ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

দেয়াল যেখানে কথা বলে

শেখ তাজুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৬, ২০ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১২:০৯, ২০ অক্টোবর ২০২০
দেয়াল যেখানে কথা বলে

এক নগরীর শান্ত নিবিড় পথ ধরে কিছুক্ষণ হেঁটে গেলে দেখা মিলবে মননশীল এক শিল্পীর রঙ-তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে তোলা অসাধারণ সব শিল্পকর্ম। বলছিলাম, কুয়াশার নগরী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা, যেখানে অজানা লাল ইটের দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হয়েছে অনিন্দ্য সুন্দর সব চিত্রকর্ম। 

ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা তো বটেই, সঙ্গে ব্যস্ত শহুরে জীবন থেকে ক্ষণিকের জন্য ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরাও এসব দৃষ্টিনন্দন দেয়ালচিত্রের সঙ্গে নিজেদের ক্যামেরাবন্দি করে ফেলার সুযোগটাও হেলায় ছেড়ে দিতে চান না।

দৃষ্টিনন্দন এই সব শিল্পকর্ম প্রসংশিত হয়েছে দেশের বাইরেও। টিএসসির ভেতরে বিখ্যাত অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র ‘সং অব দ্য সি’র একটি দৃশ্যের আলোকে আঁকা হয়েছে শৈশবের কল্পনার জগৎ। চলচ্চিত্রের পরিচালক টম মুরেরও চোখ এড়ায়নি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দেয়ালগুলো। স্বয়ং টম মুর ছবিগুলো তার টাইমলাইনে শেয়ার করার কথাও বলেন। 

যাত্রী ছাউনিতে চোখে পড়ে অজানার পথে পাড়ি জমানো অদম্য এক সাইকেলিস্টের। এছাড়া জাকসু ভবন, ট্রান্সপোর্ট, হলের দেওয়াল এমনকি অনন্য কোনো এক শিল্পীর প্রতিভার স্বাক্ষর মিলবে ক্যাম্পাসের বটগাছগুলোতেও। যেন কারও স্বপ্নের রঙে রাঙানো হয়েছে গাছগুলোকেও। 

কোনো না কোনো সংগঠন, বিসিএস কোচিং কখনও বা অমুক হেকিমি দাওয়াখানা গোছের হাবিজাবি পোস্টার মেরে নির্জীব করে রাখা দেয়ালগুলোকে জীবন দিয়েছেন ৪২তম আবর্তনের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ মামুর। সাহায্যকারী হিসেবে সবসময়ই সঙ্গে ছিলেন কিছু সতীর্থ ও ছোট ভাই। 

হাতে রঙের কৌটা ও শরীরজুড়ে রঙ মেখে রাত দুপুরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়ালে ছবি আঁকছেন নিজের মতোই। মধ্য রাতে ক্যাম্পাসে এমন দৃশ্য চোখে পড়লে অবাক হন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। তারা জানেন এটা তাদের প্রিয় মামুর ভাই। সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি তার ছবিতে বিভিন্ন সময় ফুটে উঠেছে প্রতিবাদের ভাষাও। 

মামুর বলেন, ‘দেয়ালগুলো নিজের হাতে রাঙানোর যে আনন্দ, এটা ভাষায় বলে বোঝানো যাবে না। এভাবে বিভিন্ন পর্যটন এলাকাগুলোতে ছবি একে, ঘুরে-ফিরে, খুবই সাধারণভাবে নিজের জীবনটাকে বিষাক্ত সব প্রলোভন থেকে দূরে রেখে নিজের মতো করে কাটিয়ে দিতে চাই। সাধারণভাবে বেঁচে থাকা ছাড়া জীবন থেকে বেশি কিছু আশা করি না।’ 

শুধু জাহাঙ্গীরনগর নয়; প্রিয় ক্যাম্পাসের বাইরেও কাজ করে মুগ্ধ করেছেন দেশের বিভিন্ন জায়গার মানুষকে।

ছবি আঁকা ছাড়াও অন্য বিষয়গুলোতেও মামুরের রয়েছে অসাধারণ প্রতিভা। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পাওয়া অ্যানিমেটেড শর্ট ফিল্মেও তিনি আর্ট ডিরেকশনের কাজ করেছেন। 

কিশোর আলো, রস+আলোয় একজন নিয়মিত ফিচার রাইটার হিসেবে তার অবদান অনন্য। একজন ফ্রিল্যান্সিং আর্টিস্ট হিসেবেও কাজ করে যাচ্ছেন বহুমুখী প্রতিভাধর এই শিক্ষার্থী। কাজ করেছেন পথশিশুদের নিয়ে। পারদর্শী ‘রোল-বল’ খেলাতেও। রোল বল হলো হ্যান্ড বল এবং বাস্কেটবল খেলার নিয়মের সংমিশ্রনে তৈরি এমন একটি আন্তর্জাতিক খেলা, যেটা স্কেটিং সু’পায়ে পরে খেলতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পথশিশু থেকে শুরু করে দোকানদার, কর্মচারী, বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়রের কাছে তার জন্য রয়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসা। ভালোবাসা শুধু তার প্রতিভার জন্য নয়, বরং তার সাদামাটা নিরংহকার জীবনযাপনের জন্য। ক্যাম্পাসের ডেইরি গেট থেকে বটতলা পর্যন্ত তার সঙ্গে হাঁটলেই তার প্রতি এই মানুষগুলোর ভালোবাসা, সম্মান কিছুটা হলেও অনুধাবন করা যায়। 

প্রতিভাধর এই অসাধারণ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে গেলেও রীতিমতো অবাক বনে যেতে হয় তার জীবনাদর্শে। এত সাধারণভাবে জীবনটাকে উপভোগ করা যায়, তাকে না দেখলে বোঝা দায়। সুন্দরভাবে মিশে যেতে পারেন সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে। ভালোবাসেন স্কেটিং করে প্রিয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতে। স্কেটিং করেই ঘুরেছেন বিভিন্ন জেলায়। খেলাধুলা করতে, আড্ডা দিতে, অজানার উদ্দেশ্যে বের হয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।  

জাবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়