ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রাঙামাটির ভাসমান হাটে ফলের জমজমাট বিকিকিনি

শংকর হোড়, রাঙামাটি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৩, ১৮ মে ২০২৫   আপডেট: ২০:৩৬, ১৮ মে ২০২৫
রাঙামাটির ভাসমান হাটে ফলের জমজমাট বিকিকিনি

রাঙামাটির বনরূপার সমতাঘাটে ফল বিক্রির জন্য আসা নৌকা

ভোর থেকেই রাঙামাটির বনরূপার সমতাঘাটে ভিড়তে শুরু করে একের পর এক ইঞ্জিনচালিত নৌকা। তাতে বোঝাই থাকে বিভিন্ন ধরনের পাকা মৌসুমি ফল। মূলত সকালের হাট ধরতেই তোড়জোড় শুরু করেন ফল নিয়ে ঘাটে আসা বিক্রেতারা। দল বেঁধে উপস্থিত থাকেন ক্রেতারাও। নৌকা ঘাটে ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বিক্রেতা ও ক্রেতাদের মধ্যে দর কষাকষি। 

বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বাংলা সনের দ্বিতীয় মাস জ্যৈষ্ঠ চলছে। এটি মধু মাস হিসেবেও পরিচিত। শনিবার (১৭ মে) ভোরে সমতাঘাটে সাপ্তাহিক হাটে গিয়ে দেখা মিলল, ভাসমান প্রতিটি নৌকা আম, লিচু, আনারসে ঠাসা। আশপাশের পাহাড়ি এলাকা থেকে এসব ফল ইঞ্জিনচালিত নৌকায় সমতাঘাটে নিয়ে এসেছেন চাষিরা। ঘাটে নৌকা আসার সঙ্গে সঙ্গে পাইকারদের সঙ্গে তাদের দর কষাকষির পর্ব শুরু হয়। 

আরো পড়ুন:

ফল চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, রাঙামাটির হাট-বাজারগুলোতে মৌসুমের প্রথমেই আসে আনারস। সাধারণত চৈত্র-বৈশাখের ফল হলেও বর্তমানে রাঙামাটির বাজারে আনারস মেলে শীতের শুরু থেকেই। শীতকালে ব্যাপক পর্যটক সমাগম থাকায় আগাম আনারস বাজারে উঠলেই ভালো দাম পাওয়া যায়। তাই চাষিরা আগাম চাষ করা আনারস হাটে আনেন বিক্রির জন্য। বর্তমানে এই ফলটি জোড়া ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

চৈত্রে তরমুজ আসে হাটে। বৈশাখের অর্ধেক সময় এই ফলটি বাজারে থাকে। তবে, এখন আর নেই। এরপর ধীরে ধীরে বাজারে আসতে থাকে লিচু। বৈশাখের মাঝামাঝি থেকে দেশি ও চায়না থ্রি জাতের লিচু বাজারে আসতে শুরু করে। মৌসুমী লিচু বর্তমানে হাটে পাওয়া যাচ্ছে। 

চাষিরা জানান, এ বছর প্রাকৃতিক নানা কারণে লিচুর ফলন কম হয়েছে। বাজারে দেশি লিচুর দাম তুলনামূলক কিছুটা কম। দেশি লিচু আকারভেদে ১০০টির দাম ৭০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চায়না থ্রি ১০০ লিচুর দাম পড়ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

তারা আরো জানান, এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে পাকা আম বাজারে আসতে শুরু করেছে। বছরের প্রথম পাকা আম দাম বেশি হলেও বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা আম ক্যারেট বা ঝুঁড়িপ্রতি বিক্রি করে থাকেন। সাধারণত কেজি হিসাবে ধরলে দেশি পাকা আম ৫০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে, পাহাড়ের জনপ্রিয় আম রাংগুই এখনো বাজারে আসেনি। কিছুদিনের মধ্যে এই আম বাজার দখল করবে বলে জানান চাষিরা। 

ভাসমান নৌকার বেশিরভাগ বর্তমানে দখল করে আছে দেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। এ বছর কাঁঠাল ভালো উৎপাদন হলেও বাজারে দাম নেই বলে জানান চাষিরা। তারা জানান, পাইকাররা কাঁঠালের দাম ২০-২৫ টাকা বলছেন। এই দামে বিক্রি করলে ঘটে আনা ও শ্রমিক খরচ কোনটি উঠবে না তাদের।

নানিয়ারচর উপজেলা থেকে কাঁঠালভর্তি নৌকা নিয়ে সমতাঘাটে আসা অমর জীবন চাকমা বলেন, “এতদূর থেকে কাঁঠাল নিয়ে সমতাঘাটে আসলাম, কিন্তু দাম পাচ্ছি না। গত সপ্তাহে এক বোট নিয়ে এসেছিলাম, দাম না পাওয়ায় কাঁঠাল নিয়ে ফিরে যাই। এই সপ্তাহে আবারো কাঁঠাল আনলাম, কিন্তু দাম পাচ্ছি না। ২০-২৫ টাকায় পাইকারদের কাছে কাঁঠাল বিক্রি করতে হচ্ছে।”

কাটাছড়ি থেকে আম নিয়ে আসা লাল মোহন চাকমা বলেন, “এই বছর আমের ফলন কম হয়েছে, বেশি গরম এবং বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফলন কম হয়েছে। বাজারে আমের দাম ভালো আছে। লিচুর দামও ভালো পাচ্ছেন বিক্রেতারা।”

সমতাঘাটের বেশিরভাগ মৌসুমী ফল পাইকারা কিনে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যান। প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা হাজির হন মৌসুমী ফল কিনতে। আমির হোসেন নামে চট্টগ্রাম থেকে আসা পাইকার বলেন, “কাঁঠাল কম দামে পেয়েছি। আম ও লিচুর দাম বাড়তি।”

রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৩ হাজার ৬২৮ হেক্টর জমিতে আম, ৩ হাজার ৩৭৩ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল, ১৯ হাজার ৩ হেক্টর জমিতে লিচু ও ২ হাজার ৫৩৭ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ২০০ মেট্রিক টন, কাঁঠালের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৮ হাজার ২০ মেট্রিক টন, লিচুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। আনারস উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৩ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “পার্বত্য অঞ্চলের মাটির বৈশিষ্ট্যের কারণে এখানকার উৎপাদিত ফল স্বাদে ও মানে অনেক ভালো। বিশেষ করে এখানকার কলা ও পেঁপে। এই দুটি ফল সারা বছরই উৎপাদন হয়। এছাড়া রাঙামাটিতে উৎপাদিত লিচু ও কাঁঠাল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে প্রচুর পরিমাণে যাচ্ছে।” 

তিনি বলেন, “এবার লিচুর ফলন কিছুটা কম হয়েছে। অন্যান্য ফলের যে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অর্জিত হবে বলে আশা করছি। বছরে পার্বত্য এলাকা থেকে যে পরিমাণ ফল উৎপাদন হয়, তার আর্থিক মূল্য ৫০০ কোটি টাকা।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়