জুতা পায়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের প্রভাত ফেরি, পবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
পবিপ্রবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করতে গিয়ে দিনের আলোয় জুতা পায়ে দিয়ে প্রভাত ফেরির নামে ভাষা শহিদদের অশ্রদ্ধা ও অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
২১ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত প্রভাত ফেরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত খালি পায়ে থাকলেও একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে জুতা পায়ে দিয়ে এতে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. ফজলুল হক, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মনিরুজ্জামান, শের-ই-বাংলা হল-২ এর সেকশন অফিসার আব্দুস সালাম, শিক্ষা ও বৃত্তি শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. আতাউর রহমান, সেকশন অফিসার তাজুল রুবেল, সেকশন অফিসার মনিরুজ্জামানকে প্রথম সারিতে জুতা পায়ে দিয়ে প্রভাত ফেরিতে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মতো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবসে এমন কর্মকাণ্ড সরাসরি শহিদদের প্রতি অবমাননা হিসেবে চিহ্নিত করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। তবে এ ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিকবার প্রভাত ফেরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জুতা পায়ে দিয়ে এতে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে।
একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটি মঙ্গলবার শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, প্রভাত ফেরি, কালো ব্যাজ ধারণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। ২১শে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের সময় সঞ্চালক একাধিকবার খালি পায়ে প্রভাত ফেরিতে অংশগ্রহণ করার অনুরোধ করলেও বেশ কয়েকজনের জুতা পায়ে অংশগ্রহণকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন সংশ্লিষ্টরা। একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে জানিয়েছেন, শিক্ষকের মতো দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে জাতীয় দিবসে যদি এ ধরণের কর্মকাণ্ড ঘটে তবে কি শিখবে অন্যরা?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের এক শিক্ষক জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এ ধরনের অবমাননা শুরু থেকেই হয়ে আসছে। ভাষা শহিদদের প্রতি শিক্ষকের মতো দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে এরকম কর্মকাণ্ড কখনোই কাম্য নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের বয়োজ্যেষ্ঠ প্রফেসর ড. ফজলুল হককে জুতা পায়ে প্রভাত ফেরিতে অংশগ্রহণের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমি অনেক আগে থেকেই কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে যেয়ে ভাষা শহিদের স্মরণ করে আসছি। তবে আজ যেটা হয়েছে সেটা একদমই ঠিক হয়নি, আমার কিছু শারীরিক সমস্যা রয়েছে যার কারণে খালি পায়ে হাঁটা কিছুটা কষ্টসাধ্য, এজন্যই বাধ্য হয়ে জুতা পরেছি।
শের-ই-বাংলা হল-২ এর সেকশন অফিসার আব্দুস সালাম অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, এটা আমার জন্য অনেক বড় একটি অন্যায় হয়েছে, কোনোভাবেই জুতা পায়ে দিয়ে এ শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে যাওয়া উচিত হয়নি। ভবিষ্যতে এ বিষয়টির ব্যাপারে সতর্ক থাকবো।
শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের প্রভাত ফেরিতে জুতা পায়ে অংশগ্রহণের অভিযোগ থাকলেও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে দিনের অপর প্রভাত ফেরিতে চিত্রটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের খালি পায়েই প্রভাত ফেরিতে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে এর আগেও বিভিন্ন জায়গায় কথা বলেছি। অনেকে এমন একটি জাতীয় বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন না বলেই এ ঘটনা ঘটেছে। যদিও অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা রয়েছে, কিন্তু শহিদদের স্মরণে এমন একটি আয়োজনে সবারই সতর্ক থাকা উচিত।
আনিসুর রহমান/ফিরোজ