ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ছেলে খুনের ঘটনায় মামলা করলেন বিচারক

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২২, ১৪ নভেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৭:৩৮, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
ছেলে খুনের ঘটনায় মামলা করলেন বিচারক

তাওসিফ রহমান সুমন

রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আব্দুর রহমান তার ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে (১৬) খুনের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন। 

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে তিনি মামলার এজাহারে সই দিয়ে ছেলের লাশ নিয়ে জামালপুরে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। পরে রাজপাড়া থানা পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করে।

আরো পড়ুন:

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র গাজিউর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেছেন, “বিচারক নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলার একমাত্র আসামি লিমন মিয়া (৩৪)। তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পুলিশের হেফাজতে হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসা শেষে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।”

আসামি লিমন মিয়ার বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মদনের পাড়া ভবানীগঞ্জ গ্রামে। তার বাবার নাম এস এম সোলায়মান শেখ। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য ও ফুলছড়ি উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। লিমন সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে চাকরি করতেন। ২০১৮ সালে তার চাকরি চলে যায়। এর পর থেকে তিনি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কয়েক বছর আগে বিয়ে করেছিলেন লিমন। তবে, সংসার টেকেনি। বিচারক আব্দুর রহমানের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসীর (৪৪) সঙ্গে তার পূর্বপরিচয় ছিল। তার কাছ থেকে লিমন টাকা নিতেন।

পুলিশের ভাষ্য, টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন লিমন। দিয়েছিলেন প্রাণনাশের হুমকিও। এ নিয়ে গত ৬ নভেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন তাসমিন। মেয়ের বাসায় থাকা অবস্থায় সিলেটের জালালাবাদ থানায় এ জিডি করেন তিনি।

আব্দুর রহমান প্রায় এক বছর আগে শ্রম আদালতের বিচারক হয়ে রাজশাহীতে আসেন। গত মাসে তাকে মহানগর দায়রা জজ হিসেবে পদায়ন করা হয়। রাজশাহী শহরের ডাবতলা এলাকায় ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন তিনি।

বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় ওই বাসায় যান লিমন। সেখানে তাওসিফকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন তাসমিন নাহারও। ধস্তাধস্তিতে হামলাকারী লিমনও আহত হন। পরে তিনজনকেই ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাওসিফকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে তাওসিফের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্ত করেন ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. কফিল উদ্দিন ও একই বিভাগের প্রভাষক শারমিন সোবহান কাবেরী। ময়নাতদন্ত শেষে মর্গের ভেতরে ঢুকে ছেলের মরদেহ দেখেন তার বাবা আবদুর রহমান। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

রামেকের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কফিল উদ্দিন জানিয়েছেন, তাওসিফের ডান উরু, ডান পা ও বা বাহুতে ধারালো ও চোখা অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এই তিনটি জায়গায় রক্তনালী আছে। সেগুলো কেটে গিয়েছিল। এ কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণও ছিল শরীরে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে তাওসিফের গলায় কালশিরা দাগ আছে বলে জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলেছেন, নরম কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধের কারণে এই দাগটি হতে পারে। তবে এটি মৃত্যুর প্রধান কারণ নয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা একই সময়ে হয়েছে।

ময়নাতদন্তের পর কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের রাজশাহী সেন্টারের সদস্যরা রামেক হাসপাতালের নির্ধারিত কক্ষে মরদেহের গোসল করিয়ে দেন। পরে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সেই মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। নিহত তাওসিফ রাজশাহী গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়