খুমেক হাসপাতালে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনে তথ্য সংগ্রহ বা ছবি তুলতে পারবেন না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) হাসপাতালের পরিচালক ডা. কাজী মো. আইনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ নির্দেশনা জারি করা হয়। দুই দিন পর আজ শনিবার (১১ অক্টোবর) বিষয়টি সাংবাদিকেরা জানতে পারেন।
খুমেক হাসপাতালের এই আদেশে সাংবাদিকরা নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। একই সঙ্গে অবিলম্বে এ আদেশ প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছেন।
খুমেক হাসপাতালের অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিচালকের অনুমতি ছাড়া কিছু মিডিয়াকর্মী হাসপাতালের ভেতরে রোগীদের ছবি তুলছেন, যা কাম্য নয়। এতে রোগী এবং চিকিৎসক উভয় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। হাসপাতালে রোগীদের স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এমতাবস্থায় কোনো মিডিয়া ব্যক্তি পরিচালকের লিখিত অনুমতি ছাড়া হাসপাতালের ইনডোর বা আউটডোরে ছবি তোলা বা কারোর সাক্ষাৎকার নিতে পারবেন না।
সম্প্রতি হাসপাতালে ‘বকশিশ না পেয়ে রোগীর অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেয় হাসপাতালটির এক ক্লিনার, এতে ওই রোগীর মৃত্যু হয়’ সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সমালোচনার মুখে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও হাসপাতালে ডাক্তারের ধমকে রোগীর স্বজনের মৃত্যু, ক্যানসার রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পাওয়া, রান্নাঘর থেকে রোগীদের জন্য বরাদ্দ খাবার পাচার, দালালের দৌরাত্ম্যসহ নানা অভিযোগে জর্জরিত এ হাসপাতালটি। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
খুলনায় কর্মরত সাংবাদিকেরা বলছেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই সাংবাদিকরা কাজ করেন। সাংবাদিকরা জনগণের চোখ ও কণ্ঠস্বর। সংবাদ সংগ্রহে অনুমতি চাওয়ার নিয়ম চাপিয়ে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, গণমাধ্যমের কাজের গতি ও স্বাধীনতা রুদ্ধ করা। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনিয়ম আড়ালে থেকে যাবে। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা শুধু তথ্যপ্রবাহই নয়, গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্যও হুমকি। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক ডা. কাজী মো. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘‘ঢাকাসহ দেশের অনেক মেডিকেলে এ নিয়ম চালু আছে। সকল চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
খুলনা প্রেস ক্লাবের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্য সচিব রফিউল ইসলাম টুটুল বলেন, ‘‘এ নিষেধাজ্ঞা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের নামান্তর বলে মনে করি। তারা সরকারকে বিব্রকতকর পরিস্থিতিতে ফেলছেন। অবিলম্বে খুমেক হাসপাতালের পরিচালকের অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।’’
খুলনা টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, খুলনা ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, পেশাজীবী সাংবাদিক সুরক্ষা মঞ্চ, খুলনা টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে এ নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানান হয় এবং সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি করা হয়।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/বকুল