ঢাকা     শুক্রবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩২

১০ একর জমি দখল করে মাছের ঘের তৈরির অভিযোগ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৭, ৫ মার্চ ২০২৫  
১০ একর জমি দখল করে মাছের ঘের তৈরির অভিযোগ

ভেকু দিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। ইনসেটে যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রোকন সরদার

শরীয়তপুরের পাটনীগাঁও এলাকায় কৃষকের জমি দখলে নিয়ে মাছের ঘের তৈরির অভিযোগ উঠেছে এক প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। জমি না দেওয়ায় ফসল নষ্টের উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করা হয়েছে বিষ। বিষের প্রভাবে জমির ধান গাছ মরে গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রশাসনের কাছে একাধিকবার জানিয়েও মেলেনি কোনো সুরাহা। 

স্থানীয় ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার পাটনীগাঁও এলাকার কৃষকরা ধানসহ নানা রবি ফসল উৎপাদন করে আসছেন। সম্প্রতি সেই এলাকার ১০ একর ফসলি জমি স্থানীয় প্রভাবশালী ও সদর উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রোকন সরদার ও তার লোকজন দলীয় প্রভাব খাটিয়ে দখলে নিয়ে তৈরি করছে ঘের। 

সম্প্রতি সেই জমির চারপাশ এক্সাভেটরের সাহায্যে খনন করা শুরু হলে কৃষকরা তাদের জমিতে ঘের করার বাধা দিয়ে প্রতিবাদ জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাতের আঁধারে অন্তত ১০ জন কৃষকের ৩ একর জমির ফসল কিটনাশক ছিটিয়ে নষ্ট করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। 

বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ভুক্তভোগী কৃষকেরা। 

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়ে ফসলি জমি রক্ষার পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফসলি জমির চারপাশ খনন করে ঘের তৈরির প্রস্তুতি চলছে। আর ঘেরের মাঝখানে থাকা জমির ধানগাছ কীটনাশকের প্রভাবে মরে গেছে। এছাড়াও মাটি কেটে কিছু জমির ধানগাছ অপসারণ করে ফেলা হয়েছে। 

ভুক্তভোগী কৃষক শফিক শেখ বলেন, “প্রজেক্টের মাঝখানে আমার এক কানি জমি পড়েছে। অনেক কষ্ট করেই জমিতে ধান রোপণ করেছি। মাছের ঘেরে জমি দেইনি বলে রোকন সরদার ও তার লোকজন জোর করে মাটি কেটে আমাদের ফসলে জমিতে বিষ দিয়ে ধানগাছ মেরে ফেলেছে। আমরা ফসল করে খেতে চাই, মাছের ঘের করতে চাই না। যারা এই কাজ করেছে তাদের আমরা বিচার চাই।”

অপর কৃষক ফজল খা বলেন, “কিস্তি উঠাইয়া ধান লাগাইছি। এই জমির ধান দিয়াই আমরা সারা বছর চলি। সেই জমি আজ জোর করে ঘের বানাচ্ছে। আমরা জমি দেই নাই বলে, জমির ফসল সব নষ্ট করে ফেলছে। আমরা আমাদের জমিতে ঘের করতে দিব না।” 

ইয়ারুন বেগম নামের এক ভুক্তভোগী নারী বলেন, “আমাগো জমির ধান সব ওষুধ দিয়া মাইরা ফেলছে। আমরা সেনাবাহিনী, পুলিশ, ওসি, ডিসির কাছে গেছি কিন্তু কোনো জায়গায় বিচাই পাইনি। প্রশাসনকে হাত কইরা তারা জোর কইরা ঘের করতাছে। আমরা আমাদের কৃষি জমি ফেরত চাই।”

এদিকে রোকন সরদারের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বোন শামসুন্নাহারের দাবী করে বলেন, “যারা পুকুর লিজে নিছে তারা বিষ দিছে। আমার ভাই রোকন শুধু ভেকু দিয়ে প্রজেক্টের মাটি কাটার কাজ করে, সে বিষ দেয়নি। এই অভিযোগ মিথ্যা।”

এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন। তিনি বলেন, “যে অভিযোগটি পেয়েছি, সেটি অত্যন্ত গুরুতর। এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনিকভাবে আমাদের সর্বোচ্চ যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভব সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিব। এখানে দুষ্কৃতকারী যারা রয়েছে, যারা এর জন্য দায়ী তাদের ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিব।”

ঢাকা/আকাশ/এস


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়