ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ভোটকেন্দ্রে ‘জিন’ পাঠিয়ে ফলাফল প্রার্থীর পক্ষে নেওয়ার কথা বলে প্রতারণা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ৬ জুন ২০২৪   আপডেট: ০৯:৪৭, ৬ জুন ২০২৪
ভোটকেন্দ্রে ‘জিন’ পাঠিয়ে ফলাফল প্রার্থীর পক্ষে নেওয়ার কথা বলে প্রতারণা

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে জয়ী করে দেওয়া হবে এমন আশ্বাস দেন কথিত জিনের বাদশাহ চক্রের এক সদস্য। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ‘জিন’ পাঠিয়ে ফলাফল প্রার্থীর পক্ষে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে এ কাজের জন্য ১৫ লাখ টাকা নিয়ে যান তারা। কিন্তু ফলাফলে দেখা যায়, ছয় প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন ওই প্রার্থীই। তখন ওই প্রার্থী বুঝতে পারেন, তাকে বোকা বানিয়েছে কথিত জিনের বাদশাহ। পরে পুলিশের শরণাপন্ন হলে মঙ্গলবার (৪ জুন) রাতে গ্রেপ্তার করা হয় জিনের বাদশাহ মিলন ইসলামকে (৫২)। গ্রেপ্তারের সময় তার বাড়ি তল্লাশি করে ডলার, পিতলের কলস ও আলাদীনের চেরাগ জব্দ করা হয়। 

প্রতারণার শিকার ব্যক্তির নাম মহসিন আলী রুবেল (৬৪)। তিনি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার নয়াটোলা এলাকার বাসিন্দা। তিনি সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার রাতে প্রতারণার শিকার ব্যক্তি বোদা থানায় মিলন ইসলামসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ থেকে সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন। রাতেই কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে মিলন ইসলামকে গ্রেপ্তার করে থানা-পুলিশ। মিলন ইউনিয়নের উৎকুড়া এলাকার বাসিন্দা। পরে এই মামলায় মিলনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার (৫ জুন) বিকেলে পঞ্চগড় আদালতে তোলার পরে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে আদালত আসামী মিলনকে জেলহাজতে পাঠান।

থানা-পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে মিলন ইসলাম জিনের বাদশা সেজে মানুষের কাছ থেকে নানা প্রলোভনে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ৬ষ্ঠ ধাপের উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মহসিন আলী রুবেল প্রার্থী হন। পরে গত ২১ মে (মঙ্গলবার) নির্বাচনের দিন তার হেলিকপ্টার প্রতীকে বিজয়ী করতে ভোটের দিন কেন্দ্রে জিনের বাদশা পাঠিয়ে প্রার্থী রুবেলকে জয়ী করতে পারবেন বলে প্রলোভন দেখাতে থাকেন জিনের বাদশা চক্রের প্রধান মিলনসহ তার সহযোগীরা। এক পর্যায়ে গত ২৩ এপ্রিল মামলার বাদী মহসিন আলী প্রতারক মিলনের কথা বিশ্বাস করে তার গাড়ির ড্রাইভার বুল ইসলামকে সাথে নিয়ে উপজেলার কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের উৎকুড়া এলাকায় আসেন। পরে প্রতারক মিলনকে তার বাসায় ১ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করেন। এক পর্যায়ে বাদী মহসিন আলী কয়েকদফায় মোবাইলে বিকাশসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মোট ১৫ লাখ টাকা প্রদান করেন। পরে নির্বাচনে ফলাফল গণনা শেষে ৬ষ্ঠতম হন মহসিন আলী। নির্বাচনে বিজয়ী হতে না পেরে প্রার্থী মহসিন আলী ২২ মে মিলনের বাসায় এসে টাকা ফেরত চাইলে ঘটনা অস্বীকার করে উল্টো হত্যা ও গুমের হুমকি মিলন ও তার সহযোগীরা। উপায়ন্তর না দেখে তিনি বোদা থানা-পুলিশের শরণাপন্ন হন। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বোদা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুস সালাম বলেন, আসামী মিলন প্রতারণার মাধ্যমে তার সহযোগীদের নিয়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেন। চক্রটির সন্ধানে আমরা আগে থেকে কাজ করে যাচ্ছিলাম। পরে একটি মামলা হলে তার অবস্থান সনাক্ত করে মিলনকে গ্রেপ্তার করি। 

বোদা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, একটি চক্র সাধারণ মানুষের কাছে হনুমানি পয়সা, আলাদীনের চেরাগ, পিতলের কলসকে সোনার কলস দেয়ার কথা বলে প্রতারণা করে আসছিল। এর আগেও আমরা বিভিন্ন চক্রকে ধরেছি। এ ধরনের চক্র সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

নাঈম/ইমন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়