ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কক্সবাজার সৈকতে দখলের উৎসব, হুমকিতে পরিবেশ-পর্যটন

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১০:৫৮, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কক্সবাজার সৈকতে দখলের উৎসব, হুমকিতে পরিবেশ-পর্যটন

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ। অথচ পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে চলছে দখল ও স্থাপনা নির্মাণের প্রতিযোগিতা। 

সরকার ১৯৯৯ সালে নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সৈকতকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করলেও সেই আইন মানা হচ্ছে না। জোয়ার-ভাটার স্থান থেকে ৩০০ মিটারের মধ্যে দোকান ও স্থাপনা নিষিদ্ধ থাকলেও সৈকতের জনপ্রিয় স্পটগুলোয় বসানো হচ্ছে শত শত দোকান, চেয়ার-ছাতা আর টংঘর।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, এতে শুধু সৈকতের সৌন্দর্য ও নির্জনতা নষ্ট হচ্ছে না, বরং পুরো ইকোসিস্টেম মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।

কক্সবাজারের নাজিরারটেক, সুগন্ধা, কলাতলী, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক থেকে শুরু করে টেকনাফ পর্যন্ত গত এক বছরে নতুন করে শত শত দোকান বসানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের অনুমতি নিয়েই এসব স্থাপনা গড়ে উঠছে। এমনকি বিভিন্ন সরকারি দপ্তরও ইসিএ আইন উপেক্ষা করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে।

লাবণী থেকে কলাতলী পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এলাকাতেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে প্রায় দুই হাজার চেয়ার-ছাতা ও ভ্রাম্যমাণ দোকানের। সম্প্রতি সুগন্ধা পয়েন্টে একদিনে শতাধিক টংঘর বসানোর ঘটনাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বিষয়টি আলোচনায় আসার পর গত মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পরিবেশ মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ ও লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশনা দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, “ইসিএ এলাকায় দোকান বসানো পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনছে।”

এর আগে হাইকোর্টের নির্দেশে চলতি বছরের জানুয়ারিতে সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে দুই শতাধিক অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু দখলদাররা নতুন কৌশলে আবারো দোকান বসাচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিম খান বলেন, “সৈকতের বালিয়াড়িতে দোকান বসানোর সুযোগ নেই। আদালতের নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। প্রশাসনের দেওয়া অনুমতিপত্রে পরিবেশ রক্ষার শর্ত যুক্ত থাকে।’’

অতিরিক্ত ডিআইজি ও ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান আপেল মাহমুদ বলেন, ‘‘যেসব টংঘর বালিয়াড়িতে বসানো হয়েছে সেগুলো মালিকদের নিজ উদ্যোগে সরানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। না সরালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সৈকত দখলমুক্ত করতে আটজন সরকারি কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ দিয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), আমরা কক্সবাজারবাসী, কক্সবাজার সোসাইটি ও কক্সবাজার উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ জানিয়েছে, প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কঠোর আন্দোলনে নামবে তারা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কক্সবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, ‘‘ইসিএ আইন ও হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে সৈকতের বালিয়াড়ি দখলমুক্ত করতে হবে। তা না হলে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পুরো পর্যটনশিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।’’

ঢাকা/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়