ইতালি নেয়ার প্রলোভনে লিবিয়ায় নির্যাতন, অর্ধশত যুবক নিখোঁজ
বেলাল রিজভী, মাদারীপুর || রাইজিংবিডি.কম

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দক্ষিণ চরকামারকান্দি গ্রামের কমপক্ষে ৫০ যুবককে ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, দালালচক্রের সদস্যরা প্রথমে ইতালিতে উন্নত জীবনযাপনের লোভ দেখায়। নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নিয়ে আগ্রহী যুবকদের লিবিয়ায় পাঠিয়ে তুলে দেওয়া হয় সংঘবদ্ধ মাফিয়াদের হাতে। এরপর তাদের নির্যাতনের ভিডিও পরিবারকে দেখিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। পরিবার মুক্তিপণ দিতে রাজি না হওয়ায় লিবিয়ায় অনেককে জীবন দিতে হয়েছে।
এ নিয়ে দালাল আবুল কালাম মুন্সীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলেও জামিন নিয়ে তিনি ধরাধোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। তবে জেলা পুলিশ বলছে, দ্রুত দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরেজমিন জানা গেছে, শিবচর উপজেলার দক্ষিণ চরকামার কান্দি গ্রামের মাসুম মোল্লা। এক বছর আগে ভাগ্য বদলের আশায় ১৪ লাখ টাকায় ইতালি যাওয়ার চুক্তি হয় দালাল আবুল কালাম মুন্সীর সঙ্গে। মাসুমকে লিবিয়ায় নিয়ে বিক্রি করে দেয় মাফিয়ার কাছে। পরে আরো ২০ লাখ টাকার জন্য মুখে গামছা বেঁধে নির্যাতন চালানো হয়। বর্তমানের মাসুমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে তাও জানে না পরিবারের লোকজন।
একই গ্রামের সোহেল আহমেদ প্রায় ১৪ মাস আগে ইতালি যাওয়ার জন্য বাড়ি ছাড়েন। তাকেও লিবিয়ায় আটকে রেখে আরো টাকার জন্য নির্যাতন করা হয়েছে। সোহেলকে জীবিত উদ্ধারের জন্য তার পরিবার দালাল চক্রকে দিয়েছেন ৫১ লাখ টাকা।
এই উপজেলার সোহাগ মোল্লাকে লিবিয়ায় জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হতে একই দালালকে ৪৫ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। এরপরও তার সন্ধান মেলেনি।
সোহাগের দুই বছরের সন্তান জন্মের পর থেকে বাবার ছবি দেখে বড় হচ্ছে। বাবাকে আর দেখা হয়নি। শুধু মাসুম, সোহেল বা সোহাগ নয়; অবৈধপথে ইতালি যাওয়ার সময় লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে জিম্মি রয়েছে মাদারীপুরের চরকামার কান্দির এলাকার অর্ধশত যুবক।
স্থানীয় বাসিন্দা বিএম রাসেল জানান, চরকামার কান্দি গ্রামের কমপক্ষে ৫০ জন আবুল কালামের কাছে টাকা দিয়েছিল ইতালি যাওয়ার জন্য। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ যুবকের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ নেই। তারা বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে, তাও জানে না পরিবারের লোকজন। দালালের প্রলোভনে পড়ে ভিটামাটি হারাচ্ছে অনেকে। বিদেশগামী যুবকদের নির্যাতন করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ভিটেমাটি বিক্রি করে টাকা দিয়েও মুক্তি মিলছে না।
নিঁখোজ মাসুম মোল্লার বাবা আব্দুল রহিম বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে আবুল কালাম মুন্সী। আমার ভিটামাটি যা ছিল সব বিক্রি করে তাদের ৫১ লাখ টাকা দিয়েছি। আমার ছেলে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে তাও জানি না। আমরা এর বিচার চাই।’’
নিখোঁজ সোহেল আহমেদের ভাই বিএম রুবেল বলেন, ‘‘আমরা দালালদের বিচার এবং আমার ভাইদের সন্ধান চাই।’’
মাদারীপুরের সিনিয়র আইনজীবী আবুল হাসান সোহেল বলেন, মানবপাচার গুরুতর অপরাধ। এ অপরাধ প্রমাণ করতে পারলে আাসামিদের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। তবে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে আবুল কালাম মুন্সীর বাড়ি গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল নম্বরও বন্ধ রয়েছে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, মাদারীপুরে মানবপাচারের ঘটনা তুলনামুলক বেশি। মানবপাচারের ঘটনায় মামলায় আসামি গ্রেপ্তারে জেলা পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। তবে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি সবাইকে বৈধপথে বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ দেন।
ঢাকা/বকুল