ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৮ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

গোপালগঞ্জে মহাজনী সুদের চাপে শ্রমিকের মৃত্যু, দাবি পরিবারের

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ১ মে ২০২৫   আপডেট: ২২:০৯, ১ মে ২০২৫
গোপালগঞ্জে মহাজনী সুদের চাপে শ্রমিকের মৃত্যু, দাবি পরিবারের

কমল বিশ্বাসের আকস্মিক মৃত্যু স্বজনরা মেনে নিতে পারছেন না, তার স্ত্রী রীনা বিশ্বাস কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। মঙ্গলবার গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাতপাড় ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামে

গোপালগঞ্জের সদর উপজেলায় কমল বিশ্বাস (৫০) নামে এক নির্মাণ শ্রমিক আকস্মিক অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তার পরিবার দাবি করছে, এক মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ নিয়ে মানসিক চাপে হার্ট অ্যাটাক করে তার মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাতপাড় ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামে রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পর বাড়িতে আনার কিছুক্ষণের মধ্যে কমল বিশ্বাসের মৃত্যু হয়।

আরো পড়ুন:

সুদের টাকা পরিশোধে চাপের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ওঠায় গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মীর মোহাম্মাদ সাজেদুর রহমান ও বৌলতলী তদন্ত কেন্দ্রের অফিসার ইনচার্জ আফজাল হোসেন কমল বিশ্বাসের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তারাও মহাজনী সুদে ঋণ নেওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। 

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকালে কমল বিশ্বাস বাড়ি থেকে মাঠে যাওয়ার জন্য বের হন। কিছু দূর যাওয়ার পর পুকুরপাড়ে রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়ে যান। ধরাধরি করে তাকে বাড়ি আনা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে তার মৃত্যু হয়।

কমল বিশ্বাসের স্ত্রী রীনা বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমার স্বামী এবং আমি ৩০০ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে প্রতিবেশী বিধান ভক্তের স্ত্রী বীণা ভক্তের কাছ থেকে ২০২০ সালে মাসিক শতকরা ৩ টাকা সুদে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিই। এরই মধ্যে আমরা সুদ বাবদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি। এরপরও বীণা ভক্ত আমাদের কাছে সুদ-আসল মিলে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দাবি করেন।”

“আমরা সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিতে রাজি হই। গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাতে বীণা ভক্তকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে স্ট্যাম্প ফেরত চাই। এ সময় বীণা ভক্ত আমাদের কাছে আরো ১ লাখ টাকা দাবি করেন এবং বলেন, বাকি ১ লাখ টাকা না দিলে স্ট্যাম্প ফেরত দেবেন না। ওই স্ট্যাম্প দিয়ে আমার স্বামী ও আমার নামে মামলা করে টাকা আদায় করার হুমকি দেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন,” বলেন তিনি।

রীনা বিশ্বাসের অভিযোগ, ‘‘বীণা ভক্তের খারাপ আচরণ ও দেনা পরিশোধ করতে না পারায় আমার স্বামী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। সারা রাত চিন্তায় হা-হুতাশ করেন। বীণা ভক্তের সুদের টাকার চাপ সইতে না পেরে হার্ট অ্যাটাক করে আমার স্বামী মারা গেছেন।’’

স্বামীর মৃত্যুর জন্য বীণা ভক্তের শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।

রীনা বিশ্বাসের অভিযোগের বিষয়ে রাইজিংবিডি ডটকম কথা বলেছে মহাজনী সুদে ঋণ বীণা ভক্তের সঙ্গে। 

তিনি বলেন, ‘‘আমি কমল বিশ্বাসের কাছে সুদ-আসল মিলে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পাই। টাকা দেওয়ার কথা হয়েছিল, টাকা দেননি। তাই আমি স্ট্যাম্পও দেইনি। কমলকে আমি গালাগাল করিনি বা খারাপ আচরণ করিনি।’’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কৌশিক কীর্ত্তনীয়া জানান, কমল বিশ্বাসের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

তদন্ত করে কমল বিশ্বাসের মৃত্যুর কারণ উদঘাটনের দাবি তুলে কৌশিক বলেন, যাতে আর কোনো ব্যক্তি সুদ ব্যবসার জালে জড়িয়ে প্রাণ না হারান, সেই ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই।

গোপালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মাদ সাজেদুর রহমান বলেন, ‘‘মৃত কমল বিশ্বাসের পরিবারের বর্ণনা অনুযায়ী জানতে পারি, তিনি প্রতিবেশী বীণা ভক্তের কাছে সুদের দেনা ছিলেন। টাকা দেওয়ার পরও স্ট্যাম্প ফেরত না পেয়ে মানসিক টেনশনে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন। আমরা মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে মরদেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছি। প্রতিবেদন হাতে পেলে সেই অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ঢাকা/বাদল/বকুল/রাসেল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়