ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবসে কর্মক্ষেত্র বাড়ানোর দাবি শিক্ষার্থীদের

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৩, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৬:১৬, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবসে কর্মক্ষেত্র বাড়ানোর দাবি শিক্ষার্থীদের

দোকানে ওষুধ বিক্রি করেন বা ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন যারা, তাদের বলা হয় ফার্মাসিস্ট। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটটা এর চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। খুব কম মানুষই জানেন এর বাইরেও ফার্মাসিস্টদের বহুমুখী ক্ষেত্র আছে। দেশ এগোচ্ছে, এখন সময় আরেকটু বিশদভাবে জানার। 

২৫ সেপ্টেম্বর। বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস। পালিত হয়ে আসছে ২০১০ সাল থেকে। যদিও বাংলাদেশে সেটা হতে সময় লেগেছে আরও ৪ বছর অর্থাৎ বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ২০১৪ সাল থেকে। এর আগে বিশ্বব্যাপী ফার্মাসিস্টদের পালনের জন্য বিশেষায়িত কোনো দিবস ছিল না। এ বছর ফার্মাসিস্ট দিবসের থিমটি চমৎকার- ‘Pharmacy: Always trusted for your health’। বাংলায় আমরা বলতে পারি, ফার্মেসি: আপনার স্বাস্থ্যের প্রতি সর্বদা বিশ্বস্ত’। বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও মতামত তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।

তানজিলুর রহমান

আমাদের দেশের অনেক মানুষ এখনো ফার্মেসি বিষয় সম্পর্কে তেমন জানেনই না। অনেকের ধারণা ফার্মেসিতে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে বুঝি ওষুধের দোকান দেয় সবাই। অনেকে আবার একটু বেশিই এই সাবজেক্টটাকে মাথায় তুলে ফেলেন। আসলে এ বিষয়কে একটা মধ্যবিত্ত সাবজেক্ট বলা চলে। মানে গ্র্যাজুয়েশন করতে করতে আমাদের অনেক স্বপ্ন থাকে কিন্তু দিন শেষে দেখা যায় আমাদের ফার্মাসিস্টদের চাকরির ক্ষেত্র খুবই সামান্য। হ্যাঁ অবশ্য যখন হাতে গোনা কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়তে ফার্মেসি বিষয়টা ছিল, তখন গ্র্যাজুয়েশনের পর চাকরি নিয়ে এত টেনশন করতে হতো না। 

বর্তমানে বেকার ফার্মাসিস্টদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে আসলেই ওষুধের দোকান দিয়েই ফার্মাসিস্টদের চলতে হবে। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাবে ছেলে-মেয়েরাও ধীরে ধীরে ফার্মেসি সাবজেক্ট নিয়ে পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পও তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলবে।

সোহানা ফেরদৌস

পড়াশোনা শুরু করার আগে থেকেই শুনতাম ফার্মেসিতে পড়লে শেষ করার আগেই চাকরি হাতের মুঠোয় থাকবে। কিন্তু যখন পড়াশোনা শুরু করলাম, দেখলাম অধিকাংশেরই ধারণা মেডিসিনের দোকানদার হবো। বিষয়টা ভালো, গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখনো অধিকাংশের চিন্তাভাবনায় অনেক গোড়ামি দেখেছি। ঔষধ নিয়ে জানাটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ এটা এখনো মানুষকে বোঝানো সম্ভব হয়নি। এই যে প্রতিবছর হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট বের হচ্ছেন, দিন শেষে দেখা যাচ্ছে ফার্মাসিস্ট না হয়ে বাধ্য হয়ে অন্য সেক্টরে সুইচ করতে হচ্ছে। 

ইসনাইন জান্নাত ইশা

ফার্মাসিস্টরা ওষুধ ব্যবহার, সংরক্ষণ এবং সরবরাহের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ।  এরা নতুন ওষুধের গবেষণা ও পরীক্ষায়ও অবদান রাখেন। তারা মেডিক্যাল ক্লিনিক, গবেষণা খাতে, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। ডাক্তারের কাছ থেকে শারীরিক অসুস্থতা জানার পর কোন ওষুধ কী পরিমাণ, কীভাবে গ্রহণ করা যায় কিংবা অন্যান্য সাইড ইফেক্ট থাকলে কোন ধরনের ওষুধ কতটুক গ্রহণ করতে হবে এই বিষয়ে সুক্ষ্ম ধারণা পাওয়া যায় একজন ফার্মাসিস্ট থেকে। 

নাজিয়া আফরিন

অচেনা যোদ্ধা ফার্মাসিস্ট। স্বাস্থ্যসেবার অবিচ্ছেদ্য অংশ ওষুধশিল্পের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ফার্মাসিস্টরা। ফার্মেসি পেশায় কর্মরতদের উৎসাহ প্রদান এবং সাধারণ মানুষকে এ পেশা নিয়ে সচেতন করতেই বিশ্বব্যাপী পালিত হয় দিবসটি। মানসম্মত ওষুধ রোগীর কাছে সরবরাহ করতে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যায় এ পেশার মানুষ। নিরলস পরিশ্রম ও চেষ্টার মাধ্যমে রপ্তানিকারক শিল্প হিসেবে ওষুধশিল্পকে রপ্তানিকারক শিল্প হিসেবে সমাদৃত করেছে যে কারিগররা, তারাই অনেক ক্ষেত্রে পর্দার আড়ালেই রয়ে যায়। 

