খুবির কেন্দ্রীয় মাঠের বেহাল দশা
খুবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার একমাত্র ভরসা। কিন্তু দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও সংস্কারের অভাবে এ মাঠ এখন প্রায় খেলা অনুপযোগী হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠে পানি উঠে যায়।
উঁচু-নিচু জমি আর ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে ফুটবলসহ কোনো খেলায় খেলতে পারেন না। ফলে বার্ষিক ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বছরের শুরুতে ক্রিকেট, ভলিবল ও অ্যাথলেটিকসের মতো প্রতিযোগিতা ঝুঁকি নিয়েই আয়োজন করা হয়। এ সময় বৃষ্টিপাত কম থাকায় কিছুটা অসুবিধা হলেও খেলা চলতে পারে। কিন্তু ফুটবল টুর্নামেন্ট সাধারণত বর্ষাকালে হওয়ায় মাঠ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ফলে ফুটবলাররা নিয়মিত প্র্যাকটিস করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন নিয়েও থেকে যায় শঙ্কা। গত ১০ বছরে কেন্দ্রীয় মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে মাত্র তিনবার (২০১৫, ২০১৮ ও ২০২২ সালে)।
মাঠ অচল হয়ে পড়ায় ২০২৪ ও ২০২৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল ক্লাব ও প্রশাসনের উদ্যোগে বিকল্প মাঠে আয়োজন করা হয় টুর্নামেন্ট। ওই মাঠটি ৪ নম্বর একাডেমিক ভবনের সামনে বালু দিয়ে ভরাট করা উন্মুক্ত জায়গা।
কিন্তু শিক্ষার্থীদের মতে, মাঠটি আয়তনে ছোট, সাইডলাইনের রান অফ স্পেস নেই, চারপাশের নির্মাণকাজ ও কংক্রিট কাঠামোর কারণে খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। বালিময় জমিতে দৌড়ানো, হঠাৎ দিক পরিবর্তন কিংবা স্লাইড ট্যাকল কার্যত অসম্ভব হয়ে যায়। পড়ে গেলে হাত-পা জখমের ঘটনাও ঘটে। পাশাপাশি দর্শকদের জন্য কোনো বসার ব্যবস্থা না থাকায় ম্যাচ ম্যানেজমেন্টে বাড়তি চাপ তৈরি হয়।
অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা মনে করেন, মাঠ সংস্কার এখন সময়ের দাবি। নিয়মিত ঘাস কাটা, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করা, মাঠ সমতলকরণ, গ্যালারি নির্মাণের পাশাপাশি ইনডোর সুবিধাও তৈরি করা জরুরি।
মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী সাকিবুজ্জামান সাজিদ আক্ষেপ করে বলেন, “আমাদের কেন্দ্রীয় মাঠকে বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। কিন্তু এখন মনে হয় প্রাণহীন হয়ে গেছে। উঁচু নিচু মাঠে নিয়মিত খেলতে গিয়ে বারবার ইনজুরির শিকার হতে হয়। বিকল্প মাঠে খেলতে নামলে প্রতিদিনই নতুন ঝুঁকি নিয়ে নামতে হয়।”
শিক্ষা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী ইমাম হোসেন নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “২০২৩ সালে আমিও ইনজুরির শিকার হয়েছিলাম। ফুটবলে ভালো করতে হলে নিয়মিত প্র্যাকটিস দরকার, কিন্তু আমাদের সেই সুযোগ নেই। বাইরে গিয়ে অনুশীলন করতে গেলে খরচ বেশি হয়, আবার নিরাপত্তার সমস্যাও থাকে। কেন্দ্রীয় মাঠ থাকা সত্ত্বেও খেলতে না পারাটা সত্যিই কষ্টদায়ক।”
অন্যদিকে আইন ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুন্না আকন বলেন, “ভালো মাঠ না থাকায় আমাদের ফুটবল খেলার স্বপ্নই ভেস্তে যাচ্ছে। বিকল্প মাঠে পড়ে গেলে হাত-পা ছুলে যায়, সাইডলাইন না থাকায় খেলোয়াড় ও দর্শক উভয়ের জন্যই ঝুঁকি তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় একটি উপযুক্ত মাঠ না থাকা প্রশাসনের বড় ব্যর্থতা।”
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও ফিজিক্যাল এডুকেশন বিভাগে পরিচালক অধ্যাপক ড. এস. এম. মাহবুবুর রহমান বলেন, “মাঠের সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সময়ে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে বর্তমান উপাচার্যের নেতৃত্বে মাঠ সংস্কারের বৃহৎ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “ড্রেনেজ উন্নয়ন, মাঠ সমতলকরণ এবং চারপাশে গ্যালারি নির্মাণের মাধ্যমে এটিকে স্টেডিয়াম ধাঁচে রূপ দেওয়ার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”
ঢাকা/হাসিব/মেহেদী