ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

প্রকৃতি ও ব্যাঙ বাঁচাতে অভিনব উদ্যোগ 

সুশীল মালাকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৮, ২ জুন ২০২২   আপডেট: ১৪:৪৯, ২ জুন ২০২২
প্রকৃতি ও ব্যাঙ বাঁচাতে অভিনব উদ্যোগ 

প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গায় রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রাণীর বিচরণক্ষেত্র। তবে দেশব্যাপী  যে উভচর প্রানীটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তা হলো ব্যাঙ। আমাদের প্রকৃতিতে ব্যাঙ খুবই উপকারী প্রাণী। এরা প্রকৃতির খাদ্যশৃঙ্খলে বিশেষ ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে উপকার করে। 

বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বহু প্রজাতির ব্যাঙ। নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৫ সালের লাল তালিকা অনুসারে, বাংলাদেশে ৪৯ প্রজাতির ব্যাঙ আছে। এর মধ্যে ১০ প্রজাতির ব্যাঙ বিপন্ন। 

ব্যাঙ রক্ষার জন্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শেষ শনিবার পালন করা হয় ‘বিশ্ব ব্যাঙ রক্ষা দিবস’। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের "ন্যাচার স্টাডি এন্ড কনজার্ভেশন ক্লাবের" উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ব্যাঙ সুরক্ষার জন্য নিয়েছে অভিনব এক উদ্যোগ। তারা বাংলাদেশের সীমান্ত জেলা হবিগঞ্জের সাতছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্যাঙের মাস্কট প্রদর্শনী, ব্যাঙের ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, পরিবেশ রক্ষা বিষয়ক নাটক, র্যালিসহ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করছে। 

১৪তম বার্ষিক ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস উপলক্ষে গত ২২ শে মে এই ক্লাবের সদস্যরা সকাল ৯ টা থেকেই শুরু করে পরিবেশ ও ব্যাঙ নিয়ে তাদের অভিনব কার্যক্রম। প্রথমে তারা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের প্রধান গেট থেকে ব্যানার নিয়ে শুরু করে র্যালি। 

এরপর শুরু হয় মাসকট প্রদর্শনী। ঠিক ব্যাঙের আদলে তৈরি মাসকট পরে ব্যাঙের মতো অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করছিল সদস্যরা। শিক্ষার্থীরা এই আনন্দ-শিক্ষা পর্বটি দারুণভাবে উপভোগ করেছে। তারা মাসকটের সাথে চিৎকার করে বলছিল একটি স্লোগান: ‘বর্ষাকালে ডাকে ব্যাঙ, ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ঘ্যাঙ’। 

পরিবেশে ব্যাঙের গুরুত্ব নিয়ে একটি নাটিকা পরিবেশন করে ক্লাবের সদস্যরা। স্থানীয় আদিবাসী এবং শিক্ষার্থীরা দারুণভাবে উপভোগ করে নাটিকাটি। এরপর শুরু হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। চিত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙের সাথে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেয়াই ছিল এই পর্বের উদ্দেশ্য। ব্যাঙের দেহের রং, ব্যাঙের ডিম কেমন থাকে, ব্যাঙের ব্যাঙ্গাচি কেমন এসব বিষয় নিয়ে সাজানো হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা তাদের সামনে প্রদর্শিত সাধারণ এবং বিপন্ন প্রজাতির ব্যাঙ, ব্যাঙ্গাচি, ব্যাঙের ডিম দেখে জেনেছে অনেক কিছু। সবশেষে প্রথম তিনজনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সাতছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অঞ্জন কুমার দে এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শায়ের মাহমুদ ইবনে আলম।

'ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস ২০২২'- এর প্রধান আয়োজক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সজীব বিশ্বাস জানান, এ বছরের ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবসে তারা পৌঁছে গিয়েছিলেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একদম প্রান্তিক শিশু-কিশোর, আদিবাসীদের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রকৃতিতে ব্যাঙের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রজননের তাগিদে ব্যাঙকে প্রথম দুটি ধাপ পানিতে কাটাতে হয়। তাই বাড়ির আশেপাশে ঝোপঝাড়, পুকুর, ডোবা, স্যাঁতসেঁতে এবং ভেজা জায়গাগুলোতে এদেরকে সহজেই দেখতে পাওয়া যায়। এরা খাদ্যশৃঙ্খলে বিশেষ ভূমিকা রাখে এবং আমাদের পরিবেশের  ভারসাম্য বজায় রাখে। আমাদের অসচেতনতার ফলে ব্যাঙের সংখ্যা দিন দিন হুমকির দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমরা সীমান্তের এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে শিখিয়েছি প্রাণ-প্রকৃতিকে কিভাবে ভালবাসতে হয়। স্থানীয়দেরকে এই প্রাণীটি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি।’

/তারা/ 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়