ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

‘তবে আমরা কাদের শিক্ষক বানাচ্ছি?’

বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৮, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১৮:৩৪, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
‘তবে আমরা কাদের শিক্ষক বানাচ্ছি?’

যথাসময়ে উপস্থিত হতে না পারায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি নিপুন বিশ্বাস নামে এক শিক্ষার্থী। ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়—৩১ জানুয়ারি সকাল ১০-১১টার মধ্যে শিক্ষার্থীকে উপস্থিত থাকতে হবে। কিন্তু নীলফামারীর সদর উপজেলা লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের বাসিন্দা নিপুন পৌঁছান ১২টা ৮ মিনিটে। ১ ঘণ্টা ৮ মিনিটের ব্যবধানে ভেঙে যায় নিপুনের সব স্বপ্ন। এ খবর প্রকাশ্যে আসার পর বিষয়টি নিয়ে জোর আলোচনা চলছে।

অন্যদের মতো খবরটি দৃষ্টি কেড়েছে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর। এ নিয়ে ভেরিফায়েড ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। লেখার শুরুতে মূল ঘটনার অবতার করে ফারুকী বলেন—‘যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় টিকেও ভর্তি হতে পারছেন না নিপুন বিশ্বাস। নিপুন দরিদ্র ঘরের সন্তান। তার বাবা নাপিতের কাজ করে বহু কষ্টে সংসার চালান। ফলে নিপুনের কোনো স্মার্ট ফোন নাই। স্মার্ট ফোন এবং নেট কানেকশন না থাকাতে তার পক্ষে বারবার ওয়েবসাইটে ঢুকে জানা সম্ভব হচ্ছিলো না সে টিকেছে নাকি টিকে নাই। নিয়ম ছিলো কর্তৃপক্ষ মেসেজ দিয়ে জানাবে। কিন্তু তার মোবাইলে মেসেজও আসে নাই। যে দিন ভর্তি হওয়ার শেষ তারিখ ছিলো তার আগের দিন সে কারো একজনের কাছে জানতে পারে সে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েছে। তারপরই দ্রুত টাকা জোগাড় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হয়। যেহেতু ওটা ছিলো শেষ দিন, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই মারফত ফোন করে ডিনকে জানায় যে সে পথে আছে। যাই হোক, তার পৌঁছতে পৌঁছতে দেরী হয়ে যায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ভর্তি করতে অপারগতা জানায়।’

বেশ কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘এই পর্যন্ত পড়ে চোখ বন্ধ করে নিপুনকে দেখতে পাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের বাইরে জীর্ন স্যান্ডেল পায়ে নিপুন দাঁড়িয়ে। তার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে। তার গলা আটকে আটকে আসছে। সে বুঝতে পারছে না সে কাকে দোষ দেবে? তার মোবাইল না থাকাকে? মেসেজ না আসাকে? পথে দেরী হওয়াকে? নাকি তার দরিদ্র পিতাকে?’

বিশ্ববিদ্যালয় কবে থেকে এতটা নিষ্ঠুর হয়ে উঠলো—সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ফারুকীর চিন্তায়। তা উল্লেখ করে ‘ডুব’ খ্যাত এই নির্মাতা বলেন, ‘আচ্ছা কবে থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলা এতো নিষ্ঠুর হয়ে উঠলো? কবে থেকে শিক্ষকেরা হয়ে উঠলো এরকম বেরহম? আমি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি নাই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষকের নিবিড় সান্নিধ্য পেয়েছি। আমি তো দেখেছি তারা ছাত্রদের বিপদে আপদে কীভাবে পাশে দাঁড়ান। আইনকে ছাত্রের পথের কাঁটা না করে, আইনের হাত মচকে দিয়ে ছাত্রের জন্য রাস্তা বানান। সেই সব শিক্ষকদের দিন কি তবে শেষ? তবে আমরা কাদের শিক্ষক বানাচ্ছি? কী শিক্ষা দেবেন তাঁরা আমাদের?’

আরো পড়ুন: ১৫ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে এসেও ভর্তি হতে পারেননি নিপুন

বিশ্ববিদ্যালয়েরও হৃদয় থাকতে হয় বলে মনে করেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তা জানিয়ে ‘৪২০’ খ্যাত এই পরিচালক বলেন, ‘যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এখনও সময় শেষ হয়ে যায় নাই প্রমাণ করার যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা হৃদয়ও থাকা লাগে।’

ঢাকা/শান্ত

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়