ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

প্রেক্ষাগৃহের জন্য হাজার কোটি ঋণ, মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৬, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪  
প্রেক্ষাগৃহের জন্য হাজার কোটি ঋণ, মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ

দেশের চলচ্চিত্রের বাজারে মন্দা বাতাস বইছে। দিনদিন কমছে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা। যেসব সিনেমা হল রয়েছে, তার অধিকাংশেরই বেহাল দশা, জরাজীর্ণ। প্রেক্ষাগৃহের দৈন্যদশা কাটাতে নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য সরকারের পরামর্শে সহজ শর্তে মাত্র ৫ শতাংশ সুদে এক হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সিনেমা হল মালিকদের ওই বছরের মার্চের মধ্যে ঋণের জন্য আবেদন করতে বলেছিল। কিন্তু চাহিদা কম থাকায় ওই সময়সীমা আরো দুই দফা বর্ধিত করে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) এই মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

এখন পর্যন্ত ১৮ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে। এই ঋণ মাত্র তিনটি সিনেমা হল মালিকরা নিয়েছেন। সাতটি ব্যাংক চুক্তিবদ্ধ হলেও ২টি ব্যাংকের মাধ্যমে এই ১৮ কোটি টাকার ঋণ দেয়া হয়। রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবার্হী পরিচালক হোসনে আরা শিখা।

তথ্য বলছে, সহজ শর্ত, তুলনামূলক কম সুদ ও দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার পরও এ ঋণে আগ্রহ নেই সিনেমা হল মালিকদের। কিন্তু এই ঋণ গ্রহণে হল মালিকদের অনাগ্রহ কেন?

রাজধানীর অন্যতম পুরোনো সিনেমা হল ‘মধুমিতা’। এই হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, “ভালো সিনেমা কই? হলে চলবে এমন সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে না। সিনেমা না চললে হল দিয়ে কি হবে? ঋণ করে সিনেমা হল বানালে আমছালা দুটোই যাবে। সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে পাশাপাশি নির্দিষ্ট টাইমও দিয়েছে। এর মধ্যে টাকা শোধ করতে হবে। কিন্তু সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে না চললে এই টাকা ফেরত দিবে কীভাবে? টাকা পরিশোধ করতে না পারলে সিনেমা হলই তো সরকার নিয়ে যাবে। তখন আমছালা দুই-ই যাবে। সে কারণেই ঋণ নিচ্ছে না অনেকে।”

রাজধানীর ‘সনি’ সিনেমা হলের কর্ণধার ও চলচ্চিত্র প্রযোজক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “সিনেমা হল নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ঋণ না নেয়ার একমাত্র কারণ সিনেমা ভালো যাচ্ছে না। ঋণ করে সিনেমা হল নির্মাণ করবে কিন্তু সিনেমা না চললে লাভ কি? যে কারণে কেউই ঋণ নিচ্ছে না।”

হল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, “ঋণ নিতে চাচ্ছে না বিষয়টা ঠিক না। ঋণ নিতে চাচ্ছে অনেকে। কিন্তু কিছু নিয়ম-কানুনের জন্য পাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ৫০ জন আবেদন করেছে। আমি মনে করি, নিয়ম-কানুন একটু শিথিল করা হলে ঋণ অনেকে নেবে। হল মালিকদের সুবিধার্থে নিয়ম-কানুন একটু শিথিল করার অনুরোধ করছি। যেমন ধরুন, একজনের বাবার পাঁচ সন্তান থাকলে এখানে হল নির্মাণ করবেন একজন। কিন্তু পাঁচ ভাইয়েরই দলিল দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া পূর্বে যার কাছ থেকে জমি কিনেছেন তারও কাগজ জমা দিতে হচ্ছে। এসব কারণে অনেকেই আগ্রহ হারাচ্ছে এবং অনেকের কাগজ জমা পড়ে আছে।”

তহবিল গঠনের পর ঋণ নেওয়ার জন্য প্রথমে ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে আবেদন করতে বলা হয়। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এরপরও সাড়া না পেয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আরেক দফা সময় বাড়ানো হয়। এ দফায় আবেদনের শেষ সময় আজ।  

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিনেমা হল সংস্কার ও নির্মাণে কম সুদে এক হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ তহবিল থেকে ব্যাংকগুলোকে মাত্র দেড় শতাংশ সুদে অর্থ নিয়ে বিতরণের কথা। হলের অবস্থান মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্যে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৫ শতাংশ। মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদ নিতে পারবে ব্যাংক। নতুন সিনেমা হল স্থাপনে সর্বোচ্চ ১০ কোটি এবং বিদ্যমান হল সংস্কারে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ৮ বছরের জন্য এখান থেকে ঋণ নেওয়া যাবে।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়