ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁসে মেধার অবমূল্যায়ন, যা ভাবছেন শিক্ষার্থীরা

সানজিদা জান্নাত পিংকি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪২, ২৯ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৮:৪৩, ২৯ জুলাই ২০২৪
বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁসে মেধার অবমূল্যায়ন, যা ভাবছেন শিক্ষার্থীরা

অবকাঠামোর ধোঁয়াশা, সঙ্গে অস্থিমজ্জায় দূর্নীতি। সম্প্রতি পিএসসির প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠার পর এমনই মনে হয়েছে। জানান দিচ্ছে ‘এ দেশ, সব হবার দেশ!’ নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগ্যতাসহ বাকিদের উপর এসেছে চরম অনাস্থা। সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহের এসব কর্মকাণ্ড বিমূঢ় করছে সবাইকে, ভাবিয়ে তুলেছে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদেরই। বিসিএসে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে উঠা অভিযোগের বিষয়ে রাইজিংবিডির কাছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। 

বিসিএস ছিল ভরসার নাম

বাংলাদেশের তরুণদের কাছে এতদিন পর্যন্ত সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে একটি ভরসার নাম ছিল বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) পরিচালিত বিসিএস পরীক্ষা। লাখো তরুণ-তরুণী বছরের পর বছর প্রস্তুতি নিয়ে এ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সাফল্যের মুখ দেখতে পান না। সম্প্রতি প্রশ্ন ফাঁস কাণ্ডের পর তারা তাদের শ্রম ও মেধা হয়তো বাংলাদেশের প্রশাসনিক সেক্টরে আর বিনিয়োগ করতে চাইবে না। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিকট ভবিষ্যতে সুদক্ষ আমলা ও কর্মকর্তা সংকটে পড়তে পারে। সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে পিএসসির প্রতি তরুণদের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা।

বর্তমানে যে সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং পরবর্তী পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও বিতরণের সময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বজায় রাখা প্রয়োজন। বিপিএসসির অভ্যন্তরীণ সব অর্থনৈতিক কাজে স্বচ্ছতা বজায় রাখা সময়ের দাবি। তবেই হয়তো দেশের তরুণরা বাংলাদেশে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তাদের ভরসা ফিরে পাবে।
-লেখক: রেদোয়ান আহমেদ, শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আস্থায় ফাটল ধরেছে

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি)  দীর্ঘদিন ধরে দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে পিএসসির অধীনে বিসিএস ক্যাডার এবং নন-ক্যাডারের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে। পিএসসির মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে এমন প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন নিয়ে শুধু প্রতারণা নয়, এটি রাষ্ট্রের প্রতি আস্থায় ফাটল সৃষ্টি করেছে।

বিসিএস পরীক্ষা লাখো মেধাবী তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন, যা তারা নিজেদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জন করতে চান। সাম্প্রতিক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে। যারা তাদের স্বপ্ন পূরণের আশায় বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেন, তাদের জন্য এ ধরণের ঘটনা হতাশাজনক। সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যাতে পিএসসির প্রতি আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য দেশের মেধাবীদের জন্য নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছ নিয়োগ নিশ্চিত করতে প্রশ্ন ফাঁস রোধে শক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই হবে। প্রমাণসাপেক্ষে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের দ্রুত শাস্তির আওতায় নেওয়া উচিত। তরুণদের স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম নির্মূল জরুরি।
-লেখক: জেসিকা শেখ জেবা,শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়

যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ নিশ্চিত হবে

পিএসসির প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তরুণ চাকরিপ্রার্থীর মনে হতাশার ঝড় তুলেছে। সাধারণের বিশ্বাস, পাবলিক পরীক্ষায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ নিশ্চিত হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনা সেই বিশ্বাসকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে শুধু পিএসসির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্বপ্নের চাকরিতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার আশায়। কিন্তু প্রশ্ন ফাঁসের মতো অনৈতিক কাজ সেই স্বপ্নের পথে একটি বড় বাঁধা সৃষ্টি করেছে। মনে হচ্ছে, এখন যোগ্যতার চেয়ে অনৈতিক পথে সুযোগ নেওয়ার প্রবণতাই জয়ী হবে।

প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। একই সঙ্গে পিএসসিকে স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে এই গুরুতর বিষয়ের সমাধান করে মেধাবীদের নিয়োগ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এভাবেই পিএসসির মর্যাদা রক্ষা হবে এবং চাকরিপ্রার্থীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে। মেধা ও পরিশ্রমের মূল্য অস্বীকার করে অনৈতিক পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কখনোই সফল হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে দরকার ন্যায়সঙ্গত সমাধান।
-লেখক: মো. রাকিবুল হাসান নিরব, শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ভবিষ্যৎ এখন দায়িত্বশীলদের হাতে মুষ্টিবদ্ধ

বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিশ্চিত ভবিষ্যৎ প্রয়োজন। আর বেশিরভাগ শিক্ষার্থী স্নাতকে ভর্তি হয়েই নিশ্চিত ভবিষ্যতের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেয় বিসিএস নামক সোনার হরিণের জন্য। প্রতি বছর লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভিড়ে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। চার-পাঁচবার পরীক্ষা দিয়েও কোনো ভালো সংবাদ আসে না। তারপরও আমরা হাল ছেড়ে দেয় না। কারণ এত প্রশ্ন ফাঁসের ভিড়ে নিশ্চিত থাকি যে, পিএসসিতে অন্তত এমন কিছু হবে না। এখানে মেধার মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে দেখা গেল, হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন প্রশ্ন ফাঁসের সংবাদেই ধুলিসাৎ।

শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন, মেধা দিয়ে যুদ্ধ করেই পূরণ করবো মা-বাবার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নগুলো নিছক টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেল! প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় অনেকেই শুধু অবাকই হননি, সরকারি চাকরি না করারও জেদ ধরেছেন।

দীর্ঘ সময়ের বাছাই প্রক্রিয়ায় অনেকেই যুক্ত হতে চান না। এখন আবার যুক্ত হলো প্রশ্ন ফাঁস। তাহলে বলা যায় , তরুণদের ভবিষ্যত এখন কয়েকজন মানুষের হাতে মুষ্টিবদ্ধ। তরুণদের হতাশ হয়ে আত্মহত্যার জন্য কারা দায়ী? টাকা নেই, আছে পরিশ্রম আর মেধা। আবার সেই মেধার নেই মূল্যায়ন। তাহলে কোথায় আমাদের ভবিষ্যৎ?
-লেখক: আলিফা ইয়াসমিন, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

/মেহেদী/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়