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে হসপিটাল ফার্মাসিস্ট নেই, যা আমাদের জন্য হতাশাজনক। অচেনা যোদ্ধার মতো করোনাকালীন সংকটপূর্ণ অবস্থাতেও তারা সেবা প্রদান করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই প্রত্যাশা শুধু বছরের একটি দিনে নয়, সার্বক্ষণিক ফার্মাসিস্টদের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত হোক এবং স্বাস্থসেবা খাতে সরাসরি গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট যুক্ত করা হোক। তাহলেই তাদের মাধ্যমে আরও বেশি সমৃদ্ধ হবে দেশের স্বাস্থ্যসেবা।

মেহেদী হাসান ভূঁইয়া

একটি দেশের স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণ করার জন্য ডাক্তার নার্সদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে ফার্মাসিস্টদের। অজানা কোনো কারণে বাংলাদেশে সর্বদা ফার্মাসিস্টরা অবহেলিত হয়ে আসছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়। আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ফার্মাসিস্টদের অবহেলার সুযোগ নেই। শুধুমাত্র ওষুধশিল্পে ফার্মাসিস্টদের আটকে রেখে আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরি হয় না। এ জন্য ফার্মাসিস্টদের হসপিটাল ও মডেল ফার্মেসিতে কাজের সুযোগ করে দেবে। হসপিটাল ও কমিউনিটি ফার্মাসিস্টরা যেভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অবদান রাখতে পারবে অথবা স্বাস্থ্যসেবার যে পরিবর্তন আনবে, তা বর্তমানে বাংলাদেশে চলমান পদ্ধতিতে সম্ভব নয়। বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে ফার্মাসিস্টদের আরও সক্রিয়ভাবে কাজে লাগানো হোক, এইটাই এবারের বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবসে আমার চাওয়া।

লামিয়া তাসনিম এশা

ওষুধ শিল্প বর্তমানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিমুখী খাত হলেও এদেশের মূল স্বাস্থ্য খাতে ফার্মাসিস্টরা এখনো অবহেলিত। বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা এখনো পর্যন্ত কেবল বিভিন্ন কোম্পানিতে ঔষধ উৎপাদন ও পরিকল্পনায় তাদের মেধার স্বাক্ষর রাখতে পেরেছেন। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ফার্মাসিস্টদের সরাসরি এদেশের স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। 

আহনাফ বিশ্বাস

ফার্মাসিস্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির অন্যতম একজন সহায়ক। বর্তমানের কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য তারাই দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দেশের বর্তমান স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়গুলো হসপিটাল ফার্মেসি বাস্তবায়নের ক্ষীণ সম্ভাবনাকে যেন আরও ক্ষীণ করে দেয়। বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবসকে সামনে রেখে আমাদের সবাইকে আরও বেশি উদ্যোগী হয়ে দীর্ঘ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে ফার্মেসি পেশার গুরুত্ব অনুধাবনের মাধ্যমে হসপিটাল ফার্মেসি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। 

ববিতা মন্ডল সোমা

ফার্মেসি আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাথে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা। যেখানে ওষুধের আবিষ্কার, ডিজাইন, প্রস্তুতি, মানোন্নয়ন, নিরাপদ ব্যবহার এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। বর্তমানে দেশে ৪০টিরও বেশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ফার্মেসি বিভাগ চালু আছে এবং প্রতি বছর প্রায় ৬০০০ ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তারা তাদের সঠিক কর্মক্ষেত্রে যেতে পারছেন না। আর পারবেই বা কিভাবে, যেখনে ফার্মেসি বলতে আমরা বুঝি ওষুধের দোকানদার কিংবা ওষুধ শিল্পকারখানায় কাজ করা। আর স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্বপূর্ণ এই পেশার প্রতি আমাদের এই অবহেলাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

কোন ভবিষ্যত চিন্তা না করেই অ্যান্টিবায়োটিকের মতো ওষুধগুলো আমরা প্রেসক্রিপশন ছাড়াই সেবন করছি, মানছি না কোনো স্বাস্থ্য উপদেশ। ফলে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্টেন্স ব্যাকটেরিয়াগুলো দিন দিন সক্রিয় হয়ে উঠছে। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি হাসপাতাল, ক্লিনিক অর্থাৎ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িত প্রতিটি ক্ষেত্রেই উচিত ‘হসপিটাল ফার্মাসিস্ট’ চালু করা। এতে একদিকে যেমন ফার্মাসিস্টরা তাদের যোগ্য সম্মান পাবেন, পাশাপাশি আমাদের ভগ্ন স্বাস্থ্য খাতও অনেকটা সবল হবে।

/মাহি/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়