ঢাকা     রোববার   ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২২ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

১৪ ট্রাক চিনি জব্দ: চোরাচালান সিন্ডিকেট বরাবরই অধরা

নূর আহমদ, সিলেট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২০, ৭ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৭:২৩, ৭ জুন ২০২৪
১৪ ট্রাক চিনি জব্দ: চোরাচালান সিন্ডিকেট বরাবরই অধরা

জব্দকৃত ভারতীয় চিনিবাহী ট্রাক

সিলেট শহরতলীর উমাইরগাঁওয়ে ভারতীয় চিনি ভর্তি ১৪টি ট্রাক জব্দের ঘটনা ছিল গতকালকের ‘টক অব দ্যা টাউন’। চিনি চোরাচালান সিন্ডিকেটের সঙ্গে কারা জড়িত এ নিয়ে নানামুখী প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দেশবাসীর মনে। 

স্থানীয়দের দাবি, চোরাচালান সিন্ডিকেটে সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জড়িত রয়েছেন। রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টতাও। যারা সব সময় ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যান। থেকে যান প্রদীপের নিচের অন্ধকারের আড়ালে।

আরো পড়ুন:

গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুন) চিনির ট্রাক বহরের সঙ্গে একটি প্রাইভেটকার ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। বাহন দুটি চিনিবাহী ট্রাকগুলোর প্রটোকলে ছিল। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারের মালিকও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা। যাদের এখনো আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। কেন সম্ভব হয়নি তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বিদ্যমান। 

যেপথ দিয়ে নিয়মিত আসে চিনি: সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ চিনি চোরাচালের নিরাপদ রুট। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে কিছু চিনির চালান জব্দ করলেও অধিকাংশই থেকে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। গতকাল বৃহস্পতিবার যে চালান জব্দ হয়েছে, অনেকে বলছেন, ‘হয়তো চেইনে সমস্যার কারণে চিনির এই বড় চালান জব্দ হয়েছে। নয়তো হতো না।’

সূত্র জানায়, কোম্পানীগঞ্জের মাঝেরগাঁও, বরমসিদ্দিপুর, তুরং, নারাইনপুর, গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি, সোনারহাট, পান্তুমাই ও তামাবিল, কানাইঘাটের সুরইঘাট, লোভাছড়া ও ডনা এবং জকিগঞ্জের আটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে চিনি চোরাচালান হচ্ছে।  

যেভাবে জব্দ করা হয় ১৪ ট্রাক ভারতীয় চিনি: গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় কোম্পানীগঞ্জ-জালালাবাদ রোডে শহরতলীর উমাইরগাঁও এলাকার ভাদেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে ১৪ ট্রাক ভারতীয় চিনি জব্দ হয়। এসময় একটি প্রাইভেটকার ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ হয়। তবে, এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

এই প্রাইভেটকারটি সিলেট মহানগর যুবলীগের নেতা রুপম আহমদের বলে সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন

পুলিশের ভাষ্য, চিনিবোঝাই ট্রাকগুলো সিলেটের সীমান্ত এলাকা কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট থেকে জালালাবাদের দিকে যাচ্ছিল। পুলিশ ধাওয়া দিলে ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল রেখে পালিয়ে যান চোরাকারবারিরা। চোরাচালানে জড়িতদের আটক করতে পুলিশের অভিযান চলছে। 

সূত্র জানায়, জব্দকৃত চিনির ট্রাকের মধ্যে ৩/৪টি কোম্পানীগঞ্জ থেকে এবং বাকিগুলো গোয়াইনঘাট সীমান্ত এলাকা থেকে এসেছে।

সূত্রের দাবি, চিনির চালান মূলত এয়ারপোর্ট বাইপাস হয়ে বাদাঘাট দিয়ে সিলেটে আসার কথা ছিল। তবে, ট্রাক চালকরা সালুটিকরে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় তারা রাস্তা পরিবর্তন করে উমাইরগাঁও সড়ক দিয়ে সিলেটে প্রবেশের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ গাড়িগুলো জব্দ করে।

জড়িতরা অধরা:
স্থানীয় যুবলীগের কয়েকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অভিযানকালে চোরাই ট্রাকগুলোর প্রটোকলে থাকা যে প্রাইভেটকারটি জব্দ হয়, সেটির মালিক সিলেট মহানগর যুবলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রুপম আহমদ। মোটরসাইকেলটি শাকিল আহদ নামের অপর যুবলীগ নেতার। তারা মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তির অনুসারী।

স্থানীয়দের দাবি, ট্রাকগুলো ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছিলেন কতিপয় ব্যক্তি। ১৪টি গাড়ির চালক ও তাদের সহযোগীরা একসঙ্গে পালিয়ে যাননি, তাদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করা হয়েছে।

যে কারণে চিনি চোরাচালান:
ভারতীয় চোরাই চিনির প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৫০ থেকে ৫৫ রুপি। যেখানে দেশের বাজারে প্রতি কেজি চিনির পাইকারি দাম ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। খুচরায় চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। কম দামে ভারতীয় নিম্নমানের চিনি বেশি দামে বিক্রি করে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু চক্র। 

সীমান্তে চোরাই চিনির চালান জব্দ করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।  

চোরাইপথে আসা চিনিতে সরকার প্রতি কেজিতে ৩৮ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন।

সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, সীমান্ত দিয়ে কীভাবে চিনির চালান আসে আগে সেটার রহস্য উদঘাটন করা দরকার। দেখা যায়, বৈধভাবে আসা চিনির দোকানে গিয়ে পুলিশ অনেক সময় হয়রানি করে। চোরাই পথে আসা চিনি নিরাপদে যেতে তারা সহযোগিতা করে। আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হওয়া প্রয়োজন চোরাচালান রোধে। 

সিলেটে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাকারবারিরা পালিয়ে যায়। চোরাচালানে জড়িত কাউকে আটক করা যায়নি। যেহেতু মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের নম্বর পাওয়া গেছে এবং ট্রাকগুলো ছাড়িয়ে নিতে মালিকরা আবেদন করবেন, তাই তাদের শনাক্ত করা সহজ হবে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে।’

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ (পিপিএম) বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযান চালিয়ে ১৪ ট্রাক ভর্তি ভারতীয় চিনি জব্দ করেছি। একটি প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাকারবারিরা পালিয়ে যায়। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে আসা চোরাই চিনির চালান জব্দ করতে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে, নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। এতো বড় চালান  পুলিশের আন্তরিকতা এবং দায়িত্ব পালনের জন্যই জব্দ করা সম্ভব হয়েছে।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়