ঢাকা     রোববার   ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২২ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

যতটা পাপ কামিয়েছি, তার সবটা মুছে সুন্দরভাবে মরতে চাই: পপি

বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১৩:৪১, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
যতটা পাপ কামিয়েছি, তার সবটা মুছে সুন্দরভাবে মরতে চাই: পপি

সাদিকা পারভীন পপি

দীর্ঘ সময় লাইমলাইটে ছিলেন না ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। আড়ালে গিয়ে বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। কেবল তাই নয়, এক সন্তানের জননী তিনি। কয়েক দিন আগে পপির বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ করেছেন তার মা ও বোন। এরপর থেকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এই নায়িকা।

গতকাল পপি একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। ৩৯ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের এই ভিডিও ক্লিপে মা-বোনের অভিযোগ নিয়ে কথা বলেন। পাশাপাশি রঙিন দুনিয়াকে বিদায় জানানোর যেমন ইঙ্গিত দেন, তেমনি ধর্মীয় রীতি মেনে সুস্থ ও সুন্দরভাবে জীবন কাটানোর স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।

আরো পড়ুন:

ভিডিও বার্তার শুরুতে ‘কুলি’খ্যাত এই নায়িকা বলেন, “আমি পপি, দীর্ঘ ২৮ বছর সুনামের সঙ্গে চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু এই মুহূর্তে ক্যামেরার সামনে কথা বলছি একজন ব্যর্থ মানুষ হিসেবে। ব্যর্থ মানুষ বলছি এই কারণে যে, সবার মন জয় করতে পারলেও দীর্ঘ ২৮ বছর যাদের জন্য কাজ করেছি, এই হাতে যাদের লালন-পালন করেছি তাদের কাছে আমি অযোগ্য একজন মানুষ। তাদের মনমতো চলতে পারিনি। সে জন্যই বলেছি, আমি একজন ব্যর্থ মানুষ। মানুষ তো সব সময় সবার কাছে ভালো হতে পারে না। আমি যখন ইনকাম করেছি, দুহাতে দিতে পেরেছি তখন আমার পরিবারের কাছে অনেক প্রিয় একজন মানুষ ছিলাম। এখন তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দিতে পারি না। তাই তাদের কাছে গলার কাঁটা, শত্রু এবং অপছন্দের মানুষ।”

পরিবারের মিথ্যা অভিযোগে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন পপি। এ অভিনেত্রী বলেন, “কয়েক দিন যাবৎ দেখলাম আমার পরিবার কতটা নিচে নামতে পারে। কত হিংস্র ব্যবহার করতে পারে। কত নোংরা শব্দ ব্যবহার করতে পারে। মিডিয়ার কাছ থেকে সবসময় আমি সহযোগিতা পেয়েছি। পরিবারের কয়েকটা মানুষের মিথ্যা কিছু কথাবার্তা, মিথ্যা অভিনয়, নাটক, মিথ্যা অভিযোগ বলার সাথে সাথে যে মানুষগুলো আমাকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করার কথা তারাই মানুষের কথা অনুযায়ী, আমাকে ভুলভাবে, বাজেভাবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে উপস্থাপন করেছেন। এর থেকে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না। যাদের জন্য কাজ করেছি আজ তারা আমার না। এ জন্যই আল্লাহ বলেন, কেয়ামতের মাঠে কেউ কাউকে চিনবে না।”

পপি তার মা-বোনের অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “আমার মা-বোন যে অভিযোগ করছে, শক্তভাবে সেসবের প্রতিবাদ করছি। এর পুরোটাই বানোয়াট। তাদের স্বার্থ উদ্ধার হয়নি বলে সত্য একটা জিনিসকে অসত্য বলে প্রমাণিত করার চেষ্টা করছে। আমি একজন শিল্পী। আমি কি ভূমিদস্যু? যাদেরকে এই দুই হাতে ছোটবেলা থেকে লালন-পালন করেছি, জীবনের যে সময়টা উপভোগ করার সেই সময়টা তাদের জন্য ব্যয় করেছি। এটা আমার দায়িত্ব না। তারপরও ভাই-বোনকে নিজের সন্তান হিসেবে লালন-পালন করেছি। নিজের ভবিষ্যৎ, ভালো লাগা, মন্দ লাগা অনেক কিছুই বাদ দিয়েছি। শুধু আমার ভাই-বোনকে মানুষ করার জন্য। কিন্তু এখন এসে দেখলাম মানুষ হয়নি। হিংস্র পশুরও কৃতজ্ঞতা থাকে, এদের মধ্যে সেই কৃতজ্ঞতাও নেই।”

