ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

উপাচার্যের পদত্যাগসহ ১০ দাবি চবি শিক্ষার্থীদের

চবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৪, ৬ আগস্ট ২০২৪  
উপাচার্যের পদত্যাগসহ ১০ দাবি চবি শিক্ষার্থীদের

দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা তুমুল সমালোচিত স্বৈরাচারী সরকার শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে এক ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। বিজয়ের মহানন্দে মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। এসময় আন্দোলনের সময় নীরব ও পক্ষপাতমূলক ভূমিকা রাখায় চবি উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট মোড়ে একত্রিত হতে থাকে বিজয়ী শিক্ষার্থীরা। তারপর সেখান থেকে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ১ নম্বর গেইটে এসে আবারও জিরো পয়েন্ট মোড়ে অবস্থান করেন তারা। এ সময় তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও স্থানীয় জনগণ। 

চবির সমন্বয়কবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর তারা ১০ দফা দাবি জানিয়ে অনতিবিলম্বে এগুলো কার্যকর করার আহ্বান জানান। তাদের দাবিগুলো হলো-

১. বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।

২. বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ভর্তি ফি, পরীক্ষা ফি’সহ যাবতীয় আর্থিক লেনদেন এবং পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে প্রকাশ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। 

৩. আবাসিক হলগুলোতে অনুষদ ভিত্তিক বরাদ্দ দিতে হবে। কোনো প্রকার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ  চলবে না।

৪. কোনো বিভাগে সেশনজট থাকবে না। প্রতি বছর নভেম্বর মাসের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে হবে, চূড়ান্ত পরীক্ষার তিন সপ্তাহ পূর্বে টিউটোরিয়াল ও প্রেজেন্টেশন শেষ করতে হবে এবং চার সপ্তাহ পূর্বে পিএল দিতে হবে। মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৭৫ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।

৫. শাটলে পাওয়ার কার যুক্ত করতে হবে। আমাদের ডেম্যু ট্রেন ফিরিয়ে দিতে হবে এবং ট্রেনের সিডিউল বৃদ্ধি করতে হবে।

৬. বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তার্জাতিক র‌্যাঙ্কিংয়ে স্থান দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা ও প্রবন্ধ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

৭. চাকসু চালু করে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমন্বয় ও মেলবন্ধনের সেতু হিসেবে শহরে টিএসসি চালু করতে হবে।

৮. ক্লাসে শিক্ষক যথাসময়ে ঢুকবেন এবং নির্ধারিত সময়ে ক্লাস শেষ করে চলে যাবেন। কারণবশত ক্লাস নিতে না পারলে রাতের মধ্যে শ্রেণি প্রতিনিধিদের জানিয়ে দিবেন। 

৯. ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। জিরো পয়েন্ট ও ২ নম্বর গেইটে নিরাপওা জোরদার করতে হবে।

১০. রক্তে অর্জিত স্বাধীনতায় কারও স্বেচ্ছাচারীতা মেনে নেওয়া হবে না। প্রতিটি বিভাগে একটি করে অভিযোগ বক্স থাকবে।

সমাবেশে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, আমরা সামান্য কোটা থেকে আজ গোটা রাষ্ট্র সংস্কার করার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের এ অভাবনীয় বিজয়ে শহিদ ও আহত ভাইদের স্মরণ করছি; যাদের আত্মত্যাগে আজ আমরা স্বাধীন। আবারও ইতিহাস হলো, কোনো স্বৈরাচারী সরকার ছাত্রদের আন্দোলনে টিকতে পারে না।

তিনি বলেন, আমাদেন এক দফা পূরণ হয়েছে। কিন্তু নয় দফা এখনো পূরণ হয়নি। তাই নয় দফা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথেই আছি। পৃথিবীর কোনো শক্তি শিক্ষার্থীদের পিছু হটাতে পারবে না।

চবির অন্যতম সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, হাজারো শহিদের বিনিময়ে অর্জিত এ বিজয় শুধু শিক্ষার্থীদের নয়; এ বিজয় সন্তানহারা সব মায়েদের, সব সাহসী বোনদের, দেশের মুক্তিকামী আপামর জনতার। তবে মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। তাই প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা রক্ষা করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণি প্রতি আমাদের সংগ্রাম নয় আমাদের সংগ্রাম নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের সংগ্রাম হচ্ছে ভুল সিস্টেমের বিরুদ্ধে। সুতরাং যারাই সিস্টেমের বাহিরে যাবে, তাদের বিরুদ্ধেই হবে আমাদের সংগ্রাম। আমরা শুধু স্বৈরাচার ও তার দল থেকে মুক্তি পাইনি; আমরা মুক্তি পেয়েছি দেশের উপর চরম আধিপত্য বিস্তারকারী ভারত থেকে। 

সমাবেশে শিক্ষার্থীদের ‘পালাইছে রে পালাইছে, খুনি হাসিনা পালাইছে’, ‘স্বাধীন স্বাধীন, বাংলাদেশ স্বাধীন’, ‘হইহই রইরই, ছাত্রলীগ গেলি কই’, ‘আমার ভাই শহিদ কেন, জবাই চাই দিতে হবে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আমার সোনায় বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’সহ বিভিন্ন বিজয় স্লোগান দিতে দেখা যায়।

/মিজান/মেহেদী/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়