অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পরিবেশ
বান্দরবান প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
বান্দরবানে রুমা উপজেলার সাঙ্গু নদীতে চারটি খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে দুই পাড়ের ফসলি জমি এবং তীরবর্তী গ্রামগুলো নদী ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, নদী থেকে বালু তোলার জন্য সরকারিভাবে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রুমা সদর ইউনিয়নের মুনলাই পাড়ার নৌঘাঁট, রুমাচর পাড়া ঘাট ও পলিকা পাড়া ঘাট তিনটি এলাকার সাঙ্গু নদী থেকে অবৈধভাবে মেশিন দিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে ফসলি জমি, নৌ-চলাচলসহ নদীর তীরে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পানির উৎস দূষিত হয়ে জনজীবনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, রুমা খালের মুখ এবং রুমাচর পাড়ার মধ্যবর্তী সাঙ্গু নদী থেকে ২৪ হর্স ক্ষমতা সম্পন্ন ৪টি মেশিনে ১০ইঞ্চি পাইপ এক থেকে দেড়শো ফিট যুক্ত করে বালু তোলা হচ্ছে। এর চারপাশে বাদাম খেত লাগানো রয়েছে। যেসব স্থান থেকে বালু তোলা হচ্ছে, সেখান থেকে ফসলি জমি অল্প অল্প ভেঙে নদীতে পড়ে যাচ্ছে। ফসলি জমির ওপর দিয়ে খননযন্ত্রের পাইপ টানা হয়েছে। সেখানে কর্মরত ১২-১৫ জন শ্রমিক প্রায় ৮দিন ধরে বালু উত্তোলনের কাজ করছেন।
শ্রমিক ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মো. হাসান মুরাদ, মো. মতলব, মো. দস্তগির, জুয়েল দাশ, প্রনব লাল চক্রবর্তী, এ কে মালেক, মো. শাকিল সুমন দাশ ও অংচোয়াং মারমা এইসব বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত বলে জানা যায়।
রুমাচর উপর পাড়া চসানু মারমা বলেন, সাঙ্গু নদীর তীরে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছর ২কানি (৮০শতক) মটর ও শিম জাতীয় সবজিসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছিলেন। কিন্তু সাঙ্গু নদী থেকে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার কারণে নদীর তীর ভেঙে গিয়ে সবজি খেত নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
রুমাচর পাড়াবাসী উথোয়াই মং মারমা বলেন, তাদের নিচ পাড়ার ৭০ পরিবার ও উপর পাড়ার ৩৫ পরিবার মারমা সস্প্রদায়ের লোকজন সস্পূর্ণ সাঙ্গু নদীর পানির উপর নির্ভরশীল। পাড়ায় টিউবওয়েল না থাকায় এলাকার লোকজনের গোসল, কাপড় ধোয়া, রান্নাবান্না দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সব পানির উৎস এই সাঙ্গু নদীর পানি। কিন্তু গত বছর থেকে শুষ্ক মৌসুমে সাঙ্গু নদী থেকে মেশিন দিয়ে বালু তোলার কারণে নদীর নিচের দিকে পানি ঘোলা ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। একসাথে তিন-চারটি মেশিন দিয়ে বালু তোলার কারণে পুরো সাঙ্গু নদীর পানি দূষিত হচ্ছে।
বোটচালক মুইম্রা অং মারমা বলেন, রুমাচর পলিকা পাড়া মুখ এলাকার সাঙ্গু নদীর মাঝখানে বালু তোলার মেশিন বসানোর কারণে নৌ-পথে বোট চালকরা যেকোন সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
বালু উত্তোলনকারী হাসান মুরাদ, মো. দস্তগির ও অংচোয়াং মারমা বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, বালু উত্তোলন করার ব্যাপারে প্রশাসনের অনুমতি নেই। কিন্তু উন্নয়ন কার্যক্রমে ব্যবহার করার জন্য বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
সাঙ্গু নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার বিষয়ে রুমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, গত সপ্তাহে বিভিন্ন মহলের অভিযোগের ভিত্তিতে অবৈধভাবে সাঙ্গু নদীতে বালু উত্তোলনের তিনটি স্থানে উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ৫০ হাজার টাকা করে মোট ১ লক্ষ ৫০হাজার টাকা জরিমানা করেছি এবং আর কখনো এভাবে বালু উত্তোলন না করার নির্দেশনা দিয়ে এসেছি।
বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রুমা উপজেলায় সাঙ্গু নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে পরিবেশ আইনের আওতায় নিয়ে এসে সর্ব্বোচ্চ আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চাইমং/ফয়সাল