গম চাষে আশাবাদী মেহেরপুরের চাষিরা
মহাসিন আলী || রাইজিংবিডি.কম
গম ক্ষেত
মহাসিন আলী
মেহেরপুর, ২৭ ফেব্রুয়ারি : গেল বছরের চেয়ে কম হলেও চলতি রবি মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় গম চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ফলনও ভাল বলে খুশি চাষিরা। তবে ফাল্গুনের প্রথমে ৩ দিনের বর্ষায় দেরিতে চাষ করা অর্থাৎ নামলা গমের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থায় চাষিরা সে ক্ষতিও পুষিয়ে নিয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাব মতে বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট এ জেলায় আবাদ যোগ্য জমির পরিমাণ ৬০ হাজার একশ’ হেক্টর। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি জমিতে ধান চাষ হয়ে থাকে। সম্প্রতি সার-বিষ ও সেচ খরচ বেশির কারণে ধান চাষে লাভ করতে পারছেন না এ জেলার কৃষকরা। তাই এ সবজি ও অন্যান্য ফসল চাষের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক শেখ ইফতেখার হোসেন জানান, এ বছর মেহেরপুর জেলায় ১৭ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৬২ হেক্টর বেশি। তবে গেল বছরে এ বছরের অর্জনের চেয়ে আরো ৪৬৫ হেক্টর বেশি জমিতে গম চাষ হয়েছিল। এ বছর মেহেরপুর সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৮শ’ হেক্টর, গাংনী উপজেলায় ৮ হাজার ৯শ’ হেক্টর ও মুজিবনগরে এক হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে।
প্রথম থেকে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর জেলার চাষিরা গমের আবাদে খুশি। ফলন ভালো হবে এটা তাদের দাবি। গাংনী উপজেলার জুগিন্দা গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান এ বছর তিনি ৬ বিঘা জমিতে গম চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ধান চাষে কৃষক লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না। খরচ বেশি। লাভ হচ্ছেনা। তাই অনেক কৃষক ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তিনি গমের আবাদ থেকে লাভবান হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি আরো বলেন, প্রতিবিঘা জমি থেকে ১২ থেকে ১৫ মন গম উঠলে আর প্রতিমন গম সর্বনিম্ন ৮শ’ টাকা দরে বিক্রি হলেই চাষিরা খুশি।
একই গ্রামের হাসান মাষ্টার বলেন, তিনি বাড়িতে খাবার জন্য এ বছর মাত্র এক বিঘা জমিতে গম চাষ করেছেন। গাছ দেখে ও ফলন ভাল হবে বুঝে তিনি খুশি। তিনি বলেন, নিজের এক বিঘা জমিতে গম চাষে সার-বীজ, সেচ, চাষ ও কাটা-মাড়াই করা পর্যন্ত লেবার সব মিলিয়ে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়।
এদিকে যারা দেরি করে গম করেছেন তারা ফাল্গুনের প্রথম ৩ দিনের বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। গমে শীষ বের হওয়ার সাথে সাথে বৃষ্টি হওয়ায় ফুল ধুয়ে গমে বেশি চিটে হওয়ার আশংকা করছেন চাষিরা। এছাড়া নিচু জমিতে লাগানো গম ক্ষেতে পানি জমে গম গাছ ক্ষেতে কাঁত হয়ে পড়েছে। এতে বেশ কিছু চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে লাভ না হলেও হতাশা হওয়ার কারণ নেই বলে দাবি করেছেন অনেক কৃষক।
সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, মেহেরপুরে গো-খাদ্যের চাহিদা আছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা হেলে পড়া ওই কাঁচা গম গাছ কেটে গো-খাদ্য হিসেবে বিক্রি করে খরচ তুলে নিয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক শেখ ইফতেখার হোসেন আরো বলেন, মাঠে গমের আবাদ ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন গম কাটা-মাড়াই করা পর্যন্ত প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা না দিলে এ বছর গম চাষে কৃষকরা লাভবান হবেন। এছাড়া এ বছর ফাল্গুনের প্রথম বৃষ্টিতে নামলা গমের কিছুটা ক্ষতি হলেও আগাম চাষ করা গমে সুফল বয়ে আনবে।
রাইজিংবিডি / লিমন
রাইজিংবিডি.কম