ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ছাত্রী হলের সিট বরাদ্দে নির্বিকার চবি প্রশাসন

এম. মিজানুর রহমান, চবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ০০:৫৮, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ছাত্রী হলের সিট বরাদ্দে নির্বিকার চবি প্রশাসন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক হলগুলোতে দীর্ঘ ৭ বছর পর মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শুধু ছাত্র হলগুলোতে। ছাত্রী হলগুলো রয়েছে বহাল তবিয়তে।

জানা গেছে, ছাত্রী হলগুলোতে খালি থাকা অল্পকিছু আসনে বরাদ্দ দিলেও কার্যত আগের আবাসিকতা নিয়েই হলে থাকছেন ছাত্রীরা। এ নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। সম্প্রতি ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা হল’ এর নামফলক ভাঙতে যাওয়ার ঘটনায় ছাত্র, শিক্ষক ও সাংবাদিকের উপর ওই হলের কিছু ছাত্রী হামলা করে। এতে অভিযোগটি আরো জোরাল হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রী হলগুলোতে নতুনভাবে আসন বরাদ্দ না দেওয়ায় নিষিদ্ধ সংগঠনের অনুসারীরা এখনো অবস্থান করছেন। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পতিত সরকারের নামফলক ভাঙতে গেলে তারা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। এসব ছাত্রীরা এখনো হলে প্রভাব বিস্তার করে চলছেন। মেধার ভিত্তিতে ছাত্রী হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া হলে যোগ্যরা আবাসিকতা পাবেন। এজন্য তারা নতুনভাবে আসন বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জিন্নাতুন নিসা বলেন, “৫ আগস্টের পর ছাত্রদের হলগুলোতে আসন বরাদ্ধ দিলেও ছাত্রী হলগুলোতে আসন খালি করা হয়নি। বরাদ্দ দেওয়ার কোন উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। পূর্বে যারা ছিলেন, তারাই স্বাচ্ছন্দ্যে আছেন। পূর্বপরিচিতির মারফতে অনেকের আসনের প্রয়োজন না থাকলেও বরাদ্দ পেয়েছেন। ফলে যাদের আর্থিক অবস্থা নাজুক এবং পরিবারের অবস্থানও দূরে, তারা আসন পাচ্ছেন না।” 

তিনি আরো বলেন, “অনেক ছাত্রীর পড়াশোনা শেষ হলেও তারা সিট দখল করে আছেন। এতে নবীনরা বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই ছাত্রী হলেও সঠিক আসন বরাদ্দ জরুরি। ৫ আগস্টের পরপরই যদি ছাত্রী হলের সমস্যা সমাধান হতো, তাহলে এখন শিক্ষক লাঞ্চনার মতো সমস্যাগুলো এড়ানো যেত।”

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী সানু আক্তার নদী বলেন, “মেয়েদের ক্ষেত্রে পুরো ভিন্নভাবে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৫ আগস্টের পূর্বে এমন অনেক শিক্ষার্থী ছিলেন, যারা রাজনৈতিক দলের প্রভাবে বা রেফারেন্সে সিট পেয়েছিলেন। তবে অফিসের সব নিয়ম মেনে হল প্রশাসন তাদের আবেদনের মাধ্যমে সাময়িক থাকার অনুমতি প্রদানের মাধ্যমে বৈধতা দেয়। আগের সবাইকে রেখে কিছু সিট খালি থাকা সাপেক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হয়।”

রেফারেন্সে সিট দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “সিট বরাদ্দের পর আমাদের হাউজ টিউটররা ব্লক পরিদর্শনের মাধ্যমে অনেকগুলো খালি সিটের তালিকা করেন। কিন্তু বরাদ্দ না দিয়ে আগের মতই রেফারেন্সে মেয়েদের হলে তুলছেন। ফলে আমরা যারা অপেক্ষমাণ তালিকায় ছিলাম, তাদের আর সুযোগ হচ্ছে না।”

তিনি আরো বলেন, “একদিকে আবাসন সংকট, অন্যদিকে অনিয়ম দিন দিন বাড়ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। আমরা চাই দ্রুত এর সমাধান হোক এবং নিয়ম মেনে সঠিকভাবে সিট বরাদ্দ দেওয়া হোক।”

ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী গাজী ইমরান বলেন, “দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর ছাত্র হলগুলোতে নতুনভাবে সিট বরাদ্দ দিলেও ছাত্রী হলে অল্পকিছু ছাড়া তেমন বরাদ্দ হয়নি। এমনটা হওয়া ঠিক হয়নি। ছাত্রীদের মধ্যে যারা স্বৈরাচারের দোসর, তারাও এখনো হলে থাকছেন। ফলে শিক্ষক, সাংবাদিকের উপর যে হামলা হয়েছে, তাতে তারা সম্পৃক্ত থাকতে পারে। ছাত্রী হলেও মেধা, দূরত্ব ও আর্থিক বিবেচনায় সিট বরাদ্দ দেওয়া হোক।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় আসন বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, “মানবিক কারণ বিবেচনায় যারা আগে থেকেই হলে অবস্থান করছিল, তাদের অবস্থান ঠিক রেখে খালি থাকা আসনগুলোতে নতুন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যারা আগে থেকেই হলে ছিল, তাদের তো আমরা বের করে দিতে পারি না। ৬ মাস পরপর নতুন করে আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে।”

ঢাকা/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়