ঢাকা     সোমবার   ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

জাবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বন্ধুর ফোন চুরি করে ইয়াবা সেবনের অভিযোগ

জাবি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৯, ১১ অক্টোবর ২০২৫  
জাবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বন্ধুর ফোন চুরি করে ইয়াবা সেবনের অভিযোগ

ফাইল ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বন্ধুর মোবাইল ফোন চুরি করে বিক্রির টাকা দিয়ে ইয়াবা সেবনের অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। পরে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে ছাত্রদলের একজন নেতা তদবির করছেন বলে জানা গেছে।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী হলেন, জাবির নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৫৩ ব্যাচের সামিউল আজীম।

আরো পড়ুন:

গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের ১০০৮ নম্বর কক্ষে ফোন চুরির ঘটনাটি ঘটে। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে অভিযুক্তকে হল অফিসে আনা হলে তাকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা থেকে বাঁচাতে তদবির করেন কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদি হাসান ইমন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাগর গোলজার জানান, বৃহস্পতিবার ঘুম থেকে উঠে তিনি তার ফোন খুঁজে পাননি। পরে হলের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা যায়, পাশের রুমের ছাত্র সামিউল আজীম তার কক্ষে প্রবেশ করে কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে যায়। সে সময় কক্ষে ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না।

ফুটেজ দেখে বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞেস করলে সামিউল মোবাইল চুরির কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, ফোনটি টুঙ্গীতে নিয়ে বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে ইয়াবা সেবন করেছে।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর সন্ধ্যায় যখন অভিযুক্ত সামিউলকে হল অফিসে আনা হয়, তখন সেখানে উপস্থিত হন ওই হলের ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদি হাসান ইমন। তিনি হল ওয়ার্ডেন সহযোগী অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার মন্ডলের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টিকে ‘সিম্পল’ ও নিজেদের মধ্যে সমাধানযোগ্য বলে উল্লেখ করেন।

এর জবাবে ওয়ার্ডেন বলেন, “আমরা অভিযুক্তের বিষয়ে আগেও কিছু ইস্যু পেয়েছি। তোমরা তো সেগুলো জানো। এটাকে কিভাবে সিম্পল বলো?”

সাংবাদিকরা বিষয়টি ভিডিও করতে চাইলে ইমন তার সুর পালটে বলেন, “আমি জানতাম না এখানে মাদকের বিষয় আছে। ভেবেছিলাম শুধু ফোন চুরির ঘটনা।”

এ বিষয়ে ওয়ার্ডেন সহযোগী অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার মন্ডল বলেন, “অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এটাই প্রথম এ ধরণের ঘটনা নয়। এর আগেও তাকে মাদক সংশ্লিষ্টতার কারণে আমরা আটক করেছিলাম। পরবর্তীতে তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিছুদিন পর তার প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, ফর্ম পূরণ করার জন্য তার মা তাকে হলে রেখে গেছে। এ সময়ের মধ্যেই আবার এই ধরনের ঘটনা ঘটলো।”

ছাত্রদল নেতার তদবিরের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা যখন হল অফিসে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছিলাম, তখন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান ইমন সেখানে আসে। সে বলে, ‘স্যার ও তো আমার বিভাগের জুনিয়র। আমার কাছে বলেছে, তাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল, তাই সে ফোনটা নিয়েছে। এটা তো ছোটখাটো একটা ঘটনা।’ তখন ইমনকে আমি বলি, দেখো ইমন, তুমি এটাকে তুচ্ছ ঘটনা বলছো, কিন্তু চুরি হওয়া ফোনটি এখনো উদ্ধার হয়নি। ভুক্তভোগী জানিয়েছে, ফোনে তার অনেক ডকুমেন্টস আছে। তাই ফোনটা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া অভিযুক্তের মাদক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে আমরা আগে থেকেই ওয়াকিবহাল ছিলাম। তাই এটিকে তুচ্ছ ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।”

তদবিরের বিষয়ে জানতে ছাত্রদল নেতা মেহেদি হাসান ইমনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “যেখানে ফোনটি বিক্রি করা হয়েছে, সেখানে প্রতিদিন হাজারখানেক মানুষ ইয়াবা সেবন করতে যায়। সেখান থেকে ফোন উদ্ধার করা কঠিন হতে পারে। আমরা ফোনটির বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেব। অভিযুক্ত মাদকাসক্ত ছেলেটিকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখছেন এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়