ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বর্ষায় সাপ আতঙ্ক, এখনও চরাঞ্চলের মানুষের ভরসা ওঝার ঝাড়ফুঁক

শরীয়তপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৭, ১০ জুন ২০২৪   আপডেট: ১১:৩৫, ১০ জুন ২০২৪
বর্ষায় সাপ আতঙ্ক, এখনও চরাঞ্চলের মানুষের ভরসা ওঝার ঝাড়ফুঁক

নদীবেষ্টিত জেলা শরীয়তপুরে বর্ষাকালে সাপের উপদ্রব বাড়ে। প্রতিবছরই ঘটে প্রাণহানির ঘটনা। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে সাপে কাটলে চরাঞ্চলের মানুষজন এখনও ভরসা করেন ওঝার ঝাড়ফুঁকে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রচার-প্রচারণা না থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সদর হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম আছে কি নেই সেটা কেউ জানে না। তাই সাপে কাটলে ওঝার ঝাড়ফুঁকে ভরসা করতে হয় অথবা রোগীকে জেলার বাইরে নিয়ে যেতে হয়। এতে বাড়ছে মৃত্যুর ঝুঁকি। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে এলে মিলছে চিকিৎসাসেবা। এছাড়া, মজুত রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৯ জুন সকালে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার মুন্সীকান্দি এলাকার ব্যবসায়ী সেলিম মাদবর নিজ কৃষিজমিতে কাজ করার সময় বিষাক্ত সাপ কামড় দেয়। প্রথমে গুরুত্ব না দিয়ে ক্ষতস্থানে মুখের লালা লাগিয়ে পুনরায় কাজ করতে থাকেন তিনি। কিছুক্ষণ পর ঝিমুনি পেলে দৌড়ে আসেন স্থানীয় ওঝার কাছে।

অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হন। কিন্তু পথে জানতে পারেন, সেখানে অ্যান্টিভেনম নেই। পরে নিয়ে যাওয়া হয় চাঁদপুর সদর হাসপাতালে। সেখানে নিয়ে অ্যান্টিভেনমের ১০টি ডোজ প্রয়োগ করা হলেও সেলিম মাদবরকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

একইভাবে গত ১৮ মার্চ ও ২৬ এপ্রিল সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় একই উপজেলার আল্লাদী বেগম ও ইমামুল বেপারীর। এর আগে, গত তিন মাসে মারা যান আরও তিনজন।

এলাকাবাসী বলেন, নদীবেষ্টিত এলাকা হওয়ায় প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে সাপের উপদ্রব বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি সাপের কামড়ের শিকার হচ্ছেন ভেদরগঞ্জ উপজেলার মানুষ। বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার হচ্ছে সাপ ও সাপের ডিম। এ নিয়ে আতঙ্কিত এলাকার মানুষ।

বেসরকারি এক জরিপে জানা যায়, গত দুই মাসে শরীয়তপুরে অন্তত দুই শতাধিক মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে, বেশিরভাগ মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন ওঝার কাছে।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মিতু আক্তার বলেন, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে জানুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ৩৭ জন সাপে কাটা রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন। বিষধর সাপের কামড়ের লক্ষণ থাকায় অ্যান্টিভেনম দিতে হয়েছে ৬ জনকে। এর মধ্যে, ৫ জন সুস্থ হলেও দেরিতে আসায় একজনকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন সাপে কাটা রোগী আসলেও অ্যান্টিভেনম লাগেনি।

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপে কাটা রোগী এসেছেন ৮ জন। যার মধ্যে ১ জনকে অ্যান্টিভেনম দিতে হয়েছে। গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখনও কোন সাপে কাটা রোগী যায়নি। ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ জন রোগী আসলেও এদের কাউকে এন্টিভেনম দেওয়া লাগেনি। নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ জন রোগী এসেছেন। তাদের কাউকে অ্যান্টিভেনম দেওয়া লাগেনি।

শরীয়তপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ পরান বলেন, সাপে কাটা রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই হাসপাতালে না এসে যাচ্ছেন ওঝার কাছে। এ রকম অপচিকিৎসা না দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম রয়েছে। দ্রুত চিকিৎসা দিতে পারলে প্রাণে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

আকাশ/কেআই

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়