টিটিসির অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য করলেন শিক্ষার্থীরা
লালমনিরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের (টিটিসি) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহীন আক্তারকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (৩ আগস্ট) সকালে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শেষে জোরপুর্বক পদত্যাগপত্রে অধ্যক্ষের স্বাক্ষর নেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হাতীবান্ধা উপজেলায় টিটিসি প্রতিষ্ঠা করে সরকার। পাঁচটি ট্রেডে লেখাপড়া করছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান শাহীন আক্তার। তার দায়িত্বের পর থেকে নানা দুর্নীতি আর অনিয়মে ভরে উঠেছে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।
শিক্ষার্থীদের নিম্নমানের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করে সরকারি অর্থ আত্নসাৎ করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহীন আক্তার। এতেই শেষ নয়, তার মনপুত অফিস সহায়ক আমিনুলকে দিয়েছেন হিসাব শাখার দায়িত্ব। সেই অফিস সহকারী বসবাস করেন শিক্ষকদের কোয়াটারে।
এসব অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে শিক্ষার্থীরা গত সপ্তাহে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুর্বে বিতরণ করা নিম্নমানের শিক্ষা উপকরণ ইউএনও'র নির্দেশে ফেরত নিয়ে ভালমানের উপকর বিতরণ করা হয়।
এর আগে, ড্রাইভিং কোর্সে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় স্বজনপ্রীতি ও ঘুষের অভিযোগ উঠলে সেই নিয়োগ পরীক্ষাও বাতিল করতে বাধ্য হন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহীন আক্তার। বারবার অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ না হওয়ায় ফুঁসে উঠেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
ররিবার প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের মুলফটকে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে মহাসড়ক অবরোধ করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহীনের পদত্যাগ দাবি করে। একপর্যায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহীন আক্তারের রুমে গিয়ে পদত্যাগের দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহীন আক্তার।
পদত্যাগপত্রে তিনি লেখেন, “আমি শাহীন আক্তার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যহতি দিচ্ছি।”
একইসঙ্গে অভিযুক্ত অফিস সহায়ক আমিনুল হিসাব শাখার অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকেও অব্যহতি নিয়ে লিখিত দেন শিক্ষার্থীদের।
মুলত প্রতিষ্ঠানটির দুইজনের হাতে জিম্মী ছিল বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। সেই জিম্মীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বিজয় আনন্দও করেছে তারা।
পদত্যাগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ শাহীন আক্তার বলেন, “শিক্ষার্থীদের বসতে বলেছিলাম। বসে সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা বসবে না। তারা অফিসের অনেক গোপন জিনিসের তথ্য চেয়েছিল, দেইনি বলে শিক্ষার্থীরা ক্ষেপে গিয়ে আন্দোলন করেছে। তাদের চাপের মুখে আমি দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নিয়েছি।”
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা বলেন, “বিগত দিনে নিয়োগে অনিয়ম করেছিল। পরে তা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। নিম্নমানের উপকরণ বিতরণের অভিযোগ পেয়ে অধ্যক্ষকে বললে তিনি সেগুলো ফেরত নিয়ে ভালোমানের উপকরণ বিতরণ করেন। এসব তার দুর্নীতির মধ্যে পড়ে।”
তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে অব্যহতি নিয়েছেন বলে শুনেছি। সব বিষয় নিয়ে মন্ত্রনালয়কে জানানো হবে।”
ঢাকা/নিয়াজ/মেহেদী