মা-বোন অভিযোগ করলেও তাদের প্রতি পপির কোনো অভিযোগ নেই। এ অভিনেত্রীর ভাষায়, “কাদের নামে অভিযোগ করব? অভিযোগ করে বাইরের মানুষের নামে। যেহেতু আমার ভাই-বোন, বাবা-মাকে অনেক ভালোবাসি, তাই তাদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। তাদের দ্বারা আমার জীবনে অনেক কিছু ফেস করেছি। নির্যাতিত, লাঞ্ছিত, অপমানিত হয়েছি। আমি যে আয় করেছি, তারা সব নিয়ে নিয়েছে। আমার সাথে বেঈমানি করেছে। আমার টাকা দিয়ে কেনা সম্পত্তি আমার নামে ছিল না। আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শূন্য ছিল। আমার দেহটা ছাড়া কোনো কিছুই আমার ছিল না। সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আমিও তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিলাম।

পরিবারের সদস্যরা পপিকে শারীরিকভাবে নির্যাতনও করেছেন। এ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একটা পর্যায়ে এসে মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য অবলম্বন লাগে। একটা সময় যখন জানতে পারলাম আমার পরিবার আমাকে ঠকিয়েছে, তারপরও চুপ ছিলাম। তাদের দ্বারা অনেক নির্যাতিত হয়েছি। আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে। আমার টাকা চুরি করেছে। আমাকে খুন করতে খুনি ভাড়া করেছে। আমার আপন মা, ভাই ও বোন জড়িত ছিল।”

বাবা-মায়ের ভালোবাসা যেমন পাননি, তেমনি পপির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তারা। এ দাবি করে পপি বলেন, “পৃথিবীতে সব মা-ই মা না। খারাপ মা-ও আছে। দুর্ভাগ্যবশত আমার মা হয়তো আমাকে সেই পরিমাণ ভালোবাসতে পারেনি। আমার পরিবারের কাছে সব সময় সোনার ডিম পাড়া একটা হাঁস ছিলাম। দুধ দেওয়া একটি গরু ছিলাম। টাকা ছাপানোর মেশিন ছিলাম। সন্তান হিসেবে কখনো ভালোবাসাটা পাইনি। তারপরও এখন কোনো অভিযোগ নেই। একটা মানুষ যখন মেশিন নিয়ে পরিণত হয় তখন তার মূল্য মেশিন হিসেবে থাকে। মানুষ হিসেবে থাকে না। আমার বাবা-মা আমার সাথে অনেক বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমার সব টাকা-পয়সা বোনের অ্যাকাউন্টে ছিল। তারপরও কিছু বলিনি। ২০০৭ সালের ঘটনা বলছি। তখন জানতে পারলাম কোনো কিছুই আমার নেই। তখন সিনেমার মুরব্বি মিলে সব কিছু ঠিকঠাক করে দিয়েছিলেন।”

মায়ের কিছু ভিডিও ক্লিপ সবাইকে দেখানোর কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন পপি। তার ভাষায়, “আপনাদের কিছু ভিডিও ক্লিপ দেব, সেগুলো দেখে বিচার করবেন এটা কি কোনো মা? এটা কি কোনো বোন? আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই, আমি কাদের জন্য করেছি, কেন করেছি? এসব প্রশ্ন নিজেকে নিজে করতে করতে এখন আর কোনো হিসাব মেলাতে পারি না।”

কাঁদতে কাঁদতে পপি বলেন, “আমি সব কিছু থেকে দূরে চলে গেছি। মানুষ কত দিনই বাঁচে! যে কয়দিন বাঁচি, সুন্দরভাবে বাঁচতে চাই। একটু ভালো থাকতে চাই। একটু ভালো খেতে চাই, আল্লাহ-খোদার নাম নিতে চাই। পরিবারের কারণে কাজ করতে গিয়ে মানুষের যতটা গালি খেয়েছি, যতটা পাপ কামিয়েছি— সবকিছু মুছে সুন্দরভাবে মরতে চাই। এটা যদি আমার জন্য অপরাধ হয়ে থাকে, তবে আমি অপরাধী।”

১৯৯৭ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন পপি। কিন্তু তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘কুলি’। এই চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেন ওমর সানী। সিনেমাটি সেই সময়ে ৭ কোটি টাকা আয়ের মাইলফলক অর্জন করে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি পপিকে।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়