ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আম ব্যবসায় সাফল্য: বড় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বাশারের

শাহরিয়ার নাসের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২২ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
আম ব্যবসায় সাফল্য: বড় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বাশারের

নাটোরের বাগাতিপাড়ার বিলগোপালহাটি গ্রামের বাবুলাল ও বিনা বেগম দম্পতির বড় ছেলে আবুল বাশার। তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। করোনাভাইরাস দুর্যোগে টিউশন হারিয়ে অনেকটাই বিপাকে পড়েছিলেন বাশার। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও খুব ভালো নয়।

এই দুর্যোগকালে পরিবারের হাল ধরতেই বাশার শুরু করেন অনলাইনভিত্তিক আমের ব্যবসা। ফেসবুকে খুলেছেন ‘আম বাজার’ নামে গ্রুপ ও পেজ। সফলও হয়েছেন তিনি।

আবুল বাশার বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। আমার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিজ এলাকায় চলে আসি। টিউশনও বন্ধ। পরিবারের অবস্থাও ভালো যাচ্ছিল না। বেকার বসে ছিলাম। ভাবলাম কিছু একটা করা দরকার। হঠাৎ একদিন আম বিজনেসের আইডিয়া মাথায় এলো। জানতে পারলাম আমার এক মামা তার ৫টি আম বাগান বিক্রি করবেন। ভাবলাম একটা ঝুঁকি নিয়েই দেখি। যেই ভাবনা সেই কাজ। কষ্ট হলেও কিনে নিলাম তার আমের বাগান।

অনলাইনভিত্তিক বিজনেস

বাশারের ব্যবসা সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক। গ্রাহকরা অনলাইনে অর্ডার করেন। এক্ষেত্রে ফেসবুকেই প্রচারণা চালান বাশার। তিনি বলেন, ফেসবুকে আমাদের নিজস্ব পেইজ এবং গ্রুপ রয়েছে। আমার ব্যবসার মূল জায়গা হলো নোয়াখালী, কুমিল্লা আর ঢাকা। এছাড়াও সারাদেশের প্রায় ৩০টি জেলায় আম সাপ্লাই দিয়েছি। তবে, সর্বাধিক আম গিয়েছে নোয়াখালীর মাইজদিতে। আর কুমিল্লার কান্দিরপাড় এলাকায়। সবচেয়ে বেশি গ্রাহক আসে নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্য থেকে।

ফর্মালিন ও কার্বাইড মুক্ত আম

গ্রাহকদের সম্পূর্ণ ফর্মালিন ও কার্বাইড মুক্ত আম সরবরাহ করেন বাশার। তিনি বলেন, আমার প্রজেক্টে ৫ ধরনের আম। লক্ষণভোগ, আম্রপালি, হিমসাগর ও হাঁড়িভাঙা। বর্তমানে আশ্বিনা আমও আছে। আমার প্রজেক্টের আম একেবারে ফর্মালিন ও কার্বাইড মুক্ত। বাগান থেকে সংগ্রহ করে ওজন দিয়ে প্যাকিং করা হয়। বিভিন্ন ধরনের প্যাকেট হয়। ১০, ১৫, ২০, ৩০, ৩৫, ৪০ কেজির প্যাকেট।

আম বাগানে অনেক পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। এসব আমি নিজেই করেছি। বিশেষ করে আম্রপালিতে একটু বৃষ্টি হলেই পোকায় ছিদ্র করে। এই ছিদ্রকারী পোকা থেকে আম রক্ষা করতে হলে সপ্তাহে দুইবার কীটনাশক দিতে হয়। আমি নিজেই এসব দিতাম। প্রতিদিন দুইবেলা আম মনিটরিং করতে হয়। আম ফেটে যায় ও কাঠবিড়ালি আম নষ্ট করে। সেগুলা গাছে থেকে নামাতে হয়, যেনো পোকার বিস্তার না ঘটে।

