ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

গাইবান্ধায় দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে অনন্য ভূমিকা রাখছে টিটিসি

গাইবান্ধা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩  
গাইবান্ধায় দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে অনন্য ভূমিকা রাখছে টিটিসি

বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে পারলে তারাই হবে দেশের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি। সেই কাজটিই করে যাচ্ছে গাইবান্ধা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)।
এই কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রতিবছর শত শত বেকার যুবক-যুবতী প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশ যাচ্ছেন। স্বাবলম্বী হচ্ছেন দেশে-বিদেশে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি জিতে নিয়েছে দেশ সেরার পুরস্কার। তবে, শিক্ষক-কর্মচারী সংকটে প্রশিক্ষণ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারী।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গাইবান্ধা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালে। প্রতিষ্ঠার সাত বছরে ১৯টি ট্রেডে এ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নিয়েছে প্রায় ২২ হাজার বেকার যুবক-যুবতী। এর মধ্যে সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করে বিদেশ গেছেন ২০ হাজারের বেশি প্রশিক্ষণার্থী। ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় এক হাজার বেকার যুবক-যুবতী প্রশিক্ষণ নিতে আসেন এখানে। বিনামূল্যে এবং কিছু ক্ষেত্রে সামান্য খরচে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়ে খুশি এখানে আসা প্রশিক্ষণার্থীরা।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, শত শত বেকার যুবক-যুবতী প্রশিক্ষণ নিতে এসেছেন। কেউ আবার এসেছেন ভর্তির প্রস্তুতি নিতে। ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, বেকার যুবক-যুবতীদের কেউ ওয়েলডিং শিখছেন, কেউ ইলেকট্রনিক্স, বিদেশি ভাষা, কেউ আবার ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। অন্য পাশের বড় একটি হল রুমে সারিবদ্ধভাবে মেয়েরা সেলাইয়ের কাজ শিখছেন।

সেলাইয়ের কাজ শিখে নিজেই একটি টেইলারিং দোকান দেওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে প্রশিক্ষণ করছেন সুমি বেগম নামে এক তরুণী। 
রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, 'এসব প্রশিক্ষণ নিয়ে সবাই যে বিদেশ যাচ্ছেন তাও না। অনেকেই স্থানীয়ভাবে উদ্যোক্তা হচ্ছেন। তাদের মাধ্যমে এলাকায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।’
ড্রাইভিং ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন শাফায়াত হোসেন আনন্দ। তিনি বলেন, 'আমার ইচ্ছা ড্রাইভিং শিখে একজন প্রফেশনাল ড্রাইভার হবো। সুযোগ পেলে বিদেশে যাবো'।

গাইবান্ধা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া মুরাদ আহমেদ ব‌লেন, ‘কারিগরি প্রশিক্ষণ থেকে ড্রাইভার কোর্সে প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে হংকংয়ে কর্মরত আছি। খুব ভালো আছি। অনেককে আসতে সহযোগিতাও করছি। সরকারের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই'।

কম্পিউটার গ্রাফিক্স ডিজাইনার হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এসেছেন রওশন সরকার। তিনি বলেন, ‘কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে আমি ৬ মাসের কোর্স করতে চাই। তাই খোঁজ নিতে এসেছি। প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে অর্থ উপার্জন করতে চাই। এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই এখন ফ্রিল্যান্সিং করে স্বাবলম্বী হয়েছে'।

কারিগরি কেন্দ্রের প্রশিক্ষকরা জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে এই মুহূর্তে স্বনির্ভর, ভাষা শিক্ষা, এসইআইপি, ভোকেশনাল এসএসসি, মোটর ড্রাইভিং, ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, গার্মেন্টস, আরএসিসহ ১৯টি প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। কোর্সগুলোর মধ্যে জাপানি ভাষা, হংকংয়ের ভাষা অন্যতম। এখানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্সের ওপর ৩ মাস, ৪ মাস ও ৬ মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
এছাড়া এখানে শিক্ষার্থীরা হাউসকিপিংয়ের ওপর তিন মাস প্রশিক্ষণ নেয়। প্রশিক্ষণ শেষে বিদেশে যাওয়ার জন্য তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়। বিদেশে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের থাকা-খাওয়া সম্পূর্ণ ফ্রি। বিদেশে যেতে হলে একজন প্রশিক্ষিত কর্মীর জন্য সরকারি হিসেবে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। বিদেশ যেতে কারও উল্লেখিত পরিমাণ টাকা দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলে টিটিসি ব্যাংক লোনের মাধ্যমে সেই টাকারও ব্যবস্থা করে দেয়।

গাইবান্ধা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম বলেন, ‘শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার কাজ করে যাচ্ছে গাইবান্ধা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এর মধ্যে গাইবান্ধা টিটিসি দেশ সেরা হয়েছে কয়েকটি ট্রেডে। খুব শীঘ্রই মডেল টিটিসি হওয়ার আশা করছি। তবে, জনবল সংকটের কারণে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে প্রশিক্ষণ শেষে বিদেশ যাওয়ার সময় ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা সরকারি খরচ দিতে হয়। কেউ টাকা সংগ্রহে ব্যর্থ হলে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণের ব্যবস্থা করে দেই। প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নে শিক্ষক-কর্মচারী স্বল্পতা ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রশিক্ষণার্থীদের যাতায়াতের জন্য একটি গাড়ি প্রয়োজন। এসব সহযোগিতা পেলে এই অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া আরও বহু সংখ্যক  জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে প্রস্তুত করা সম্ভব। এতে বেকারত্ব নিরসনের পাশাপাশি আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে।’

মাসুম/ফয়সাল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়