ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ঈদ উপলক্ষে গোপালগঞ্জে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩০, ৪ এপ্রিল ২০২৫   আপডেট: ১১:৪৮, ৪ এপ্রিল ২০২৫
ঈদ উপলক্ষে গোপালগঞ্জে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

কাশিয়ানীর নোয়াপাড়া বাগিয়া ফুটবল মাঠে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। নির্মল চিত্ত বিনোদন ভাগাভাগি করতে কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া বাগিয়া গ্রামে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। 

এ ঘোড়দৌড় দেখতে ভিড় করেন হাজারো মানুষ। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নগদ অর্থ পুরস্কার।

বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে কাশিয়ানীর নোয়াপাড়া বাগিয়া ফুটবল মাঠে মো. ইদ্রিস শেখের উদ্যোগে এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে নড়াইল, মাদারীপুর, ফরিদপুর, যশোর ও গোপালগঞ্জ থেকে ২৫টি ঘোড়া অংশ নেয়। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা কয়েক রাউন্ডে প্রায় চার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ঘোড়াগুলো। 

এ ঘোড়দৌঁড় দেখতে তীব্র গরম উপেক্ষা করে দুপুর থেকেই নোয়াপাড়া বাগিয়া ফুটবল মাঠে ভিড় করেন নানা বয়সের দর্শনার্থী। মাঠের চারদিকে দর্শকের উচ্ছ্বসিত আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ১০ হাজার দর্শনার্থী হর্ষধ্বনি আর করতালি দিয়ে এ প্রতিযোগিতার অনাবিল আনন্দ উপভোগ করেন। প্রতিযোগীতো দেখতে গোপালগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার শিশু ও নারীসহ হাজার হাজার দর্শনার্থী পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন এই মাঠে। দর্শনার্থীরা ঘোড়দৌঁড় উপভোগের পাশাপাশি এ উপলক্ষে আয়োজিত গ্রামীণ মেলায় কেনাকাটা করেন। মেলায় নানা ধরণের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা।

ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজক মঞ্চ

এ প্রতিযোগিতায় নড়াইলের রবিউল মোল্যার ঘোড়া প্রথম, একই জেলার রাব্বি মোল্যার ঘোড়া দ্বিতীয়, শিমুল শেখের ঘোড়া তৃতীয় ও আরজু মোল্যার ঘোড়া চতুর্থ হয়। পরে বিজয়ী ঘোড়ার মালিকদের হাতে নগদ অর্থ পুরস্কার তুলে দেন আয়োজকেরা।

প্রথম হওয়া ঘোড়ার মালিক নড়াইলের রবিউল মোল্যা (৪৫) বলেন, “এখানে নিজের ঘোড়া নিয়ে প্রতিযোগিতায় এসেছি। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরে খুব ভাল লাগছে। এলাকার মানুষও আনন্দ পাচ্ছে। আমরা পুরস্কার পাওয়ার জন্য নয় মানুষকে আনন্দ দিতে এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকি।”

ঘোড়দৌঁড়ে অংশ নেওয়া অপর ঘোড়ার মালিক শাহাজান শেখ (৪৫) বলেন, “ঈদ পুজাপার্বণসহ গ্রামীণ অনুষ্ঠানে আমরা অংশ নিয়ে থাকি। দেশের বিভিন্ন স্থানে আমরা ছুটে যাই। অংশগ্রহণ করে আমরা আনন্দিত হই।”

ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা উপলক্ষে আয়োজিত গ্রামীণমেলা

ঘোড় দৌঁড় দেখতে আসা মো. রিয়াজ হাসান বলেন, “এখানে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ঘোড়দৌঁড় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আমি প্রতিবছর এখানকার ঘোড়দৌঁড় দেখছি। এ বছরও এসেছি। আমি চাই প্রতি বছর এখানে এমন ঘোড়দৌঁড় প্রতিযোগিতা হোক।”

ঈদে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসা শাহ আলম মিয়া বলেন, “আমি ঢাকা থাকি। ঈদ আসলে বাড়িতে আসি। এবার এসে শুনলাম ঘোড়দৌড় হবে। তাই মেয়েকে নিয়ে দেখতে এসেছি। দেখে খুব আনন্দ পেলাম।”

স্কুল ছাত্রী জাহ্নবী চক্রবর্তী বৃষ্টি বলেন, “এবারই প্রথম ঘোড়দৌঁড় প্রতিযোগিতা দেখলাম। মা-বাবার সাথে দেখতে এসেছি। ঘোড়দৌঁড় দেখে খুব ভাল লেগেছে।”

ঘোড়দৌঁড় দেখতে আসা বিপ্লব চক্রবর্তী বলেন, “এমন আয়োজন করায় আমি আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জানাই। এখন এসব প্রতিযোগিতা হারিয়ে যাচ্ছে। আশা করি, আগামীতেও এমন আয়োজন করবেন।”

আয়োজক কমিটির সদস্য মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আমাদের গ্রামে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা হয়ে আসছে। সারা বছর এই একটি দিনের জন্য সকলে অপেক্ষা করে। ঈদে সকলকে আনন্দ দিতে এ আয়োজন করা হয়েছে।”

ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় আসা দর্শনার্থী

আয়োজক কমিটির অপর সদস্য আবু জাফর মোল্যা বলেন, “ঘোড়দৌড় হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রামীণ খেলাধুলা হারিয়ে যাওয়ায় যুব সমাজ মাদক ও মোবাইল গেমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাই বিনোদন দিতে ও যুব সমাজকে মাদক ও মোবাইল গেম থেকে দূরে রাখতে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।”

ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজক মো. ইদ্রিস শেখ বলেন, “আমাদের দেশ থেকে ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এসব খেলাগুলো ধরে রাখা উচিত। আগামীতে এসব খেলাগুলো ধরে রাখতে আমার সহযোগিতা সব সময় অব্যাহত থাকবে এবং আগামীতেও এমন আয়োজন করা হবে।”

ঢাকা/বাদল/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়