এফএসআইবিএল-মার্সের উদ্যোগ: এসএমএসে মিলছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস
খুলনার কয়রা উপজেলার শিবসা নদীর কোল ঘেঁষে হড্ডা হাই স্কুল। করোনা মহামারিতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকের জীবনে অনন্য ভূমিকা পালন করছেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মনোজ কুমার মন্ডল। প্রতিদিন উপকূলীয় বৈরী পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করা মানুষদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন প্রতিদিনকার আবহাওয়ার পূর্বাভাস। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময়ও সতর্ক করেছেন এলাকার প্রতিটি মানুষকে।
মনোজ কুমার মন্ডল প্রতিদিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস পান মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে। মনোজ কুমার মন্ডলের মতো দেশের উপকূলীয় ২৫০টি স্কুলের শিক্ষকদের কাছে স্থানীয় আবহাওয়ার পূর্বাভাস পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগটি নিয়েছে বেসরকারি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এফএসআইবিএল)। এর উদ্দেশ্য ছিল—স্থানীয় জনগণ ও শিক্ষার্থীদের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নয়নে সহযোগিতা করা। এ উদ্যোগে স্থানীয় আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছে দেশের একমাত্র বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান মার্স লিমিটেড।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫০টি স্কুলের ৫০০ শিক্ষক প্রতিদিন সকালে নিজ নিজ মোবাইল ফোনে একটি খুদে বার্তা পাচ্ছেন। এই খুদে বার্তা থেকেই নিজ নিজ এলাকায় বৃষ্টি কেমন হবে, তাপমাত্রা কত থাকবে, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা আছে কি না, তা জেনে যান। আবহাওয়ার কারণে কোনো ঝুঁকি তৈরি হলে সে খবরটি ছড়িয়ে দেন নিজ এলাকার মানুষের মধ্যে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস সহজলভ্য করার মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়নের এ উদ্যোগটি শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে।
এ উদ্যোগ মানুষের জীবনে কীভাবে ভূমিকা পালন করছে, সে সম্পর্কে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, ‘পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো সংকট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি মানুষের জীবনে আবহাওয়ার প্রভাব প্রতিদিনই বাড়ছে। তাই, স্থানীয় পর্যায়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার মাধ্যমে আমরা মানুষকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করতে পারি। এ বিবেচনায় আমাদের গৃহীত উদ্যোগের মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত ঊপকূলীয় সাতক্ষীরা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ১৪টি উপজেলার ২৫০টি স্কুলের ৫০০ জন শিক্ষকের কাছে ৫ লাখ ১০ হাজার বার মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে পূর্বাভাস দিয়েছি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যার সুবিধা পেয়েছেন প্রায় ২ লাখ মানুষ।’
মার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, ‘আবহাওয়ার দিক থেকে প্রতিটি উপজেলারই অনেক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। সাধারণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে কোনো একটি উপজেলার মানুষ সঠিক দিকনির্দেশনা নাও পেতে পারেন। ফলে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল হয়। তাই, স্থানীয় মানুষকে সেই স্থানের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করে সঠিক পূর্বাভাস দেওয়ার মাধ্যমে জানমালের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে তাদের অর্থনৈতিক জীবনেও ভূমিকা রাখা সম্ভব হচ্ছে।’
এ উদ্যোগের আওতায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাচ্ছেন সাতক্ষীরার গদাইপুর জেহের আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেমন্ত মন্ডল। শিক্ষার্থীদের জীবনে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ভূমিকা প্রসঙ্গে হেমন্ত মন্ডল বলেন, ‘আবহাওয়ার অনিশ্চয়তার কারণে বা ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কায় অনেক সময় স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যায়। শিক্ষকরাও নানা সঙ্কটে পড়েন। তবে, আমি প্রতিদিনই আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাই বলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে পারছি। ফলে, শিক্ষা কার্যক্রমে বৈরী আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে।’ বিজ্ঞপ্তি
ঢাকা/রফিক
আরো পড়ুন