ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের থ্রিলার জিতে ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

আবু হোসেন পরাগ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ১০ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের থ্রিলার জিতে ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

আবু হোসেন পরাগ : ‘হোয়াট অ্যা গেম! ফাইনালের সময়! চলো ২০১৫-এর চেয়ে ভালো হোক’- ম্যাচ শেষ হতেই টুইট করেছেন গ্রান্ট এলিয়ট। চার বছর আগে তিনিই তো কতজনকে ‘হোয়াট অ্যা গেম’ লিখতে বাধ্য করেছিলেন!

অকল্যান্ডের ইডেন পার্ক। বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠতে শেষ দুই বলে নিউজিল্যান্ডের দরকার ৫ রান। ডেল স্টেইনের শেষের আগের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে এলিয়ট স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। আগে ছয়বার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ব্যর্থ নিউজিল্যান্ড প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছিল এলিয়টের ৮৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের সুবাদে।

চার বছর আগের ইডেন পার্ক যেন ফিরে এলো ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল দেখল আরেকটি রোমাঞ্চকর লড়াই। ২৪০ রানের লক্ষ্যে ৫ রানে ৩ আর ৯২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ভারত পরিণত হয়েছিল ধ্বংসস্তূপে। নিউজিল্যান্ড দেখছিল টানা দ্বিতীয় ফাইনালের স্বপ্ন। সেই স্বপ্নটা ভেঙে তছনছ করে দিতে যাচ্ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা নামের একজন। এমন সময়েই ত্রাতা হয়ে দেখা দিলেন ট্রেন্ট বোল্ট। ফিরিয়ে দিলেন ভারতকে আশা দেখানো জাদেজাকে।

মহেন্দ্র সিং ধোনি নামের আরেকজন তখনো ছিলেন। ২ ওভারে যখন ভারতের দরকার ৩১ রান, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের ওপর দিয়ে লোকি ফার্গুসনকে আপার কাটে ছক্কায় উড়িয়ে যিনি আশাটা তখনো বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। এক বল পরই অবশ্য সেটি নিভে যায় মার্টিন গাপটিলের দুর্দান্ত এক থ্রোয়ে। প্রথম ম্যাচে ফিফটির পর আট ইনিংসে যার ব্যাট হাসেনি, সেই গাপটিল ধোনিকে রান আউট করে হয়ে গেলেন নিউজিল্যান্ডকে ফাইনালে তোলার অন্যতম কারিগর।

রিজার্ভ ডে-তে গড়ানো প্রথম সেমিফাইনালে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে বুধবার ভারতকে ১৮ রানে হারিয়ে নিউজিল্যান্ড আরো একবার উঠে গেল বিশ্বকাপের ফাইনালে। ২০১১ সালে দেশের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ভারত পরপর দুইবার বিদায় নিল সেমিফাইনাল থেকে।

লক্ষ্য তাড়ায় ভারতের শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। ১, ১ ও ১- টপ অর্ডার তিন ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলির নামের পাশে সমান রান! দুই ওপেনার ম্যাট হেনরির শিকার উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। বোল্টের ইন-সুইঙ্গারে এলবিডব্লিউ অধিনায়ক কোহলি।

টেস্ট মেজাজে শুরু করা দিনেশ কার্তিক রানের খাতা খুলেছিলেন মুখোমুখি ২১তম বলে গিয়ে। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে এক হাতে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে তাকে ফিরিয়েছেন জেসম নিশাম। তখন ২৪ রানেই নেই ৪ উইকেট।
 

 

অবিশ্বাস্য ক্যাচ নেওয়ার পর নিশাম সহজ ক্যাচ ফেলেন ঋষভ পন্তের। তবে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি তরুণ ব্যাটসম্যান। বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনারকে উড়াতে গিয়ে ফেরেন ৩২ রানে। একই বোলারকে একইভাবে উইকেট দিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়াও (৩২)। একশর আগেই ৬ উইকেট হারিয়ে ভারত তখন ভীষণ বিপদে।

এরপরই জাদেজ-ধোনির লড়াই শুরু। ধোনি খেলছিলেন দেখেশুনে। জাদেজা শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক। স্যান্টনার দুর্দান্ত বোলিংয়ে আটকে রেখেছিলেন রান। সেই স্যান্টনারকে জাদেজা দুবার উড়ান গ্যালারিতে। তাতে ভারতের ওপর জেঁকে বসা চাপটা উল্টো চলে যায় নিউজিল্যান্ডের ওপর। জাদেজা ফিফটি তুলে নেন ৩৯ বলে। জুটির রান পেরিয়ে যায় একশ।

শেষ পাঁচ ওভারে ৫২ রানের সমীকরণটা তাই কঠিন মনে হচ্ছিল না তখন। কিন্তু এরপর একটা পর্যায়ে ১২ বলে কোনো বাউন্ডারি না আসায় বেড়ে যায় বল আর রানের ব্যবধান। জাদেজা তখন বড় শট খেলতে গিয়ে ফেরেন উইলিয়ামসনকে ক্যাচ দিয়ে। শেষ হয় তার ৫৯ বলে ৪টি করে চার ও ছক্কায় খেলা ৭৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। ভাঙে ১১৬ রানের জুটি।

ধোনি তবুও আশা হয়ে টিকে ছিলেন। কিন্তু তিনি রান আউট হওয়ার পরই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ভারত। শেষ ওভারে ২৩ রানের সমীকরণটা টেল-এন্ডারদের জন্য হয়ে যায় পাহাড় সমান। ৭২ বলে ৫০ রান করা ধোনি হয়তো খেলে ফেললেন ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটাই!

এর আগে নির্ধারিত দিনে দাপট দেখিয়েছিলেন ভারতীয় বোলাররা। কেন উইলিয়ামসন ও রস টেলরই যা লড়েছেন নিউজিল্যান্ডের হয়ে। নিউজিল্যান্ড ৪৬.১ ওভারে ৫ উইকেটে ২১১ রান তোলার পর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ গড়িয়েছিল রিজার্ভ ডে-তে।

এদিন বাকি ২৩ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড যোগ করতে পারে শুধু ২৮ রান। শেষ দিকে নিউজিল্যান্ড যে ঝড় তুলতে পারেনি, সেটা জাদেজার জন্যই। পরপর দুই বলে তিনি টেলরকে সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট করার পর নেন টম ল্যাথামের দুর্দান্ত ক্যাচ। পরে ব্যাট হাতেও ভারতকে রূপকথার এক জয় প্রায় এনে দিচ্ছিলেন। তবে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের থ্রিলারে শেষ হাসি হাসল নিউজিল্যান্ডই।

এজবাস্টনে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে লড়বে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ১৪ জুলাই লর্ডসে গত বিশ্বকাপের মতো আরেকটি অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ফাইনাল দেখা যাবে নাকি ইংল্যান্ড ১৯৯২ সালের পর আবার শিরোপার মঞ্চে উঠবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েক ঘণ্টা। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৩৯/৮ (টেলর ৭৪, উইলিয়ামসন ৬৭; ভুবনেশ্বর ৩/৪৩, জাদেজা ১/৩৪, বুমরাহ ১/৩৯)।
ভারত : ৪৯.৩ ওভারে ২২১ (জাদেজা ৭৭, ধোনি ৫০; হেনরি ৩/৩৭, স্যান্টনার ২/৩৪, বোল্ট ২/৪২)।
ফল : নিউজিল্যান্ড ১৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : ম্যাট হেনরি।   


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ জুলাই ২০১৯/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়