কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য, অতিষ্ঠ মাদারীপুরবাসী
বেলাল রিজভী, মাদারীপুর || রাইজিংবিডি.কম
মাদারীপুর শহরের আমিরাবাদ এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে ইটের আঘাতে ভেঙে যাওয়া একটি বাড়ির জানালার গ্লাস
মাদারীপুর শহরে এখন আতঙ্কের নাম কিশোর গ্যাং। শহরের কলেজ রোড, আমিরাবাদ, বটতলা, জেলখানা, বিসিক শিল্প নগরীসহ কয়েকটি এলাকায় তাদের তৎপরতা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায়ই এক পক্ষের সঙ্গে অপর পক্ষের সংঘর্ষ হচ্ছে। ফলে আহত হচ্ছেন
পথচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দোকান, যানবাহন ও বাড়িঘর।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সন্ধ্যা নামলেই শহরের অলিগলিতে দলবদ্ধভাবে ঘুরে বেড়ায় এসব কিশোর চক্র। তাদের হাতে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র দেখতে পাওয়া যায়। অতি তুচ্ছ কারণেই তারা একে অপরের ওপর চড়াও হয়। অনেক সময় তাদের লক্ষ্যবস্তু হয় সাধারণ পথচারী বা ব্যবসায়ী। শহরের
গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে মাঝে মধ্যেই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয়রা জানান, গত এক মাসে মাদারীপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৫টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি আহত হলেও কোনো মামলা বা অপরাধীদের শাস্তির খবর পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তদের অধিকাংশের বয়স ১৪ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ রোড এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, সন্ধ্যার পর দোকান খোলা রাখাই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। কখন কোথা থেকে কারা এসে
মারামারি শুরু করে বোঝা যায় না। কেউ কিছু বলতে গেলেই তারা হুমকি দিতে শুরু করে।
আমিরাবাদ এলাকা বাসিন্দা এমরান মুন্সি বলেন, “পুলিশকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ফলে কিশোরদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে।”
আমিরাবাদ এলাকার কলেজ রোড এলাকায় দুই কিশোর গ্যাং সম্প্রতি সংঘর্ষে জড়ায়
একই এলাকার অপর বাসিন্দা আফিয়া বেগম বলেন, “কয়েকদিন আগে আমার ছেলে টেবিলে পড়ালেখা করছিল। হঠাৎ করেই জানালার কাচ ভেঙে তার শরীরে লাগে। পরে দেখি দুই কিশোর গ্যাংয়ের মারামারি চলছে। আমরা চাই, আমাদের সন্তনরা যেন নিরাপদ রাস্তায় চলাচল করতে পারে।”
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, “পরিবার ও সমাজের অবহেলা, ইন্টারনেট আসক্তি এবং বখে যাওয়া বন্ধুরাই কিশোরদের এই পথে ঠেলে দিচ্ছে।” তার ভাষ্য, “পরিবার, স্কুল ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা ও সামাজিক পুনর্বাসন কার্যক্রম ছাড়া কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি রোধ করা সম্ভব নয়।”
তিনি বলেন, “স্কুল-কলেজে নিয়মিত কাউন্সেলিং, খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টি ও পারিবারিক বন্ধন জোরদার করলেই কিশোরদের অপরাধে জড়ানো অনেকটা কমে যাবে।”
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমরা কিশোর গ্যাং দমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। তাদের বয়স কম হওয়ায় আইনি জটিলতার কারণে মামলা গ্রহণ বা গ্রেপ্তার করা কঠিন হয়ে পড়ে।”
তিনি আরো বলেন, “পুলিশ নিয়মিত টহল জোরদার করেছে। পাশাপাশি স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে সচেতনতা কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।”
ঢাকা/মাসুদ