ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

পরিবারের একমাত্র প্রদীপ হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা

মাসুম লুমেন, গাইবান্ধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ১৯ আগস্ট ২০২৪   আপডেট: ১২:০০, ১৯ আগস্ট ২০২৪
পরিবারের একমাত্র প্রদীপ হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা

পরিবারের একমাত্র প্রদীপ হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মা শাহিনা বেগম। সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র অন্দোলনে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন একমাত্র ছেলে সাজ্জাদ হোসেন সজল। সন্তান হারিয়ে এই পরিবারে চলছে এখন শোকের মাতম।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় গুলিতে নিহত হন সাঘাটা উপজেলার  মুক্তিনগর ইউনিয়নের কৃষক খলিলুর রহমানের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন সজল। তিনি ছিলেন ঢাকা সিটি ইউনিভার্সিটির ছাত্র। 

পরিবার জানায়, ঘটনার দিন সজলকে ফোন করে তার মা বাসায় ফিরে আসতে বলেছিলেন। বলেছিলেন, বাবা তুমি আমাদের বংশের একমাত্র প্রদীপ। তোমার কিছু হলে, আমরা কাকে নিয়ে বেঁচে থাকবো। তার মা ঢাকায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চাকরি করেন। সে সময় সজল তার মাকে বলেন, মা আমার জীবনের বদলে যদি ১০টা ছেলের জীবন বাঁচাতে পারি, সেটাই হবে আমার জীবনের স্বার্থকতা। এটাই ছিল সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে তার মায়ের শেষ কথা। 

এরপর গুলিতে সাজ্জাদ হোসেনসহ তার চার বন্ধু নিহত হন। সাভার-আশুলিয়া এলাকার হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় সজলের খোঁজ করেও সন্ধান পাননি তার মা। পরদিন ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী চারটি লাশের পরিচয় শনাক্তের জন্য মাইকিং করে। সেখানে গিয়ে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া বিভৎস চেহারার সন্তানকে প্রথম দেখায় চিনতে পারেননি তিনি। পরে গলায়  কলেজের আইডি কার্ড দেখে তিনি ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। পরে জানতে পারেন, তাদের চারজনের দেহ আশুলিয়া থানার সামনে একটি গাড়িতে তুলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায় তাদের চার বন্ধুর মৃতদেহ। 

স্থানীয়রা জানান, খুব দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন সজল। কৃষক বাবার সঙ্গে একসাথে দিনমজুরের কাজও করতেন একসময়। লেখাপড়ার প্রবল আগ্রহ এবং মেধা দেখে অনেক কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছিলেন তার বাবা-মা। এখানে সে কলেজ থেকে ভালো রেজাল্ট করে চলতি বছরের শুরুতে ঢাকার একটি বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। তার মা ঢাকার আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে আয়া পদে চাকরি করেন। তাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। 

ছাত্রদের নিয়ে গড়া এই নতুন সরকারের কাছে তাদের দাবি, দ্রুত এই পরিবারের জন্য স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক। 

সজলের মা শাহিনা বেগম বলেন, ঘটনার দিন আমি বারবার তাকে বাড়ি ফিরে আসতে বলেছি। ৫ আগস্ট ফোনে সর্বশেষ ২টা ৪৫ মিনিটে তার সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। বারবার ফোন দেওয়াতে সে বিরক্ত হয়ে বলে, আমার সামনে দুই ভাইয়ের লাশ পড়ে আছে। তারা আরও লাশ ফেলতে চায়। আমার জীবন দিয়ে হলেও যদি আমি ১০টা জীবন রক্ষা করতে পারি, সেটাই হবে আমার জীবনের স্বার্থকতা। তুমি কেন বারবার ফোন দিয়ে বিরক্ত করছো। তুমি কি স্বার্থপরের মতো শুধু তোমার ছেলের কথাই ভাবছো? এটা বলেই সে ফোন কেটে দেয়। সেদিন দুপুর ৩টার পর থেকে তার আর ফোন খোলা পাওয়া যায়নি। ওটাই ছিল ছেলের সঙ্গে আমার শেষ কথা, এই বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। 

এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেননি বলেও জানান তিনি। 

তিনি বলেন, আমার ছেলেকে গুলি করার পরেও তার শরীরে আগুন দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আমি এই হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ বিচার দাবি করছি। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাইবান্ধার সমন্বয়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুয়িদ মুহম্মদ ফাহিম বলেন, দ্বিতীয় স্বাধীনতার এই প্রাক্কালে আমরা আমাদের শহীদ ভাই-বোন এবং আহত ভাই-বোনদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। আহতদের চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গাইবান্ধা শাখার শিক্ষার্থীরা শহীদ ভাইদের পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছে। প্রতি শুক্রবার আহত এবং শহীদ ভাই-বোনেদের জন্য দোয়ার আয়োজন করে আসছি। এছাড়া প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জেলার শহীদ বীর সন্তানদের পরিচিতি এবং সম্মানিত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় একটি সুনির্দিষ্ট তালিকা প্রস্তুত এবং স্মরণিকা প্রতিষ্ঠার জন্যও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

 /টিপু/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়