ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

১৪ আগস্ট ‘প্রথম স্বাধীনতা দিবস` পালিত

ঢাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫২, ১৪ আগস্ট ২০২৫  
১৪ আগস্ট ‘প্রথম স্বাধীনতা দিবস` পালিত

ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল মুক্তির ৭৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘ফিরে দেখা আজাদি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অন্যদিকে, ১৪ আগস্ট ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা মুক্তি ও প্রথম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

আরো পড়ুন:

ইশতেহার ও সিলসিলার যৌথ আয়োজনে ভাষা ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৪৭ সালের এই দিনে ভারতবর্ষের মুসলমানরা দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র অর্জন করেছিল, যা ছিল ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক শোষণ ও বঞ্ছনা থেকে মুক্তির দিন। কিন্তু আমাদের সেই ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। অথচ আমাদের শেখানো হয়- হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাস শুরু হয়েছে বায়ান্ন থেকে। 

লেখক, বুদ্ধিজীবী ও মনোচিকিৎসক ডা. ফাহমিদ-উর-রহমান বলেন, “আজকের দিনে আমরা শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা পাইনি, মুসলিম জাতিসত্তার স্বীকৃতি পেয়েছিলাম। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পেছনে বাংলার মুসলমানদের অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৭৫৭ সালের পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন শুধু নবাব পরিবারের পতন ছিল না, বরং ইউরোপের কাছে সমগ্র এশিয়ার পরাজয় ছিল।”

তিনি ইতিহাসবিদ মোহর আলীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “৪৭-কে যারা অস্বীকার করে, তারা আসলে বাংলাদেশের জন্মকেও অস্বীকার করে। দ্বিজাতিতত্ত্বকে শুধু জিন্নাহ বা নবাব সলিমুল্লাহর দায় হিসেবে দেখা ভুল। ১৯ শতকের হিন্দু মেলা, শিবাজী উৎসব, অনুশীলন, যুগান্তরের মতো হিন্দুয়ানী সংস্কৃতিগুলোও দ্বিজাতিতত্ত্বের বীজ বপন করেছিল।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. বিলাল হোসাইন বলেন, “ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় শুধু রাজনৈতিক দখলই নেয়নি, বরং হিন্দু জমিদারদের সঙ্গে মিলে একটি ‘দ্বৈত উপনিবেশ’ তৈরি করেছিল। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরসহ নানা দুর্ভিক্ষ ছিল তাদের শোষণনীতির ফল।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম মনজুর বলেন, “কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে ইতিহাসে ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। জিন্নাহ, আল্লামা ইকবালরা ছিলেন মুসলমানদের রাজনৈতিক মুক্তির ধারাবাহিক সংগ্রামের মূল প্রেরণা।

অন্যদিকে, দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

বক্তারা বলেন, ব্রিটিশ দখলদারদের ১৯০ বছরের ঔপনিবেশিকতা মুক্ত হয়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্ম না হলে আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র পেতাম না। বরং হিন্দুস্তানের তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে নির্যাতিত-নিপীড়িত হতাম। তাই আমাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের পাশাপাশি সাতচল্লিশের স্বাধীনতাকেও ধারণ করতে হবে।

আয়না ঘরে নির্যাতিত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বীর প্রতীক বলেন, “বাঙালী মুসলমান ছিল নির্যাতিত কৃষক আর হিন্দুরা ছিল জমিদার। তাদের কারণে আমাদের পূর্ব পুরুষরা জুতা পরতে, মাথায় ছাতা ধরতে পারতেন না। স্কুলে যেতে হত ধূতি পরে। কিন্তু ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রথম স্বাধীনতা পাওয়ায় আমরা হিন্দুদের জমিদারী থেকে মুক্তি পেয়েছি।”

হিন্দুরা বঙ্গভঙ্গ রদের আন্দোলন না করলে এই স্বাধীনতা আরো আগে আসত বলে মন্তব্য করেন সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, “আজ ভারতবর্ষ আমাদেরই শাসন করার কথা ছিল। নবাব সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করার শিক্ষিত জেনারেশন আমরা ৪৭-এর আগেই পেয়ে যেতাম। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা এরা বঙ্গভঙ্গ ও মুসলমানদের বিরোধী ছিল। এদের কারণে বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ায় আমরা ১৯৪৭ সালের আগে স্বাধীনতা পাইনি।”

১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার আগে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে সৈনিক না থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পাকিস্তানী সেনারা না থাকলে পূর্ব বাংলার পরিণতি হায়দারাবাদের মতো হত। কিন্তু তারা আমাদের দেশ পাহারা দিয়েছে। আমাদের সৈনিক বানিয়েছে। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক বাঙালী সেনাদের একবেলা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করায় আমরা সৈনিক হতে পেরেছি। সৈনিক হওয়ার পর ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে বাঙালী সেনারা বীরত্ব দেখিয়েছেন।”

জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীনের সভাপতিত্বে ও সহকারী সদস্য সচিব গালীব ইহসানের সঞ্চালনায় অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়র সাংবাদিক আবুল কালাম মানিক, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, প্যান ইসলামিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল ভূঞা, নাগরিক বিকাশ কেন্দ্রের (নাবিক) সভাপতি ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ও ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম অপু।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার রাশেদ উর রহমান, আপ বাংলাদেশের মুখপাত্র শাহরীন ইরা, এসো দেশ গড়ির সভাপতি মোহাম্মাদ নুরুল হুদা ডিউক, ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুহাজির মুসলিম ও উর্দুবাসী সংখ্যালঘু কাউন্সিল বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ আফজাল ওয়ার্সি, নবাব সলিমুল্লাহ একাডেমির চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার, ডিপিডির সদস্য কামরুল আলাউদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের সভাপতি কালাম ফয়েজী, দৈনিক আমার দেশের রিপোর্টার মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যয়নরত পাকিস্তানি ছাত্র মুহাম্মাদ তাহির প্রমুখ।

এর আগে, সকাল ৯টায় জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত পাকিস্তান আন্দোলনের তিন জাতীয় নেতা শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, খাজা নাজিমউদ্দিন ও হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর মাজার জিয়ারত করেন।

বাদ মাগরিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা অর্জনে অবদান রাখা পাকিস্তান আন্দোলনের নেতাকর্মীদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়