ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ওসি সেজে শিক্ষকদের ফোন দিয়ে টাকা হাতাচ্ছে প্রতারক চক্র!

পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ১১ জুলাই ২০২৪  
ওসি সেজে শিক্ষকদের ফোন দিয়ে টাকা হাতাচ্ছে প্রতারক চক্র!

পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ কিছু প্রধান শিক্ষককে ফোন দিচ্ছে প্রতারক চক্র। এরমধ্যে একজনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) তেঁতুলিয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষিকা এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন ।

প্রতারক চক্রের ফোন পাওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে, প্রথমে প্রতারক চক্র মোবাইলে বিকাশ মেসেজ পাঠিয়েই কিছুক্ষণ পর ফোন দিচ্ছেন। ফোনে পরিচয় দিচ্ছেন তিনি থানার ওসি। কথা শুরু করেন বেতন স্কেল গ্রেড নিয়ে। কথার ফাঁকেই বলেন আপনার নম্বরে ভুল করে বিকাশে ২০ হাজার টাকা চলে গেছে। এ টাকা পুলিশের এসপিকে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভুল করে আপনার নম্বরে চলে গেছে। ফোন পাওয়া ব্যক্তি সেটা চেক করতে চাইলে সেটার সুযোগ দেন না প্রতারকরা। ফোনে রেখেই ওই শিক্ষককে তার স্কুলের সহকারি শিক্ষককে দিয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়ে বিকাশের দোকানে যেতে বলেন। প্রশাসনকে সহযোগিতা না করলে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার হুমকি দেন। ভয় পেয়ে অনেকেই বিকাশে টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ভুক্তভোগী প্রাথমিক শিক্ষক বলেন, মোবাইলে কল আসলে ফোন রিসিভ করি। ফোনে তিনি থানা পুলিশের ওসি পরিচয় দেন। প্রথমে তিনি আমার বেতনস্কেলের গ্রেড জানতে চান। গ্রেড ১০ বললে তিনি নিজেকে গ্রেড পঞ্চম বলে আমাকে ভয়ভীতি দেখানোর কথাবার্তা বলতে থাকেন। পরে বলেন আপনার বিকাশ নম্বরে ভুল করে ২০ হাজার টাকা চলে গেছে। আমি পুলিশ সুপারের (এসপির) সামনে বসে আছি। এ টাকা এসপিকে দেওয়ার কথা ছিল। ভুলক্রমে আপনার নম্বরে চলে গেছে। এক্ষুণি একটা নম্বর দিচ্ছি, সেটায় পাঠিয়ে দিন। মেসেজ চেক করতে চাইলে ফোন কাটতে নিষেধ করেন। প্রশাসনকে সহযোগিতা না করলে তার লোক দিয়ে বাড়ি থেকে তুলে আনার হুমকি দেন। ভয়ে বাধ্য হয়েই তাদের দেওয়া নম্বরে বিকাশে ২০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। পরে জানতে পারি প্রতারনার শিকার হয়েছি। এ ঘটনায় তেঁতুলিয়া মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেছি।  

একই ভুল করতে যাচ্ছিলেন উপজেলার সদর ইউনিয়নের আলমগীর হোসেন নামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (অব.)। তিনি বলেন, সোমবার দুপুরে গোসল করতে যাচ্ছিলাম। ওই সময় ফোনটা বেজে উঠলে কল রিসিভ করি। ওপাশ থেকে তিনি বলছেন, থানার ওসি বলছি। আপনার গ্রেড কত? বললাম-১০ম গ্রেড। আমার ৫ম গ্রেড। একজন ৫ম গ্রেড অফিসারের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় এটি জানেন না। আপনার মধ্যে ভদ্রতার কোন ছিটেফোঁটা নেই। কথা শুনে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ওসি আমাকে ফোন দিয়েছেন। কি কারণে ফোন দিয়েছেন এটিই আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আর তেঁতুলিয়া থানার ওসি হিন্দু, উনাকে সালাম দিবো না আদাব দিবো তাও ভেবে পাচ্ছিনা। এদিকে সালাম না দেওয়ায় মহাশয় আমার উপর খুবই ক্ষেপেছেন।

নেটওয়ার্ক সমস্যা বলে আমাকে তিনি বাইরে ফাঁকা জায়গায় যেতে বলেন। আমার ফোন ও লোকেশন ট্র্যাক করা হচ্ছে বলে জানান। যদি প্রশাসনকে সহযোগিতা না করি তাহলে নাকি আমাকে তার লোক দিয়ে তুলে নিয়ে যাবে। ওই ব্যক্তি বলেন, এসপি সাহেবের কাছে পাঠানো টাকা নম্বর ভুলের কারণে আপনার ফোনে চলে গেছে। আপনি মেসেজ পেয়েছেন? আপনার নম্বরে ভুল করে ২০ হাজার চলে গেছে। এসপি স্যার আমার সামনে বসা। আমি যা বলবো তা আগে শুনবেন। আপনি এখন বিকাশের দোকানে যাবেন। আমি নম্বর দিবো ওই নম্বরে ২০ হাজার পাঠিয়ে দোকানদারের শেষ দুটো নম্বর আমাকে জানাবেন। জ্বি-আচ্ছা বলে বাজারের বিকাশের দোকানে গেলাম। বাজারের বিকাশ এজেন্ট বিপ্লব জানালেন এটা হ্যাকারের নম্বর। টাকা পাঠাবেন না। গতকাল এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

আলমগীর হোসেন বলেন, তারা ফোনে এমনভাবে কথা বলছেন ভয় পাওয়ার মতো। ফোন কাটতেও দেয় না। আরেকজনকে দিয়ে টাকা পাঠানোর চেষ্টা করেন। বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। শুনেছি তেঁতুলিয়ার অনেক শিক্ষককে এভাবে ভুয়া মেসেজ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এই প্রতারকচক্র। এরকম অভিযোগ আরও বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের। তারা থানা পুলিশের মাধ্যমে এ প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান।

এ ব্যাপারে তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুজয় কুমার রায় বলেন, এ ধরণের একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। ওই নম্বরে লোকেশন ট্র্যাক করলে দেখা যায় এটি বগুড়ায়। তবে এখানকার মানুষদের সচেতন হতে হবে। কেন তারা এভাবে টাকা দিয়ে দিবে। পুলিশ তো এভাবে ফোন করে না। তার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য থানায় ফোন করা উচিত। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এ ধরণের প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় আনতে সব রকমের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

নাঈম/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়