ঢাকা     বুধবার   ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার মালিক মির্জা ফখরুল

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ০৮:৪৮, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার মালিক মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রার্থী ও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় তার কৃষিজমি, ব্যাংক হিসাব, নগদ অর্থ, শেয়ার, যানবাহনসহ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছেন। যেখানে স্বামী-স্ত্রী যৌথভাবে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার মালিক বলে হিসেবে দেওয়া রয়েছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা নির্বাচন অফিস থেকে দেওয়া তথ্য মতে এবং প্রার্থীদের হলফনামা অনুযায়ী, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জন্ম ১ আগস্ট ১৯৪৮ সালে। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় তার বয়স হয়েছে ৭৭ বছর। তিনি শিক্ষাগতভাবে এম.এ ডিগ্রিধারী এবং পেশায় রাজনীতিবিদ।

স্থাবর সম্পদ
হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, তার নামে মোট পাঁচ একর জমি রয়েছে। যার অর্জনকালীন মূল্য ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ৭০ শতাংশ ও ২.১৪‌ একর জমি। যার মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ৫১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। পৈত্রিক সূত্রে দোতলা বাড়ির অংশে মূল্য ১০ লাখ টাকা। 

অকৃষি জমিরক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁওয়ে স্বামী স্ত্রীর নামে রয়েছে ১২ শতাংশ জমি, যার মূল্য ৩৯ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এছাড়া ঢাকার পূর্বাচলে তার মালিকানায় রয়েছে পাঁচ কাঠা জমি, যার মূল্য আনুমানিক ৮৫ লাখ ৪ হাজার টাকা। 

ভবন ও আবাসিক সম্পদের তালিকায় ঢাকায় অবস্থিত ১৯৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, যার মূল্য ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ৪ শতাংশ জমি যার মূল্য ৫ লাখ ও মার্কেট শেয়ার ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৮১৪ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।‌ 

এছাড়াও স্বামী-স্ত্রীর নামে আরো অন্যান্য সম্পদের অর্জনকালীন মোট মূল্য ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬৫ হাজার ৮১৪ টাকা উল্লেখ হয়েছে। 

অস্থাবর সম্পদ
ব্যাংক ও আর্থিক হিসাবে দেখা যায়, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে একাধিক হিসাব রয়েছে।

উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডের ঠাকুরগাঁও শাখায় তার হিসাবে রয়েছে ৫ হাজার ২ টাকা। পূবালী ব্যাংক পিএলসি, ঠাকুরগাঁও শাখায় জমা আছে ১ লাখ ৯ হাজার ৮০৪ টাকা ৫০ পয়সা। অগ্রণীব্যাংক লিমিটেডের ঢাকা শাখায় রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৪৭ টাকা ৪৭ পয়সা। মোট ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৫২ টাকা ৯৬ পয়সা।

স্বামী-স্ত্রী যৌথ নামে পূবালী ব্যাংক পিএলসি, গুলশান কর্পোরেট শাখায় জমা রয়েছে প্রায় ২ লাখ ২৪ হাজার ১৩২ টাকা। এক্সিম ব্যাংক লি. গুলশান শাখায় রয়েছে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৪৬৭ টাকা। এছাড়া সিটি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাবে ৩ হাজার ৪৮৫ টাকা রয়েছে। মোট ১১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৪ টাকা। 

এছাড়া তার নিজের নগদ অর্থ আয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৫৮ হাজার ১১৬ টাকা ৭৭ পয়সা। তার স্ত্রীর আছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৩০ টাকা।

বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে তিনি ‘দি মির্জাস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর ১ হাজার ৪২৮টি শেয়ারের মালিক, যার মূল্য প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার ৮০০ টাকা। পাশাপাশি তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র মেয়াদী আমানতে রয়েছে ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৭৫০ টাকা।

অস্থাবর সম্পদের তালিকায় তার মালিকানায় রয়েছে দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি। এছাড়া তার কাছে রয়েছে প্রায় ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী (টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার) যার মূল্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং আসবাবপত্র যার মূল্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। 

এতে অস্থাবর মোট সম্পদের অর্জনকালীন মূল্য ২ কোটি ৫৫ লাখ ৫ হাজর ৭৬৮ টাকা ৭৩ পয়সা উল্লেখসহ উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত একটি দুই নলা বন্দুকের কথাও হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। 

আয়ের উৎস
বার্ষিক কৃষি খাতে থেকে আয় ১ লাখ ৮০০ হাজার, ব্যবসা (হুরমত আলী মার্কেটের শেয়ার হতে আয়) ১ লাখ ৯৭ হাজার ২৩২ টাকা, পেশা (যেমন: শিক্ষকতা, চিকিৎসা, আইন, পরামর্শক ইত্যাদি) ইজাব গ্রুপের পরামর্শক হিসেবে সম্মানী ভাতা ৬ লাখ, চাকরি (দি মির্জাস প্রাইভেট লিমিটেড হতে সম্মানী ভাতা) ১ লাখ ৯৮ হাজার, অন্যান্য যেকোনো উৎস ও ব্যাংক মুনাফা ৭ হাজার ৯০১ টাকা। মোট বার্ষিক আয় ১১ লাখ ৮৩ হাজার ১৩৩ টাকা। 

সব তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হলফনামা অনুযায়ী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ঘোষিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের অর্জনকালীন মোট মূল্য ৩,৯৪,৭১,৫৮২.৭৩ টাকা। তবে হলফনামায় একটি প্রাইভেটকার ও ৩০ ভরি স্বর্ণের মূল্য উল্লেখ করা হয়নি। এই প্রাইভেটকার ও ৩০ ভরি স্বর্ণের আনুমানিক মূল্যসহ তিনি প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার মালিক বলে ধরে নেওয়া যায়।

আইনি তথ্যের অংশে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মোট ৫০টি মামলা দায়ের হয়েছিল। তবে এসব মামলার অধিকাংশই আদালতের আদেশে স্থগিত, প্রত্যাহার অথবা চূড়ান্ত প্রতিবেদন (এফআরটি) গ্রহণের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে। বর্তমানে এসব মামলার কোনোটি তার সংসদ সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত বাধা নয় বলে হলফনামায় ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

হলফনামার শেষ অংশে তিনি সাংবিধানিক ঘোষণা দিয়ে বলেন, তিনি দ্বৈত নাগরিক নন এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ অনুযায়ী জাতীয় সংসদের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে তার কোনো অযোগ্যতা নেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হলফনামায় প্রকাশিত এই সম্পদ, আয় ও আর্থিক বিবরণ ঠাকুরগাঁও-১ আসনের নির্বাচনী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং ভোটারদের জন্য একটি স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করবে।

ঢাকা/হিমেল/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়