নির্বাচন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত, সরকারি আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা
শরীয়তপুর সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
আলমগীর মুন্সী। ফাইল ফটো
নির্বাচন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিতের অভিযোগে শরীয়তপুর জজ আদালতের সরকারি কৌসুলি (জিপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলমগীর মুন্সীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বুধবার (১৫ মে) দিবাগত রাতে সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দে বাদী হয়ে এ মামলা করেন। পালং মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও মারধর করতে উদ্যত হওয়ার অভিযোগে জেলা জজ আদালতের জিপির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দে বলেন, ‘নির্বাচন সংক্রান্ত কিছু গোপন নথি আলমগীর মুন্সী দেখতে চেয়েছিলেন। তিনি একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক। ওই নথি না দেখানোর কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। আমাকে লাঞ্ছিত করেছেন। মারধর করতে উদ্যত হয়েছেন। আমি এ ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সিনিয়র কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের পরামর্শে মামলা করেছি।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শরীয়তপুর জজ আদালতের জিপি আলমগীর মুন্সী বলেন, ‘আমার সঙ্গে কোনো সরকারি কর্মকর্তার খারাপ সম্পর্ক নেই। আমি কেন একজন নির্বাচন কর্মকর্তাকে অপদস্থ করতে যাব। আমার বিরুদ্ধে কেন মামলা হয়েছে বলতে পারব না।’
শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নির্বাচন কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছি। দুই পক্ষকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। চেয়েছিলাম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি যেন আর সামনের দিকে না আগায়। এখন মামলা হয়েছে।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, ‘নির্বাচনী কাজের নথি না দেখানোর কারণে কর্মকর্তাকে ভয় দেখানো, অপদস্থ করা নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন। আমরা বিষয়টি কমিশনকে জানিয়েছি। আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের সামনে ঘটেছে। এটা দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।’
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের একজন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান উজ্জ্বল।
কামরুজ্জামানের পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শরীয়তপুর জজ আদালতের সরকারি কৌসুলি (জিপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলমগীর মুন্সী।
নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের তালিকা ও ভোটকেন্দ্রের তথ্য সংক্রান্ত গোপনীয় কিছু নথি নিয়ে গত মঙ্গলবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দে।
তিনি নথিপত্র নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাইফুদ্দিন গিয়াসের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তখন সেই কক্ষে প্রবেশ করেন জিপি আলমগীর মুন্সী। সে সময় নথিগুলো সরিয়ে রাখেন নির্বাচন কর্মকর্তা। এতে ক্ষুব্ধ হন জিপি আলমগীর মুন্সী।
একদিন পরে বুধবার বিকেলে নির্বাচন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাওয়ার পথে আলমগীর মুন্সী তার গতিরোধ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুদ্দিন গিয়াস, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাইনউদ্দিন ও এনডিসি হোসেল রানা সেখানে আসেন। বিকাশ চন্দ্র বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তখন আলমগীর মুন্সী পুনরায় তাকে গালিগালাজ করে তেরে মারতে আসেন।
উল্লেখ্য, আগামী ২১ মে শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আকাশ/কেআই