বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শ
বাজেটের মাধ্যমেই কর সংক্রান্ত যেকোনো বিষয় আসা উচিত

বাংলাদেশ সফররত বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার বলেছেন, “কর সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত বাজেটের মাধ্যমে আইনগতভাবে আশা উচিত।”
একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটির এ প্রতিনিধি বলেছেন, “কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে অবশ্যই কর প্রশাসন থেকে করনীতি পৃথক করার ওপর আমরা পরামর্শ দিয়েছি।”
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সফররত বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার অর্থ উপদেষ্টার ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মিলিত হন। এরপর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেন।
গত মাসে সরকার হঠাৎ করে শতাধিক পণ্যর ওপর ভ্যাটহার বৃদ্ধি করে। পরে বেশ কয়েকটি পণ্যের ওপর থেকে বর্ধিত ভ্যাটহার প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “কর প্রশাসন থেকে করনীতি আমরা আলাদা করব, রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্যও আমরা চেষ্টা করছি।”
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের ঋণের কিস্তি দেওয়ার বিষয়টি কী পিছিয়ে দিয়েছে কি না-এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমি শুনেছি তারা মার্চ মাসে বোর্ড মিটিং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।”
একটি পত্রিকা সংবাদ ছাপিয়ে এই বৈঠক পিছিয়ে জুনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে-এই প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন বলেন, “আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়নি। তবে আমাদের দিক থেকে হলো-এখন কিন্ত লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতি মোটামুটি ভালো, ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টও ভালো। আমরা এখন মরিয়া হয়ে উঠিনি। তাদের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে, টাকা দিলে দেবে, না দিলে-আমরাও কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি, তারাও কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।”
এদিকে, বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা চলমান সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছি। বিশেষ করে কর প্রশাসন ও ক্রয়নীতি উন্নয়নের আরো স্বচ্ছতার কথা বলেছি।একই সঙ্গে সুশাসন, নীতি এবং তথ্য প্রবেশাধিকার এবং পরিসংখ্যান ব্যুরোর উন্নয়নের কথা বলেছি। স্বচ্ছতার ওপর আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি যাতে জনগণ দেখতে পারে সরকার আসলে কী করছে।”
অনেকদিন ধরে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে কর প্রশাসনকে করনীতি থেকে পৃথক করার কথা বলে আসছে-এ বিষয়ে কোনো আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে কীনা-এ প্রশ্নের জবাবে রাইজার বলেন, “অবশ্যই এ বিষয়ে নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা আমাদের জানিয়েছে, ইতিমধ্যে উপদেষ্টা পরিষদ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কর প্রশাসন থেকে করনীতি পৃথক করা হবে। আমরা অবশ্যই তার বাস্তবায়ন করবো। এখন দেখা যাক তারা এ বিষয়ে কী করে।”
এ বিষয়ে কোনো সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে কি না-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা চাই বিষয়টি কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হোক। কিন্তু আমরা এটি বুঝি এজন্য কিছু অভ্যন্তরীণ নিয়ম রয়েছে।”
রাইজার বলেন, “আমার বলেছি, যেকোনো কর সংক্রান্ত বিষয় বাজেটের মাধ্যমে আইনিভাবে আরোপ করা প্রয়োজন।”
দেশের বর্তমান সামষ্ঠিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাইজার প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব দেন, “দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কেমন তা তোমরাই বুঝতে পারছ।এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। তারপরেও অর্থনীতি বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়ন করতে আমরা সহায়তা দিতে চাই।”
বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট রাইজার চার দিনের সফরে গত শনিবার বাংলাদেশে এসেছেন। চার দিনের সফরকালে মার্টিন রাইজার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা এম ফাওজুল কবির খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সফরকালে তার সঙ্গে আরো রয়েছেন বিশ্বব্যাংকের সমৃদ্ধিবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট পাবলো সাভেদ্রা।
ঢাকা/হাসনাত/এসবি