নারীদের পোশাক নিয়ে আমরা বাধ্য করব না: জামায়াত আমির
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শনিবার বিকেলে কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
“আমাদের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ চালানো হয় যে, আমরা ক্ষমতায় আসলে নারীদের ঘর থেকে বেরুতে দেওয়া হবে না। কিন্তু কথা দিচ্ছি এমন হবে না। মা বোনেরা ঘরেও সুরক্ষিত থাকবে, কর্মস্থলেও সুরক্ষিত থাকবে। তাদের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতে পারবে না।”
শনিবার বিকালে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে এ কথা বলেন দলটির আমির শফিকুর রহমান। মহানবী (স.) নারীদেরকে ‘সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ কাজও করিয়েছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যুদ্ধক্ষেত্রেও নারীদের যুক্ত করেছেন। তাই আমরা তাদের (নারী) আটকে রাখার কে? তারা সামর্থ্য অনুযায়ী দেশের জন্য আত্মনিয়োগ করবে। তাদের পোশাক নিয়ে আমরা বাধ্য করব না।”
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দেশ। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে পাহারা দেওয়া লাগবে না। সম্প্রীতির এই সুন্দর বাগানে মাঝেমধ্যে হুতুম প্যাঁচা ঢুকে পড়ে। বাংলার সুন্দর আকাশে মাঝেমধ্যে শকুনের দৃষ্টি পড়ে।’’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘‘আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে মানুষের কর্ম দেখে মর্যাদা দেওয়া হবে না, মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হবে। চব্বিশের বিজয় এমনিতে এমনিতে আসেনি। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর দিনের বেলায় লগি-বইঠা দিয়ে খুনিরা আদম হত্যায় মেতেছিল। মানুষের মরদেহের ওপর তারা লাফিয়েছিল।’’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে রক্তের হোলি খেলায় মেতেছিল জানিয়ে জামায়াত নেতা বলেন, ‘‘তারা পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং বিচারের নামে জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে। যারা এর প্রতিবাদ করতে এসেছে, তাদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড সাতক্ষীরায় হয়েছে।’’
একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীও ‘ভিআইপি’ উল্লেখ করে ডা. শফিক বলেন, ‘‘তারা তিন দিন পরিষ্কার না করলে আমরা ঘর থেকে বের হতে পারব না। তাই তাদেরও মর্যাদা দিতে হবে। সেই সম্প্রীতির বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই। আমরা জাতীয় স্বার্থে দল ও ধর্মের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে চাই। এই দেশকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ বানাতে চাই। কিন্তু আকাশে কালো শকুন ঘুরছে। এই শকুন মাঝেমধ্যে ফোঁস করছে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। যে যেভাবেই উসকানি দিক, আমরা ফাঁদে পা দেব না।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। ইনসাফ কায়েম করতে চাই। যেখানে মানুষ চাইলেও অধিকার পাবে, না চাইলেও অধিকার পাবে। মা-বোনরা ঘরেও সুরক্ষিত থাকবে, কর্মস্থলেও সুরক্ষিত থাকবে। তাদের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতে পারবে না। আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয় যে, আমরা ক্ষমতায় আসলে নারীদের ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না। কিন্তু কথা দিচ্ছি এমন হবে না।’’
আমরা এমন একটি দেশ চাই যেখানে মসজিদ, মন্দির, মঠ, গির্জা কোনো কিছুই পাহারা দেওয়া লাগবে না উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চমৎকার বাগান। এই বাগানে মাঝে মধ্যে হুতুমপেঁচা ঢুকে পড়ে। এদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।’’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘‘আমাদের দেশে অফুরন্ত সম্পদ। কিন্তু তা কাজে আসছে না। যারাই ত্রাতার দায়িত্বে থাকে, তারাই পকেট ভরে। বিগত সরকার সাতক্ষীরার মানুষের ওপর জুলুম করেছে। খুন করেছে, গুম করেছে। জনগণের অধিকার দেয়নি। তারা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে খুন করেছে। জামায়াতের দুজন আমিরসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশকে খুনের বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। শত জুলুম অত্যাচারের পরও আমরা পালিয়ে যাইনি। দেশকে যারা ভালোবাসে তারা পালাতে পারে না। আমরা এই দেশকে গড়তে চাই। এই দেশের এক ইঞ্চি মাটিও আমরা ছাড়বে না।’’
সম্মেলনে জেলা জামায়াতের আমির শহিদুল ইসলাম মুকুলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জতউল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মুহাদ্দিস রবিউল বাসার, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম, জেলা সেক্রেটারি গাজী আজিজুর রহমান প্রমুখ।
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ/এনএইচ