আমাদের মুখের হাসিটাই মায়ের তৃপ্তি
মো. মোস্তাফিজুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম
মা, এই ছোট্ট শব্দটার মাঝে যেন পুরো পৃথিবীর মমতা আর ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। আমার জীবনে মা শুধুই একজন অভিভাবক নন, তিনি আমার প্রথম শিক্ষক, সবচেয়ে আপন বন্ধু, আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার উৎস।
ছোটবেলায় যখন ভয় পেতাম, মা-ই ছিলেন সেই আশ্রয়; যার কোলেই সব ভয় মিলিয়ে যেত। রাতে ঘুমানোর আগে তার মুখে শোনা গল্পগুলো আজও স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে। তিনি শুধু রান্না-বান্না বা সংসারের কাজেই ব্যস্ত থাকতেন না, আমার পড়াশোনার প্রতিটি ধাপে ছিলেন পাশে। ক্লাসে খারাপ রেজাল্ট করলেও মা কখনো বকা দেননি। বরং বলতেন, “চেষ্টা করে যা, আমি আছি।”
মায়ের ভালোবাসা নিঃস্বার্থ। তিনি কখনো নিজের জন্য কিছু চাননি। যখন আমাদের বাসায় ভালো কিছু রান্না হতো, মা সবসময় বলতেন, “তুই আগে খা, আমি পরে খাচ্ছি।” কিন্তু আমরা জানতাম, মা শেষ পর্যন্ত খেতেন না, শুধু আমাদের মুখের হাসিটাই তার তৃপ্তি।
মা কখনো ক্লান্ত হন না। রাত জেগে আমার জ্বর পাহারা দেওয়া থেকে শুরু করে পরীক্ষার আগের রাতে আমার পাশে বসে সাহস দেওয়ার মতো হাজারো কাজ করেছেন নিঃশব্দে। কখনো কোনো দাবি করেননি, শুধু ভালোবাসা আর আশীর্বাদ দিয়ে গেছেন প্রতিটি দিনে।
আজ আমি যেটুকু মানুষ হয়েছি, তার পুরো কৃতিত্ব আমার মায়ের। তিনি আমাকে শিখিয়েছেন মানুষ কিভাবে বিনয়ী হয়, কিভাবে কষ্টের মাঝেও হাসতে হয়, আর কিভাবে অন্যের জন্য বাঁচতে হয়। মা যেন জীবনের সব সমস্যার এক নির্ভরযোগ্য সমাধান।
মাকে নিয়ে লিখে শেষ করা যায় না। তিনি আকাশের মতো বিস্তৃত, সাগরের মতো গভীর। আমার প্রতিটি স্বপ্ন, সাফল্য আর হাসির পেছনে যে মানুষটি আছেন, তিনি আমার মা।
মা হারানোর বেদনা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মা নেই—এই কথাটা বলাটা যতটা সহজ, মেনে নেওয়াটা ঠিক ততটাই কঠিন। আজ পাঁচ বছর হয়ে গেছে মা নেই আমাদের মাঝে। কিন্তু মা যেন প্রতিটি নিঃশ্বাসে, প্রতিটি মুহূর্তে আমার সাথেই আছেন।
মায়ের মৃত্যুর পর আমার জীবনটা বদলে গেছে। ছোট ছোট সুখের মুহূর্তগুলো এখন কেমন যেন ফাঁকা লাগে। ঈদের সকালে মায়ের হাতের সেমাই, শীতের রাতে তার গরম কম্বলের নিচে ঢুকে ঘুম—সব কিছু আজ শুধু স্মৃতি।
তবু মা প্রতিনিয়ত আমার মনে কথা বলেন। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে যখন দ্বিধায় পড়ি, তখন যেন কানে ভেসে আসে মায়ের শান্ত কণ্ঠ, “নিজের উপর বিশ্বাস রাখ, তুই পারবি।”
মা শুধু জন্মদাত্রী নন, তিনি ছিলেন আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তার জীবনসংগ্রাম, সবার প্রতি ভালোবাসা আর নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে মানুষ হতে হয়।
আজ মাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে চোখ ভিজে আসে। কিন্তু হৃদয়ের গভীরে জানি—যতদিন আমি বেঁচে থাকব, মা আমার ভেতরেই বেঁচে থাকবেন। মা নেই, কিন্তু তার ভালোবাসা, শেখানো প্রতিটি কথা, প্রতিটি স্পর্শ আমার জীবন গড়ার প্রতিটি ধাপে সাথী হয়ে আছে। আমি জানি, দূর আকাশের তারা হয়ে মা এখনো আমাকে দেখছেন, আমার প্রতিটি সাফল্যে মৃদু হাসছেন।
লেখক: শিক্ষার্থী, শিক্ষাবর্ষ ২০১৯-২০, ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা/মেহেদী