আম বাগান একাই পাহারা দিয়েছি দিন-রাত। আমাদের এদিকে রাতের বেলায় আম চুরি হয়। আমি এক বাগানে আর আব্বু আরেক বাগানে। এছাড়াও আরেকজন লোক রেখেছি আরেক বাগানে রাতে পাহারা দিতে। এই মৌসুমে প্রচণ্ড চাপ ও লোকবল না থাকায় অনেককেই অর্ডারমতো হোম ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রতি চালানে ২০০-৩০০ কেজি আম ডেলিভারি দেওয়া হয়। আম এখন শেষের দিকে। মোটামুটি শেষই বলা যায়। শুধু আশ্বিনা আমটা আছে। এটাও শেষ হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। আমার কোনো গুদাম ঘর নেই। সব নিজে বাগান থেকে বাড়িতে এনে প্যাকেট করে পাঠিয়েছি, আবার কোনো কোনো দিন বাগান থেকেই প্যাকেট করে পাঠিয়েছি। যেহেতু প্রথমবার তাই অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ নিজ হাতেই এসব করেছি। অতিরিক্ত শ্রমিক রাখিনি।

পরিবার ও বন্ধুদের সাপোর্ট

আম ব্যবসায় আসার ক্ষেত্রে পরিবার ও সহপাঠীদের উৎসাহ পেয়েছেন বাশার। পরিবার এবং বন্ধুদের সহযোগিতার কথা বলতে গিয়ে বাশার বলেন, আমার পরিবারের সহোযোগিতার কথা বলে বোঝানো যাবে না। বিশেষ করে বাবার অবদানের কথা। বাবা সবসময় সাপোর্ট দিয়েছেন। অনলাইনে আমের বিজনেসে আসাতে আমার বন্ধুদের অবদান সীমাহীন। আমার বন্ধুরা প্রচারণা চালাতে সহায়তা করেছে। আমাকে বাগান কিনতে টাকা দিয়েও সাহায্য করেছে এক বন্ধু। আমার বিভাগের বন্ধু, বড় ভাই ও আপুরা সেই সঙ্গে জুনিয়ররাও অনেক সহযোগিতা করেছে। আমি তাদের প্র্রতি কৃতজ্ঞ।

আম বেপারি বলে ট্রল

পড়াশোনার পাশাপাশি বাশারের এই উদ্যোগ খারাপ চোখে দেখেছেন অনেকে। কিংবা মজা করেছেন তাকে নিয়ে। অনেক ট্রলের শিকারও হয়েছেন বাশার। তবে ট্রলকেও পজিটিভ দৃষ্টিতে দেখেন বাশার।

তিনি বলেন, পড়াশোনারত হঠাৎ ব্যবসা শুরু করায় অনেকেই আমাকে ‘আম বেপারি’ বলে ট্রল করেছে। আমি সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখি। আমি চাই আমাকে ফলো করে আরও ১০ জন না হলেও একজন অন্তত স্বাবলম্বী হোক।

বড় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন

বাশার স্বপ্ন দেখেন বড় উদ্যোক্তা হওয়ার। নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নের কথা জানিয়ে বাশার বলেন, প্রথমবারের মতো আম ব্যবসায় আসা। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো লাভ হয়েছে। অনলাইনে প্রথম হিসেবে ভালো সাড়া পেয়েছি। অনলাইন আর আড়তেও কিছু আম দিয়েছি। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২০-২২ দিনে সম্পূর্ণ খরচ বাদ দিয়েও ২০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়েছে।

স্বপ্ন দেখি বড় উদ্যোক্তা হওয়ার। দোয়া চাই সবার কাছে যেন সততা দিয়ে ভালো একজন উদ্যোক্তা হতে পারি। আমার এই ব্যবসা আগামীতেও চলবে। আমি ভবিষ্যতেও এই ই-কমার্স ব্যবসা চালিয়ে যাব।

তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বাশার বলেন, ব্যবসায়ে উন্নতির একমাত্র চাবিকাঠি হলো সততা। যে যেই খাতেরই উদ্যোক্তা হোন না কেনো আপনাকে সৎ ও পরিশ্রমী হতে হবে। তাহলে সাফল্য পাবেন। উদ্যোক্তা হতে চাইলে রিস্ক নেওয়ার সাহসও থাকতে হবে।

 

নোবিপ্রবি/মাহফুজ/মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়