ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সাতছড়ি উদ্যানের আয়তন বাড়লো

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ০৯:২০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সাতছড়ি উদ্যানের আয়তন বাড়লো

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট বন। মাত্র ২৪৩ হেক্টর বা ৬০০ একর। ছোট বন হওয়ায় বন্যপ্রাণীর চলাফেরা ও রক্ষায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিবেচনায় সাতছড়ি সহব্যবস্থাপনা কমিটি ও বন বিভাগের প্রস্তাবে বন পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জাতীয় উদ্যানের ৬শ’ হেক্টর আয়তন বাড়ানোর প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে। ফলে এখন থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের আয়তন হচ্ছে ৮৪৩ হেক্টর। 

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে এসব তথ্য দেন সাতছড়ি বন্যপ্রাণী রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ।

পার্শ্ববর্তী জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে উদ্যানটির আয়তন তিনগুণ বাড়ানো হলো। প্রকৃতিবিদরা বলছেন, এই জাতীয় উদ্যান সম্প্রসারণের ফলে বন্যপ্রাণীরা উপকৃত হবে।

জানা যায়, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের এতসব সমৃদ্ধ বন্যপ্রাণীকে সংরক্ষণ ও বাঁচিয়ে রাখতে সাতছড়ি সহব্যবস্থাপনা কমিটি জাতীয় উদ্যানের আয়তন বাড়ানোর একটি প্রস্তাব পাঠায় বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটে। তৎকালীন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী প্রস্তাবটি বন অধিদপ্তরে পাঠালে অধিদপ্তর থেকে যাচাই বাছাই শেষে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মন্ত্রণালয় সম্প্রতি উদ্যানের আয়তন বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করে।

প্রকৃতির আপন মায়ায় সুনিপুণভাবে বেড়ে ওঠা এই বনটি চুনারুঘাট উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তের গা ঘেঁষে অবস্থিত। মিশ্র চিরসবুজ এই বনটি আঁকাবাঁকা ৭টি পাহাড়ি ছড়া ও উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলায় পরিবেষ্টিত। বনাঞ্চলটি ঘিরে ৯টি চা বাগান রয়েছে। পশ্চিমে সাতছড়ি চা বাগান ও পূর্বদিকে চাকলাপুঞ্জি চা বাগান অবস্থিত।

বনবিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানায়, সাতছড়িতে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী রয়েছে। বড় আকারের স্তন্যপায়ীদের মধ্যে রয়েছে লেজবিহীন উল্লুক। ইতোমধ্যেই সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া এই মহাবিপন্ন উল্লুকের অন্যতম উপযুক্ত আশ্রয়স্থল হিসেবে গণ্য। 

অন্যান্য স্তন্যপায়ীর মধ্যে রয়েছে- বিপন্ন প্রজাতির মায়া হরিণ, কালো কাঠবিড়ালি, খরগোশ, বন্যশুকর, শিয়াল, মেছোবিড়াল, চিতা বিড়াল, বনবিড়াল, গন্ধগোকুল, সজারু, হলদে-গলা মার্টিন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক ও মাংসাশী প্রাণিবিষয়ক গবেষক মুনতাসির আকাশ জানান, এটি খুবই সমৃদ্ধ একটি বন। এখানে অনেক বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। এই বনের আয়তন বাড়ানোর ফলে বন্যপ্রাণীদের থাকার জায়গা বাড়ল, সেই সঙ্গে এদের সংরক্ষণে সহযোগী হিসেবে কাজ করবে এই উদ্যোগ।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে প্রায় ২৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১০ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে। এদের মধ্যে সবুজ বোড়া বা পিট ভাইপার, কিং কোবরা, অজগর, মক ভাইপার, খয়ে গোখরা, শঙ্খিনী, লাউডগা, বাদামি গেছো সাপ, তক্ষক, গিরগিটি, চিতি বন আঁচিল, গুইসাপ, হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপসহ রয়েছে নানান সরীসৃপ।

উভচরের মধ্যে চিত্রিত আঁচিল ব্যাঙ, ভেনপু ব্যাঙ, মুরগিডাকা ব্যাঙসহ রয়েছে ঝিঁঝিঁ ব্যাঙ, সোনা ব্যাঙ, গেছো ব্যাঙ, দুই দাগী বাঁশি ব্যাঙসহ নানা প্রজাতির ব্যাঙ।

বন্যপ্রাণী রক্ষায় সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের আয়তন বৃদ্ধি করায় কৃর্তপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাদারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল। তিনি বলেন- ‘বন রক্ষা পেলে বন্যপ্রাণী বৃদ্ধি পাবে। এখানে কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীল চিন্তা থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

ঢাকা/মামুন/টিপু 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়