন্য।

১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করে কুন্ডুপাড়া রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ করে। সে সময় রাজাকার ফিরোজ-খুরশিদ,গোলাম রসুল, সাদী, গালিবদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুলযুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধের খবর পেয়ে কুষ্টিয়া থেকে পাক-সেনারা কুমারখালী শহরে প্রবেশ করে এবং বিক্ষিপ্তভাবে ব্রাশফায়ারের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
কিন্তু সে সময় হাতে গোনা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও পর্যাপ্ত অস্ত্র না থাকায় পাক বাহিনীর মুখোমুখি না হয়ে কৌশলে পিছু হটে আসে। এ সময় পাকবাহিনী ও রাজাকাররা কুমারখালি শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে হত্যাসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। 

৭ ডিসেম্বরের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা তোসাদ্দেক হোসেন ননী মিঞা, কুন্ডুপাড়ার ওমর আলী শহীদ হন। আরও শহীদ হন সামসুজ্জামান স্বপন, সাইফুদ্দিন বিশ্বাস, আব্দুল আজিজ মোল্লা, শাহাদত আলী, কাঞ্চন কুন্ডু, আবু বক্কর সিদ্দিক, আহমেদ আলী বিশ্বাস, আব্দুল গনি খাঁ, সামসুদ্দিন খাঁ, আব্দুল মজিদ ও আশুতোষ বিশ্বাস মঙ্গল।

এরপর ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রাজাকার ও পাকবাহিনীর ক্যাম্পে হামলা করতে পৃথক পৃথক এলাকায় অবস্থান নেন। এতে নেতৃত্ব দেন মুক্তিযোদ্ধা বারিক খান, রনজু, আব্দুর রাজ্জাক, হাবীব, মঞ্জুর আর রহমান, রেজাউল করিম হান্নান প্রমুখ। এ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গনি, মনজু সাত্তার, সামছুল আলম, পিন্টু মাষ্টার, মাহাতাব, কামাল, আতিয়ার রহমান স্বপন (সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা), মকবুল হোসেন, ধীরেন, টগর, জহুর, মিজান বিশ্বাসসহ আরো অনেকেই অংশ নেন।

৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা শহরের চারপাশ থেকে পাকবাহিনীর ক্যাম্প (বর্তমান কুমারখালি উপজেলা পরিষদ) আক্রমণ করে। দীর্ঘসময় যুদ্ধের পর পাকবাহিনী পিছু হটতে শুরু করে। একপর্যায়ে পাকবাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে ট্রেন যোগে কুষ্টিয়ার দিকে রওনা দিলেও পাকবাহিনীর বহনকারী ট্রেনটিতে হামলার পরিকল্পনা করে মুক্তিযোদ্ধারা। পাকবাহিনীর সদস্যদের বহনকারী ট্রেনটি চড়াইকোল হাতিসাঁকো এলাকায় পৌঁছানো মাত্রই মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেনটি লাইনচ্যুত করে দেয়। ফলে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে এবং পাকবাহিনীর সদস্যরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পায়ে হেঁটে কুষ্টিয়া অভিমুখে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পাকবাহিনীর সদস্যরা আরেকটি ট্রেনে করে কুমারখালিতে আসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।

এদিনে রাজাকার কমান্ডার খুশি মারা যায়। আর অন্যান্য রাজাকাররা কুমারখালি ছেড়ে পালিয়ে যায়। তারপরই কুমারখালি শহর হানাদার মুক্ত হয়। এই খবরে সর্বস্তরের জনতা এবং মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তায় নেমে আনন্দ মিছিল বের করে। সেদিন থেকেই ৯ ডিসেম্বর কুমারখালি মুক্ত দিবস পালন করা হয়।

/টিপু/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়